বিজ্ঞাপন

যশোরের ৬ আসনে নৌকার মুখোমুখি ১৬ স্বতন্ত্রপ্রার্থী

December 2, 2023 | 10:29 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে যশোরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার মুখোমুখি হবেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। জেলার ছয়টি আসনে ১২টি দলের মোট ৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী ছয় জন এবং স্বতন্ত্র ১৬ জন। এসব প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) একজন, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ১০ জন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে দলের হাইকমান্ড স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাতেও আপত্তি নেই, নেওয়া হবে না কোনো ব্যবস্থাও। হাইকমান্ডের এমন নিদের্শনায় ভরসা পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে এসব প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বলে পরিচিতি পাচ্ছেন।

যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন টানা তিন বারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এই আসনে বিভিন্ন দলের আরও চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তবে আফিল উদ্দিনের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে লিটনের। বেনাপোল পৌরসভার সাবেক এই মেয়র দীর্ঘদিন ধরে মাঠ গুছিয়েছেন। ফলে শার্শায় আফিল উদ্দিনের দুর্গে ভাগ বসাতে পারেন তিনি। ইতোমধ্যে উপজেলা ও কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তার অনুসারী হিসাবে রাজনীতি করছেন। শেষ পর্যন্ত যদি লিটন নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে সেখানে নৌকার সঙ্গে লিটনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হতে পারে বলে ধারণা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।

যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান। এই আসনে চার দলের প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম। কারণ, এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যে অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছিলেন মনিরুল। এছাড়া দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ তার সঙ্গে রাজনীতি করেন। আর নৌকা পেলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন মাত্র কয়েক মাস আগে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এর আগে স্থানীয়রা কেউ তাকে চিনতেন না। মূলত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা হিসেবে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

যশোর-৩ (সদর) আসনে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। কেননা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাদের দু’জনের সঙ্গে রয়েছেন। ফলে এখানে কাজী নাবিলের নৌকাকে ঘরের ভেতরের দুটি পাহাড় অতিক্রম করতে হবে।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত রায়। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন রণজিত রায়। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগে একদিকে যেমন দলীয় কোন্দল রয়েছে, অন্যদিকে দলীয় সমর্থন না থাকলে মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন রণজিৎ কুমার রায়।

যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় কোন্দল। এ কারণে দলটির চারজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বড় একটি পক্ষ তার সঙ্গে নেই। প্রতিমন্ত্রীর নৌকা ডোবাতে একজোট হয়েছেন উপজেলা ও তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মের লোকজন একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ। তাই দলীয় অনেকেই সরে গেছেন তার কাছ থেকে। এই আসনে অতীতে সংসদ সদস্য ছিলেন খান টিপু সুলতান। তার অনুসারীরা কেউ স্বপন ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে নেই বলেও অনেকে দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন ও সদ্য জেলা পরিষদের পদত্যাগী সদস্য আজিজুল ইসলাম। এখানে নৌকার বিপক্ষে এইচএম আমির হোসেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। আমির হোসেনের স্বপক্ষের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, শাহীন চাকলাদার কেশবপুরের স্থানীয় নয়, যশোর শহরের মানুষ। তার রাজনীতিও বিকশিত হয় শহরে। তাছাড়া আরও কিছু অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়দের ক্ষোভও রয়েছে তার রিরুদ্ধে।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন