বিজ্ঞাপন

ইতিহাসের পাতায় অস্ট্রেলিয়ার সাত বিশ্বকাপ ফাইনাল

November 18, 2023 | 1:15 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি তাদের। টানা দুই ম্যাচে হেরে অনেকটাই খাদের কিনারায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে অজিরা। আহমেদাবাদে আগামীকালের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ভারত। এটি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ৮ম ফাইনাল, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলুন দেখে নেওয়া যাক কেমন ছিল অজিদের আগের সাত ফাইনাল।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ বিশ্বকাপ ও ক্লাইভ লয়েডে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্নভঙ্গ

ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা ভালো না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ২৯১ রানের বড় স্কোর দাড় করায় তারা। লয়েডকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন রোহান। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন গ্যারি গিলমোর।

বিজ্ঞাপন

বিশাল লক্ষ্য তারা করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে কখনোই থিতু হতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কেইথ বয়েস, নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়াও ভিভ রিচার্ডসের করা তিনটি রান আউটসহ মোট পাঁচটি রানআউট অজিদের শিরোপা স্বপ্নকে ভেঙ্গে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৭ রানের জয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

১৯৮৭ বিশ্বকাপ ও অজিদের প্রথমের স্বাদ

ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথমবার আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ফাইনাল। ভারতের ইডেন গার্ডেনসের সেই ফাইনালে মুখোমুখি ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ডেভিড বুনের ৭৫ ও মাইক ভেলেটার ৪৫ রানের সুবাদে ২৫৩ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় অজিরা। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন হেমিংস।

বিজ্ঞাপন

রান তাড়া করতে নেমে শূন্য রানে ওপেনার টিম রবিনসনকে হারালেও গ্রাহাম গুচ- বিল অ্যাথির জুটি ভালোভাবেই জয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিল ইংলিশদের। এরপর অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংয়ের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন ক্রমেই উজ্জ্বল হচ্ছিল ইংলিশদের।

ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় গ্যাটিংয়ের সেই রিভার্স সুইপ। অ্যালান বোর্ডারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন গ্যাটিং। এরপরই ইংলিশদের চেপে ধরে অজিরা। শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ৭ রানের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপার দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া।

১৯৯৬ বিশ্বকাপ ও ডি সিলভার বীরত্বে পরাস্ত অজিরা

বিজ্ঞাপন

উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপেও ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। লাহোরের ফাইনালে এবার তাদের প্রতিপক্ষ চমক দেখিয়ে ফাইনালে ওঠা শ্রীলংকা। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় লংকানরা। অরবিন্দ ডি সিলভার ঘূর্ণিজাদুতে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে অজিরা। স্রোতের বিপরীতে ছিলেন শুধু ওপেনার মার্ক টেইলর, তিনি করেন ৭৪ রান। ডি সিল্ভা নিয়েছেন ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাড়ায় ২৪১ রান।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও সেই ডি সিল্ভাই হাল ধরেন লংকানদের। অজিদের হতাশায় ডুবিয়ে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ১০৭ রানের এই ইনিংসের সুবাদেই চার ওভার বাকি থাকতেই জয় পায় শ্রীলংকা। অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম শিরোপার দেখা পায় শ্রীলংকা, হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার ‘অজেয়’ হওয়ার সূচনা

১৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয় ইংল্যান্ডে। লর্ডসের ফাইনালে একবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল অজিদের। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, এটাই হয়ত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছ। অজি বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি কোন পাকিস্তান ব্যাটার। শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিজাদুতে মাত্র ১৩২ রানেই থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ওয়ার্ন নিয়েছেন ৪টি উইকেট।

সামান্য লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই অজি ওপেনারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। ৩৬ বলে গিলক্রিস্টের ৫৪ রানের ইনিংসের সুবাদে মাত্র ২০ ওভারের মাঝেই পাকিস্তানের দেওয়া লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ৮ উইকেটের বড় জয় নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পায় অজিরা।

২০০৩ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড তৃতীয় শিরোপা

২০০৩ বিশ্বকাপে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। জোহানেসবার্গের সেই ফাইনালে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল দারুণ ফর্মে থাকা ভারত। টসে জিতেছিল ভারত, তবে কিছুটা অবাক করে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক সৌরভ। হয়ত ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়া সিদ্ধান্ত ছিল এটিই। ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি গিলক্রিস্ট-হেইডেন গড়েন শতরানের জুটি। হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া গিলক্রিস্টকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত আনেন হরভজন সিং।

তিনিই ফেরান আরেক ওপেনার হেইডেনকে, পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার আশায় ভারত। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং ও ডেমিয়েন মারটিনের স্মরণীয় ব্যাটিং ভারতকে আর পাত্তাই দেয়নি। ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত এক সেঞ্চুরি তুলে নেন পন্টিং, মারটিনও ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫০ ওভার শেষে অজিদের সংগ্রহ দাড়ায় ৩৫৯ রান।

৩৬০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই শচীনকে হারায় ভারত। ম্যাকগ্রার বলে শচীন ফিরলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন শেহওয়াগ। তবে তাকে যোগ্য সহায়তা দিতে পারেননি কোন ব্যাটারই। মাঝে বৃষ্টি নামায় খেলা পন্ড হওয়ার জোগাড় হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ম্যাকগ্রা, লিদের বোলিং তোপে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় ভারত, ৮৪ রান তুলে একাই লড়ে গেছেন শেহওয়াগ। ভারতকে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।

২০০৭ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা

২০০৩ বিশ্বকাপের মতো এবারও অপরাজিত থেকেই ফাইনালে ওঠে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলংকা। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নেন রিকি পন্টিং। ওপেনার গিলক্রিস্টের অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে ম্যাচ অনেকটাই লংকানদের হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে যায় অজিরা। ১৪৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন অজি কিপার। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩৮ ওভারে ২৮১ রান করে অজিরা।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই সুবিধা করতে পারেননি লংকান ব্যাটাররা। জয়াসুরিয়া ও সাঙ্গাকারা কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। তবে অজিদের বোলিং ও দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের সামনে হার মানতে বাধ্য হয় শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে ৫৩ রানের জয় নিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ে অজিরা।

২০১৫ বিশ্বকাপ ও অজিদের পাঁচ

ঘরের মাঠে সপ্তমবারের মতো ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল প্রথমবার ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কিউইরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। অজি পেসাররা ধসিয়ে দিয়েছেন তাদের টপ ও মিডল অর্ডার। স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই করেছেন গ্র্যান্ট এলিয়ট। তার ৮৩ রানের ইনিংসের সুবাদে ১৮৩ রানের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। জনসন ও ফকনার নেন ৩টি করে উইকেট।

অল্প রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খেলেও সামলে নিয়েছে অজিরা। স্টিভ স্মিথ ও মাইকেল ক্লার্কের দৃঢ়তায় ১৭ ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ক্লার্ক করেন ৭৪, ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেম স্মিথ। এই জয়ে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।

য়ানডে বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলবিডি‘তেও দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপ।

সারাবাংলা/এফএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন