বিজ্ঞাপন

কান্নাচোখে ফিরে আসা মেয়েগুলো

May 20, 2018 | 12:30 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৬ জন নারী দেশে ফিরে এসেছেন। শনিবার (১৯ মে) রাত ৯টায় এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তারা দেশে আসেন বলে জানিয়েছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ৬৬ জনের মধ্যে ১২ এসেছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের আবেদনের প্রেক্ষিতে। বাকি ৫৪ জন নারীও আজই ফিরেছেন।

নাসিমা খাতুন, টাঙ্গাইলের আয়েশা, বরিশালের সুমনা, হবিগঞ্জের মোর্শেদা, ফাতেমা স্বপ্নার চোখে-মুখে দীর্ঘ দিনের নির্যাতনের ছাপ। বিমানবন্দরের কার্নিভ্যালে এসেই নিজ দেশের মানুষ দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অথচ এরা কেউ তাদের চেনা নয়, নয় আপনজন।

বিজ্ঞাপন

তাদের কাছে নেই মোবাইল ফোন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কারও কারও কাছে নেই বাড়ি ফেরার ভাড়াও। কেউ এসেছেন একটি মাত্র ব্যাগ হাতে। তারপরও যেন শান্তি বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা।

মরিয়ম বেগমের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। এক বছর আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সারাবাংলাকে তিনি জানান, এই এক বছরে তিনি চারটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। প্রতিটি বাসায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে।

মরিয়ম বলেন, আমরা বেঁচে এসেছি। দুই বিঘার মতো জমির ওপর বাড়ি। ১০টা ঘর বাইরেও একই রকম জায়গা। প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হতো। সেখানে মক্তবে থাকার ব্যবস্থা ছিল। কথায় কথায় গলা টিপে ধরতো। নারীরা হাত দিয়ে মারত, পুরুষরা লাঠি দিয়ে। এমনভাবে মারত যেন কাউকে দেখাতে না পারি। কোনো বাবা-মা যেন তার মেয়েকে সৌদি আরবে না পাঠান। হাজার হাজার মক্তবে শত শত বাংলাদেশি মেয়ে আছে। ওদের তালাবদ্ধ করে রাখে।

বিজ্ঞাপন

‘বিদেশ যাওয়ার সময় দালাল বলেছিল, একটা বাসা তিনটা মানুষ, বাচ্চার দেখা-শোনা করতে হবে। আমাকে একটি কোম্পানির মাধ্যমে তারা বিক্রি করে দিয়েছিল। কোম্পানির লোকজন জানায়, আমাকে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১৫ দিন বন্দি ছিলাম।’

একই অভিজ্ঞতা নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা প্রত্যেকের। তারা বলেন, আমাদের অনুরোধ- সরকার যেন সৌদিতে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

ভেজা চোখে নির্যাতনের বর্ণনা দেন মোর্শেদা। ২০ মাস আগে সৌদিতে গিয়েছিলেন তিনি। বলেন, ‘পান থেকে চুন খসলেই খাবার বন্ধ করে দিত। রাতে ঘর থেকে বের করে দিত। সবাই বলে সৌদি ভালো- কেউ যাক, তারপর ফিরে এসে বলুক।’

একই অভিজ্ঞতা হয়েছে দুই মাসে নাসিমা বেগমের। বলেন, ‘সারাদিন কাজ করতে হতো। রাতে অর্ধেক রুটি, চিনি ছাড়া চা আর দুইটা খেজুর খেতে দিত। পরদিন আবার দুপুরে সেই অর্ধেক রুটি আর চা। আর কথায় কথায় খাবার বন্ধ।’

স্বপ্না বলেন, ‘আমাদের বলতো মিসকিন। আরবে দালালদের যে অফিস আছে, সেখানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয় মেয়েদের। আমরা কোনো রকমে বেঁচে ফিলেছি।’

সারাবাংলা/এটি/

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন