বিজ্ঞাপন

আগামী সংসদে বিরোধী দল বিএনএম-তৃণমূল বিএনপি!

December 21, 2023 | 11:15 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে সমঝোতা হওয়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, সমঝোতা হলেও প্রায় সব আসনেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় ওই ২৬টি আসনেও জাপা প্রার্থীদের জিতে আসার নিশ্চয়তা নেই। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি বরং আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার নৈতিক দাবিদার। দল দুটিও নিজেদের আগামী সংসদের বিরোধী দল হিসেবেই দেখছে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের সমানে রেখে শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি (নিবন্ধন নম্বর ৪৫, প্রতীক সোনালী আঁশ) ১৩৩ আসনে এবং শাহ মো. আবু জাফর ও ড. মো. শাজহাজানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম, নিবন্ধন নম্বর ৪৮, প্রতীক নোঙ্গর) ৬৩ আসনে নির্বাচন করছে। দল দুইটির শীর্ষ নেতার মনে করছেন, ‘ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার’ নির্বাচন হলে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে তারাই হবেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল।

টানা দুই বারের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) সরিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন দখলে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির নেতারা। তাদের এই আত্মবিশ্বাসের নেপথ্যে অন্য কোনো ‘রাজনীতি’ আছে কি না, তা নিয়ে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। কারও কারও মতে, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জনের জিতে আসার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে।

অবশ্য ঘোষণাটা আগেই দিয়ে রেখেছিল বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি। শুরু থেকেই তারা বলে আসছে, সংসদের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনের মাঠে নেমেছে তারা। তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের এ ঘোষণার ওপর কিছুটা হলেও আস্থা রেখেছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ভোটের প্রচার শুরুর পর এখন অনেকেই সেই বিশ্বাস থেকে সরে আসছেন যে বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির পক্ষে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

দল দুইটির শীর্ষ নেতারা অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২৬টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ছয়টি মিলিয়ে মাত্র ৩২টি আসনে সমঝোতা হয়েছে আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির পক্ষে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলে তাদের পক্ষেও ৩০ থেকে ৪০টি আসনে জিতে আসা সম্ভব। তার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না করায় নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার প্রশ্নে তারাই যৌক্তিক দাবিদার।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৮২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ৫৪ জন প্রার্থী বৈধতা পান। উচ্চ আদালতে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান আরও ৯ জন। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে বিএনএমের বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৬৩ জন।

এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন অন্তত ছয়জন। তারা হলেন— ফরিদপুর-১ আসনে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, বরগুনা-২ আসনে অধ্যাপক আবদুর রহমান, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এইচ এম গোলাম রেজা, নীলফামারী-১ আসনে জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, জামালপুর-৪ আসনে মামুনুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দেওয়ান শামসুল আবেদিন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া মহাসচিব ড. মো. শাহ্জাহান চাঁদপুর-৪, সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী পাবনা-২ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে বিএনএমের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

বিএনএমের মহাসচিব ড. মো. শাহ্জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপাতত ৬৩ জন প্রার্থী বিএনএমের নোঙ্গর প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রার্থী সংখ্যা ৮০। বাকি ১৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তারা প্রত্যেকেই জিতে আসার মতো প্রার্থী। আমরা আশা করি, আমাদের ৮০ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০ জন্য জিতে আসবেন।’

“আমরা যেহেতু নতুন, সেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা ক্ষমতার ‘অংশ’ হওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য বিরোধী দলের স্থানটা নিশ্চিত করা। আমরা সরকারের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করিনি। সুতরাং প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চাই,”— বলেন ড. মো. শাহ্জাহান।

বিরোধী দলের আসনে শ্যেন দৃষ্টি রেখে এগোচ্ছে তৃণমূল বিএনপিও। এ দলটির নেতারাও মনে করছেন, জাতীয় পার্টি যেহেতু সরকারের সঙ্গে আসন ভাগভাগি করেছে, সেহেতু বিরোধী দলের তারাই ‘বৈধ দাবিদার’। এ লক্ষ্যে প্রায় দেড় শতাধিক আসনে সোনালী আঁশ প্রতীকে লড়ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তালিকাতেও সাবেক বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য আছেন। তারা হলেন— মৌলভীবাজার-২ আসনে এম এম শাহীন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এম এ আউয়াল, ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ এবং মেহেরপুর-২ আসনে আবদুল গণি।

তৃণমূল বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হিসেবে দলটির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ), নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা হুদা মুন্সিগঞ্জ-১ ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে লড়ছেন।

এ ছাড়া রাজশাহী-২ আসনে অভিনেতা এস এম আরমান পারভেজ, জয়পুরহাট-১ আসনে মো. মাসুম, বগুড়া-২ আসনে মো. বজলুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে মো. মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-১ আসনে মো. জামাল খান, পাবনা-১ আসনে জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম-২ আসনে জানে আলম, কক্সবাজার-৩ আসনে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা-১ আসনে মুফিদ খান, ঢাকা-২ আসনে সালাম মাহমুদ, ঢাকা-২০ আসনে অধ্যক্ষ আব্দুল হাবিবসহ মোট ২৩০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি। ইসির যাচাই-বাছাই ও উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির পর দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থী রয়েছে তাদের। এর মধ্য থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন জিতিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূল বিএনপিও।

এ প্রসঙ্গে দলটির মাহসচিব তৈমুর আলম খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করিনি, সেহেতু বিরোধী দল হিসেবে আমাদেরই বেছে নেবে জনগণ। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে বিরোধী দলের চেয়ারে বসার নৈতিকতা হারিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমরাই হব প্রধান বিরোধী দল।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন