বিজ্ঞাপন

নকআউট পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার যত দুঃখগাথা

November 17, 2023 | 4:54 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

ক্রিকেট কখনো আনন্দে ভাসায়, কখনো হতাশায় নিমজ্জিত করে। গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশি হয়ত কেউই অনুভব করতে পারবে না। বিশ্বকাপ মানেই যেন তাদের স্বপ্নভাঙ্গার মঞ্চ। বিশেষ করে সেমিফাইনাল এলেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় প্রোটিয়াদের। এবারের বিশ্বকাপেও সেমিতে ‘চোকার্স’ উপাধিটা নিজেদের নামের পাশ থেকে সরাতে পারেননি বাভুমা-মিলাররা। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপ ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গের সেই গল্পগুলো।

বিজ্ঞাপন

১৯৯২ বিশ্বকাপ ও বৃষ্টির সেই নিষ্ঠুর ‘তামাশা’

বৃষ্টির সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘শত্রুতার’ শুরু এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সেবারই আইসিসির বড় টুর্নামেন্টে ফিরেছিল প্রোটিয়ারা। গ্রুপ পর্বে ভালো খেলেই নকআউট পর্বে ওঠেন তারা। সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের সুবাস পাচ্ছিল প্রোটিয়ারা। ১৩ বলে দরকার ছিল ২২ রান। ঠিক তখনই নামে বৃষ্টি।

বৃষ্টি যখন থামল, ক্রিকেট বিশ্ব তখন দেখল অদ্ভুতুড়ে এক স্কোরকার্ড। বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ালো ১ বলে ২২ রান! ক্রিজে নামা দুই প্রোটিয়া ব্যাটার তো বটেই, ইংলিশ ক্রিকেটাররাও আসলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। মাঠে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থকদের মাঝেও ছিল রাজ্যের বিস্ময়। এভাবেই নিজেদের প্রথম সেমিফাইনালে বৃষ্টির কাছে হার মেনেই বাদ পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৯ বিশ্বকাপ ও ডোনাল্ডের সেই অদ্ভুতুড়ে দৌড়

১৯৯৯ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করা দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয়বারের মতো পৌছায় সেমিতে। অজিদের ২১৩ রানে আঁটকে দিয়ে প্রথম ফাইনাল খেলার স্বপ্নে বিভোর ছিল তারা। শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিজাদুতে ম্যাচে ফিরলেও ল্যান্স ক্লুজনারের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় প্রোটিয়ারা। শেষ ওভারে দুই বলে দুই চার মেরে দুই স্কোর সমান করেন ক্লুজনার। জয়ের জন্য দরকার তখন মাত্র এক রান, বল বাকি চারটি।

ওভারের চতুর্থ বলে আসে সেই মুহূর্ত। রান নেওয়ার জন্য ক্লুজনার দৌড় দিলেও অন্য প্রান্তে থাকে অ্যালান ডোনাল্ড বলই দেখে যাচ্ছিলেন। যতক্ষণে তিনি দৌড়ানো শুরু করলেন, ততক্ষণে বল পৌঁছে গেছে উইকেটকিপারের হাতে। ডোনাল্ডকে রান আউট করে উচ্ছ্বাসে ভাসে অজিরা। ম্যাচ টাই হলেও সুপার সিক্সে ভালো রান রেটের কারণে ফাইনালে ওঠে স্টিভ ওয়াহর দল। একরাশ হতাশা ও অবিশ্বাস নিয়ে মাঠ ছাড়েন ক্লুজনার।

বিজ্ঞাপন

২০০৩ বিশ্বকাপ ও দক্ষিণ আফ্রিকার হিসেবের গড়মিল

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরোতে শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না শন পোলকের দলের সামনে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে জয়ের খুব কাছেই চলে গিয়েছিল তারা। খেলা বন্ধ হওয়ার শেষ ওভারের শেষ বলে একটি রান নিলেই বৃষ্টি আইনে জিতে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে সেই হিসেব নিকেশেই গড়মিল করে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা ডাগআউট। ক্রিজে থাকা মার্ক বাউচারের কাছে সেই হিসেবটি পৌছায়নি। সিংগেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তাই রান নেননি বাউচার, নিজের অজান্তেই দলের বিদায় নিশ্চিত করেন তিনি। ড্রেসিংরুমে পোলকের মাথায় হাত দেওয়া সেই ছবি বহুকাল দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থকদের হ্রদয়ে পীড়া দিয়ে যাবে।

২০০৭ ও ম্যাকগ্রা-টেইটের ঝড়ে বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা

বিজ্ঞাপন

২০০৭ বিশ্বকাপে আবারও গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলে সেমিতে পৌছায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অজিদের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গ্লেন ম্যাকগ্রা ও শন টেইটের দাপটে দাঁড়াতেই পারেননি ক্যালিস-স্মিথরা। মাত্র ১৪৯ রানেই থামে তাদের ইনিংস। ৭ উইকেটের বড় জয় নিয়ে টানা তৃতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করে অজিরা। আরো একবার সেমি থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয় প্রোটিয়াদের।

২০১১ ও কোয়ার্টারে জ্যাকব ওরাম জাদু

২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ২২১ রানেই বেধে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটাও ভালো করেছিল তারা। ২ উইকেট হারিয়ে একটা সময় স্কোর ছিল ১০৮। তবে আবারও নকআউট পর্বের ভূত চেপে বসে প্রোটিয়াদের ঘাড়ে। জ্যাকব ওরামের দারুণ বোলিংয়ে ৪৯ রানে হার মানতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

২০১৫ বিশ্বকাপ ও সুপারম্যান এলিয়ট

গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলে ৮ বছর পর আবারও সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৪৩ ওভারে নিউজিল্যান্ডকে ২৯৮ রানের বড় লক্ষ্য বেধে দেয় তারা। একটা সময় কিউই ব্যাটারদের বেশ চেপেও ধরেন ডি ভিলিয়ার্সরা। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্যাচ মিস ও গ্রান্ট এলিয়টের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। শেষ ওভারের এমন হারে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। আবারও সেমিতে এসেই থামে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।

য়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এফএম/এসএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন