বিজ্ঞাপন

পরিবেশ রক্ষায় নদী দখল মুক্ত করতে হবে

December 3, 2023 | 3:48 pm

তুবা তাবাসসুম তালহা

পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে বিশ্ববাসী। প্রকৃতি ও পরিবেশ বদলে গেছে। পশু-পাখির জন্য অরণ্য নেই। নদীতে ও খালে নেই পানি। তারপরও নদী ও খাল আছে। কিন্তু নদী-খালের এই অস্তিত্ব কতদিন থাকতে পারবে সেটাই বর্তমানে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। একদিকে নদী ও খাল দূষণ, অন্যদিকে নদী খনন কাজে দক্ষতার অভাবে নদ-নদীগুলোর পলি অপসারণ করার পরপরই নদ-নদীগুলো আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বছরের পর বছর নদীতে ও খালে পলি, বালু এবং আবর্জনা পড়ে ডুবোচরের সংখ্যা ও দূষণ বেড়েছে। নদী খনন ও খাল ভরাটের কাজে জবাবদিহি ও পরিকল্পনার অভাবে নদ-নদীগুলোর আজ বেহাল দশা। বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে তখনও আমাদের জানা নেই, আমাদের দেশের অনেক নদী ও খালের অস্তিত্ব মানচিত্রে আছে, অথচ বাস্তবে নেই। একটা সময় এই বাংলায় খাল-বিল, নদী-নালা ভরপুর ছিল। প্রতিটা গ্রামে গ্রামে গোসল করার পুকুর ছিল, মাছের আবাসস্থল খাল ছিল, শাপলা ভরা বিল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই চিত্র যেন গল্পের মতো হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এভাবে খাল-বিল-পুকুর হ্রাস পাওয়া, পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল দুই হাজার। বর্তমানে যার সংখ্যা মাত্র এক শ। ৩৫ বছরে জলাশয় কমেছে ৩৪ দশমিক ৪৫ ভাগ। সুতরাং এটা অনুমেয় যে কী ভয়ংকর হারে কমে যাচ্ছে জলাধারের সংখ্যা। শুধু রাজধানীর এই করুন অবস্থা, তাহলে সারা দেশের জলাধারের কী অবস্থা এবং কী পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে তা কল্পনাতীত। একটা এলাকার তাপমাত্রা যখন বৃ্দ্ধি পায় তখন নদী ও খালের পানি জলীয়বাষ্প হয়ে পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু জলাধার হ্রাস পাওয়ায় পরিবেশ রক্ষা করায় এখন চ্যালেঞ্জের বিষয়।

সরকার ২০০০ সালে জলাধার রক্ষায় আইন করলেও এখন পর্যন্ত সুফল পায়নি।গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে খাল-বিল, পুকুর দিঘির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। অতীতে কয়েকটা বাড়ি পরপরই একটি পুকুর বা খালের দেখা পাওয়া যেতো যেখানে ওই সব বাড়ির মানুষজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় নানা কাজের সমাধা করতেন। পুকুর থাকলে সেখানে গোসল করতেন, খালে গৃহপালিত পশুকে গোসল করাতেন। সবচেয়ে বড় কাজটা হতো সেটা হচ্ছে বৃষ্টির পানি এসব খাল বিল পুকুরে জমা হতো বা নেমে যেত। এতে করে পাড়া বা গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হতো না। বর্তমানে জলাধারের সংখ্যা হ্রাসের কারণে উপরিউক্ত সার্বিক কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়ে উঠছে না।জলাধারের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে কারণ জলাধারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মানুষ এখন নলকূপের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি কমে যায়। জলাধার কমে যাওয়ায় টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত জলাধারের অভাবে পানি সরতে পারে না কোথাও। এ ছাড়া প্রাণিজগতের বাস্তুসংস্থান বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জলাধারের অভাবে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে, সংকটে পড়ছে এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে। খাল-বিল-পুকুরসহ সব ধরনের জলাধার হ্রাসের পেছনে কতগুলো কারণ বিদ্যমান। নতুন নতুন আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে খাল বিল পুকুর ভরাট করতে হচ্ছে। জলাধার হ্রাসের পেছনে দখলদারি আরেকটি উল্লেখযোগ্য হেতু। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে, ব্যবসায়িক স্বার্থে এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের জন্য জলাধার ভরাট করছে। তাঁরা পরিবেশের কথা চিন্তা করেন না। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাঁদের বাঁধা দেওয়ার মতো ক্ষমতা সাধারণ জনগণের নেই।

জলাধার রক্ষায় আমাদের কতগুলো দায়িত্ব রয়েছে। সর্বপ্রথম আমাদের ২০০০ সালে করা জলাধার রক্ষা আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই আইনে বলা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে, অবৈধভাবে, সরকারের বিনা অনুমতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন কোনো জলাধার দখল বা ভরাট করা যাবে না। পাশাপাশি এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের সকলে এক জোট হয়ে পরিবেশ রক্ষার্থে জলাধার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। নগরের বদ্ধ জলাশয়গুলো পরিষ্কার করতে হবে। জলাধারের পরিসর বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলে সকল নাগরিকদের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করতে হবে। খাল, বিল, পুকুর ভরাটের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে জলাধার রক্ষায় সকলের আন্তরিক সচেতনতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।সর্বোপরি, খাল, বিল, পুকুরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাসের প্রবাহ আমাদের থামাতে হবে। রাষ্ট্র, সরকার, জনগণ এবং পরিবেশকর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারবে আমাদের এই বাংলার ভরপুর জলাধারের ঐতিহ্য রক্ষা করতে, অন্যথায় আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ কঠিন অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হবে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন