বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাস কবে স্বাভাবিক হবে

December 11, 2023 | 4:03 pm

মিনহাজ বিন মাহবুব

বিভিন্ন দূষণের কারণে ঢাকার বাতাস এমনিতেই সারা বছর দূষিত থাকে। বছরের এই সময়ে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বাতাস হয়ে উঠে বিষাক্ত। চলতি বছরে ঢাকার বাতাসে বিশুদ্ধতার পরিমাণ চরম হ্রাস পেয়েছে। ঢাকার প্রায় ২ কোটি নাগরিকের মনে একটাই প্রশ্ন, ঠিক কবে নাগাদ ঢাকার বাতাসে প্রাণ ফিরবে? কবে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিবে?

বিজ্ঞাপন

দিন যায় দিন আসে, বছর যায় বছর আসে তবু ঢাকার বাতাসের কোন পরিবর্তন হয়না বরং দিন দিন ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে। সরকার নানা মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলো, মেট্রোরেল হলো, পদ্মাসেতু হলো, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ সহ নানা উন্নয়ন দৃশ্যমান হলো। প্রশ্ন থেকে যায় এত উন্নয়ন কার জন্য? যদি নাগরিকের বসবাস উপযোগী না হয় এ শহর। কি হবে এত উন্নয়ন দিয়ে? যদি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়া না যায়। এসব উন্নয়নে চাপা পড়ে কত প্রাণ নিরবে শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই দ্বায় কার?

ঢাকায় মূলত উন্নয়নের নামে নাগরিক ভোগান্তি সব সময় চলমান থাকে। টেলিফোনে লাইন, গ্যাস লাইন, পানির লাইন সহ নানা উন্নয়নের কাজে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারনে শুষ্ক মৌসুমে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয় ধুলাবালির নগরে। টিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে সমন্বয়ে ছিটেফোঁটা ও লক্ষ্য করা যায়না। ধরেন, টেলিফোন সংযোগের জন্য গর্ত করা হলো সড়কগুলো, এরপর কাজ শেষে কিছু দিন পর আবার সড়কের মেরামত হলো কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা যায় অন্য কোন প্রতিষ্টান এসে শুরু করে খোঁড়াখুঁড়ি। শুষ্ক মৌসম আসলে ত আর কথা নাই, অপরিকল্পিত এসব উন্নয়নের নামে নাগরিকের ভোগান্তির শেষ থাকেনা।

সমীক্ষার তথ্য বলছে, ঢাকায় বায়ু দূষণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ দূষণ হয় অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা কাটা ও নির্মাণ কাজের কারণে ৩০ শতাংশ এবং ইটভাটা ও কলকারখানার ধোঁয়ায় ২৯ শতাংশ। যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে ১৫ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়েছে। এছাড়াও আন্তঃদেশীয় কারণে দূষিত হয় ৬.৫শতাংশ। গৃহস্থালি বা রান্নার চুলার কাজের থেকে ৮.৫ শতাংশ এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটে। শঙ্কার কারণ হলো এসব বন্ধ করার মত কোন পরিকল্পনা নেই। অথচ দিন দিন ঢাকায় একিউআই মানের চরম অবনতি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে গত শুক্রবারে সকাল ১১টায় ঢাকার অবস্থান ছিলো দ্বিতীয় এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই স্কোর ছিলো ২২৭। বাতাসের এমন মানকে খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসবে বিবেচনা হয়। বিশ্বের ১০০টি দেশের মধ্যে শনিবার সকাল ৯টার দিকে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) এ সময় ঢাকার স্কোর ছিল ২০৮। বাতাসের এ মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সকাল ৯ টায় ঢাকার স্কোর ৩২১ এবং এমন অবস্থাকে ‘ঝুকিপূর্ণ’ হিসবে ধরা হয় ।

তথ্য মতে, আইকিউএয়ারের বাতাসের মান সূচকে স্কোর ৫০ হলে ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। আর একিউআই স্কোর যদি ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকে তাহলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকে তাহলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে ধরা হয। বায়ুদূষণের মাধ্যেমে মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই বিপজ্জনক ।

স্ট্যাট অফ এয়ার পপুলেশনের একটি গবেষনায় উঠে এসেছে দেশে ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের কারণে ১লক্ষ ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর শুধু মাত্র ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। এমন পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই শুভ লক্ষণ নয়। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান লরেন্স বের্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তথ্য মতে, রাসায়নিক মিশ্রণ আছে এমন দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক ও গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ু দূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞের মতে, দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভারের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এমন অবস্থায় চলতে থাকলে একদিন ঢাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে তা অনুমেয়। এ অবস্থা চলমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস কাঁধে নিয়ে বসবাস করতে হবে। ঢাকার নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নয় দফা নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর হতে হবে। এছাড়া নাগরিকদের সচেতনতাও প্রয়োজন বায়ুদূষণ রোধে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলো বাস্তবায়ন ও বাস্তবমুখী নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী; হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন