বিজ্ঞাপন

কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি চেয়ে প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি

November 28, 2023 | 8:30 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত ও আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাদের স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে কারাবন্দি স্বজনদেরে পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস এই স্মারকলিপি দেন।

দুই পৃষ্ঠার স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে কারাবন্দি বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বিচার প্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্বাস, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দেশের বিচার বিভাগকে রক্ষা করা, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আপনি (প্রধান বিচারপতি) অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান দমন-পীড়ন, মিথ্যা, গায়েবি হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেফতার, পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতন, ঢালাও সাজা প্রদান, জামিন না দেওয়ার বিষয়ে আপনার উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধ থাকবে, গণগ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী মতালম্বী রাজনৈতিক বন্দিদের আশু মুক্তির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালত সমূহের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির আটক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধনে সমবেত হয়।

সমাবেশের পর স্মারক লিপিটি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে কারাবন্দিদের স্বজনরা হাইকোর্টের দিকে রওনা হলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

‘স্বজনদের কষ্ঠ-বেদনার কথা’

২৮ অক্টোবরের পর গ্রেফতার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী অসুস্থ আফরোজা আব্বাস হুইল চেয়ারে কর্মসূচিতে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ওরা এত নির্মম, এত অত্যাচারি! ছোট ছেলেকে না পেলো বড় ভাইকে ধরে নিয়ে যায়, বড় ছেলেকে না পেলে বাবাকে নিয়ে যায়, বাবাকে না পেলে বোনকে নিয়ে যায়। আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্যে বসবাস করছি। এটা কেমন দেশ? আমার বাসায় হামলা হয়, বাসার লোকজনকে তুলে নিয়ে যায়, মারধর করে। কোন দেশে আমরা বসবাস করছি। আমরা আইনের ন্যুনতম সুবিধাটুকু পাচ্ছি না।’

কারাবন্দি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব, লুতফুজ্জামান বাবর, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বানিজ্য বিষয় সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শরিফুল আলম, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শামীমুর রহমান শামীম, শেখ রবিউল আলম, রফিকুল ইসলাম মজনু, আমিনুল হক, সাইফুল আলম নিরব, মুনায়েম মুন্না, আবুল কালাম আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর, আকরামুল হাসান, আজিজুল রহমান মোসাব্বির, আনিসুর রহমান লাকুসহ জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখের মুক্তি দাবি জানান আফরোজা আব্বাস।

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে কারাবন্দি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম অসুস্থ থাকায় আসতে পারেন নি। তার পাঠানো একটি ছোট চিঠি পড়ে শুনান মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে দুই বছরের সাজা দিয়ে জেলে আটক রাখা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মীকে এভাবে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এটার অবসান আমি চাই।’

কারাবন্দি দুই ছেলের (আবদুর রহিম ভুঁইয়া, আবদুর রহমান ভুঁইয়া) বাবা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি একটি নির্যাতিত পরিবারের অভিভাবক। আমি বিএনপি করি। এটাই আমার অপরাধ। আমার ছেলেরা বিএনপির অঙ্গসংগঠন করে। আমার বড় ছেলকে না পেলে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। আজকে আমরা বিএনপি করি বলে আমার পরিবারের ওপর এই ঝড় নেমে এসেছে। আমার প্রশ্ন বিএনপি করা কি অপরাধ?’

যুব দলের সাবেক নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের জুলুম। যেখান পুলিশ মামলার বাদী, পুলিশ মামলার সাক্ষী দেয়। আমাদেরকে কিছুই বলতে দেয় না। আমাদের উকিলরা যখন কথা বলতে যায় তখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বলেন, এখানে আইনের কথা বলবেন না। তাহলে আমরা কোথায় যাব, কোথায় বিচার পাব?’

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কারাবন্দি হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী শাহানারা মায়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে তাসমিনা তাব্বাসুম রাফি, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, মির্জা আব্বাসের ছোট বোন সাহিদা মির্জা, ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, ছাত্র দলের আমানউল্লাহ আমানের মেয়ে মর্জিয়া আখন্দ, নেসার উদ্দিন রাব্বীর স্ত্রী মীরু, কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনু আখতার, পিরোজপুরের কাজী ওয়াদিদুজ্জামান বাবলুর স্ত্রী তামান্না জাহান প্রমুখ।

‘এই পরিস্থিতির অবসান করতেই হবে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এখানে আপনারা দেখেছেন অনেক মা, অনেক বাবা আজকে কাঁদছেৃ তাদের স্বজনরা আজ কেউ কারাগারে, কেউ গুম হয়ে গেছে, কেউ খুন হয়ে গেছে। কিন্তু এই সরকারের হৃদয়ে তাদের কান্নার শব্দ নাড়া দেয় না। ওরা অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সমানে কারাগারে ঢুকাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমরা অবসান চাই। এই অবস্থার অবসানে আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা রাজপথে নামি, প্রতিবাদ জানাই।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই স্বজনরা আছেন তাদের বুকের কান্না আপনারা শুনেছেন। আপনারা সবাই জানেন, গ্রেফতার করবার জন্য গিয়ে তাকে না পেয়ে যাকে-তাকে গ্রেফতার করছে, ভাইকে গ্রেফতার করছে। একেবারে হৃদয়হীন একটা সরকার। এরা মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়।’

‘যাদের আত্বীয় স্বজনরা জেলে আছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বক্তব্য, আপনারা আজকে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন। প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন কিনা জানিনা, কিন্তু কাগজটা যদি পৌঁছে উনি (প্রধান বিচারপতি) যদি পড়ে দেখেনৃ উনার কিছু করবার আছে বলে মনে হয় না। বিচার ব্যবস্থা এখন একদম সরকারের হাতে মুঠোয়। পুলিশগুলো চলে সরকারের নির্দেশে, তার বাইরে নয়। অতএব লড়াই করতে হবে সরকারে বিরুদ্ধে রাজপথে। আমি মনে করি, হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের হাজার হাজার স্বজনরা রাজপথে আসতে পারেন। আজকে যারা আয়োজক তাদেরকে অনুরোধ করব সেই পথে যান’— বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই.. বিরোধী দল করা কি অন্যায়?সরকার কি বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন? নিশ্চয়ই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। তাহলে কেন এই জুলুম নির্যাতন? যেভাবে সরকারে জুলুম নির্যাতন, গণগ্রেফতার করছেন তাতে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়ের পরে বাংলাদেশে সেই অবস্থায় তৈরি হয়েছে। জেলখানায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি আমরা পরিষ্কার করে এই নিবেদন আপনার কাছে রাখতে চাই, গত ২৮ অক্টোবর যে সমাবেশগুলো ছিল তার মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশে আমরা মনে করি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কতিপয় এজেন্টদেরকে দিয়ে সেখানে পরিকল্পিত সহিংসতা তৈরি করা হয়েছে। সেই সহিংসতাকে ব্যবহার করে সরকার সমস্ত দোষ বিরোধী দলের ওপরে দিয়ে তারা নির্বিচারে একটা সর্বাত্মক দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’

আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণ চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা. পারভেজ রেজা কানন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন