বিজ্ঞাপন

আস্থায় শেখ হাসিনা : নেতৃত্ব পেতে অপেক্ষার ধাঁধায় প্রত্যাশীরা

May 20, 2018 | 5:45 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সম্মেলনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব কবে নাগাদ ঘোষণা করা হবে তা নিয়ে গোলকধাঁধায় রয়েছে পদপ্রত্যাশীরা। এদিকে সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে পূর্ণ আস্থা থাকলেও সময়ক্ষেপণে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত সময় পার করছে শীর্ষ পদের প্রত্যাশীরা।

গত ১১ ও ১২ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি পদে ১১১ ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যে ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত মেনে নিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।

এদিকে ১৭মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন খবরে পদপ্রত্যাশী নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এ সাংগঠনিক নেত্রীর শেখ হাসিনার সামনে কথা বলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও গ্রহণ শুরু করে। কিন্তু প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই বিষয়ে গোলকধাঁধায় রয়েছে পদপ্রত্যাশীরা। সাক্ষাৎকারের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও জানতে চাচ্ছেন তারা। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ‘আমরা কিছু জানি না’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি মেহেদী হাসান রনি সারাবাংলাকে বলেন, গণমাধ্যম মারফত এমন খবর শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি। রনির মতো আরও কয়েকজন পদ প্রত্যাশীরাও জানান একই কথা।

দলীয় সূত্র আরও জানায়, বিগত কমিটিতে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এবার নতুন মডেলে সংগঠনকে গড়ে তুলতে চান আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে সংগঠনের ভিতরে অনুপ্রবেশ ও সিন্ডিকেট নামক বিশেষ একটি গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত করার দাবি ওঠেন। তাই এবার শুধু সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নয়, সম্পাদকীয় অন্যান্য পদেও ব্যাপক যাছাই-বাছাই করে নেতা নির্বাচিত করা হবে। তাই এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলাদা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী আগ্রহীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক দায়িত্বশীল এই সকল সিভি সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়াও বিগত সময়ের মতো এবার ছাত্রলীগের ঢাউস কমিটি হবে না। এবার কেন্দ্রীয় কমিটির আকার কমিয়ে আনার বিষয়েও চিন্তাভাবনা আছে হাইকমান্ডের।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি কবে হবে? কি হবে, এটা নেত্রীর বিষয়। তিনি সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী। এবার বিভিন্ন কারণে তিনি নতুন নেতৃত্বের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আমাদের অনেকের মতামত শুনেছেন। ওনি যখনই চাইবেন তখনই সংশ্লিষ্টদের ডেকে কমিটি উপহার দেবেন।’

বিজ্ঞাপন

এ দিকে ১৬ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়ে দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘ছাত্রলীগের কমিটি কবে নাগাদ হবে’ এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে এড়িয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়াও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পূর্ব থেকেই অনুপ্রবেশকারী ও সংগঠনকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনায় সরব হয়ে ওঠে সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা। সম্মেলনের পর থেকে এ কয়েকদিনে নতুন কমিটির নেতা হিসেবে কয়েকজনের নামও আলোচনায় উঠে আসে। এতে আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

আর সবশেষ ১৪মে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব উপহার পেতে আরও দুই চার দিন দেরি হতে পারে, বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। এদিন বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহিলা পরিষদের নেতাদের সাথে এক মতবিনিময় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। কাদের বলেন, বারবার কেনো একটা কথা বলেন। এটা এখন নেত্রীর কাছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে আপনারাই বলেন অনুপ্রবেশকারী। তারপর আবার অনুপ্রবেশকারী আছে কি না? আমরা একটু খতিয়ে দেখছি, নেত্রী খতিয়ে দেখছেন। যাতে আমরা যোগ্য ও নিষ্কলুস একটা নেতৃত্ব উপহার দিতে পারি। দরকার হলে দুই চার দিন দেরি হবে, অসুবিধাটা কি? অনেক প্রার্থী, যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না-এটা আমরা ঠিক করবো।

তার আগে শনিবার (১২ মে) বিকেলে রাজধানীর আইইবিতে কাউন্সিল অধিবেশনের দ্বিতীয় সেশনে গণভবন থেকে ফিরে নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে উপহার দেবেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমাদের একমাত্র অভিভাবক আস্থার ঠিকানা, তার উপর আমাদের সবার শতভাগ আস্থা বিশ্বাস রয়েছে।’ ‘নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে ছাত্রলীগ। দুএকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে নতুন কমিটি উপহার দেবেন। আমরা তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। সেই সিদ্ধান্ত আমরা আপনাদের জানিয়ে দেবো। হয়তো বা দুএকদিন দেরি হতে পারে।’ ওইদিন অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যেও একই সিদ্ধান্তের কথা জানান সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

১১ মে বিকেলে রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন সম্মেলনে সবাই সমবেত হয়েছেন। আগামীকাল বসবে সাবজেক্ট কমিটি। যারা নেতৃত্বে আসতে চাও, মনে রেখো, স্যাক্রিফাইস করাটা শিখতে হবে। যেকোনোভাবে স্যাক্রিফাইস না করলে কিন্তু অর্জন করা যায় না। অর্জন তখনই করতে পারবে, যখন কিছু দিতে পারবে। কাজেই আমরা চাই, তোমরা সমঝোতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করো।’ আর আসন্ন কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে বয়স ২৮ বছর পর্যন্ত শিথিল করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়স আমরা ২৭ বছর করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই কমিটি দুই বছরের হলেও তারা ৯ মাস বেশি থেকেছে। আমি চাই না, এই ৯ মাস বেশি হয়েছে বলে কেউ বঞ্চিত হোক। তাই এটাকে আমরা এক বছর গ্রেস দিতে পারি। কাজেই, ২৮ বছরের মধ্যে যারা আছে, তারাই কমিটিতে আসবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন