বিজ্ঞাপন

ভোটের আগেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয়

December 23, 2023 | 4:09 pm

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

ব্যাপক আলোচনা ও আশা-নিরাশার দোলাচল পেরিয়ে আগামী ৭ই জানুয়ারী ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমাদের বহুল প্রত্যাশিত অংশগ্রহণমূলক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই শেষ পর্যন্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অংশ নিচ্ছে ৩২টি দল, প্রার্থী সংখ্যা প্রায় পৌনে তিন হাজার। এছাড়াও আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হিসেবে ২ হাজার ৭৪১ জন অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। অথচ সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে প্রতিনিয়ত নাশকতার রাজনীতি করে যাচ্ছে। তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে পুড়িয়ে মারছে এদেশের পুলিশ এবং সাধারণ জনগণকে। হরতাল-অবরোধের নামে অগ্নিসন্ত্রাস করে পুড়িয়ে দিচ্ছে বাস, ট্রাক, ট্রেন, সিএনজি, রিকশা এবং মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন।

বিজ্ঞাপন

বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব বিএনপি-জামায়াত জোট মনে করছে যে আর ক’দিন হরতাল-অবরোধ তথা জ্বালাও-পোড়াও করা গেলেই সরকার উল্টে পড়ে যাবে। কিন্তু তারা এটা লক্ষ করেননি যে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস পরিচালনার জন্য এদের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মানুষের নিকট কমে গিয়ে বাড়ছে জনবিচ্ছিন্নতা। দেশে-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তির দিকেও লক্ষ করেনি তারা। দলটিকে কেবল দেখেছে অনড় একটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে। এ দলগুলো যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বারবার ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে সাব্যস্ত হচ্ছে– রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার মোহে সেদিকেও তাকাননি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব। জামাতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সন্ত্রাসময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে বিএনপিকে জঙ্গি উত্থানের দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং আরোও করতে পারে, সেটাও তাদের মাথায় কাজ করছেনা। এই ধরনের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণ তথা ভোটেও অংশগ্রহণ করেনি তারা। এইভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয়কে ইঙ্গিত বহন করছে।

যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক সফলতা আসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে ভোটযুদ্ধে নিজেদেরকে বিজয়ী করার মাধ্যমে। নির্বাচন অংশগ্রহণ না করে বা ভোটে অংশগ্রহণ না করে জ্বালাও-পোড়াও করে গণতান্ত্রিক কোনো দেশে রাজনৈতিক সফলতা অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ভোটে অংশগ্রহণ না করাটা নিশ্চিতভাবে তাদের রাজনৈতিক পরাজয়েরই নামান্তর। তারা জানে যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোট যুদ্ধে তারা কখনো জয়লাভ করতে পারবেনা। কেননা ভোট যুদ্ধে জয়ী হয়ে রাজনৈতিকভাবে সফল হওয়ার জন্য যে পরিমাণ জনগণের সমর্থন থাকা দরকার তার সামান্যটুকুও নেই এই বিএনপি-জাময়াতের। এই সত্যিটুকু তারা ভালো করেই জানে। কারণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত এখন জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। তারা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের এখন আর চান না। তারমানে জনগণের সমর্থন এখন বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে নেই। এমতাবস্থায় তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাদের পক্ষে তেমন জনমত গড় উঠবেনা এবং তারা জনগণের ভোটও পাবেনা। যার ফলে তারা বুঝতে পারল যে ভোটে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হওয়ার প্রচেষ্টা হবে তাদের জন্য বৃথা প্রচেষ্টা। সেই লক্ষ্যেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে অতীতের ন্যায় নাশকতা করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিএনপি-জামায়াতের মতো জনসমর্থনের অভাবে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত দলগুলোই কেবল নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। রাজনৈতিকভাবে সফল কোন দল কোনদিনও নির্বাচন তথা ভোটে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেনা। কারণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নাশকতার রাজনীতি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কখনো রাজনৈতিকভাবে সফল কোনো দলের রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়েনা।

অথচ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি-জামায়াত অতীতের ন্যায় এখনো প্রতিনিয়ত গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে মহাসমাবেশের নামে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও, হত্যাকান্ড, হামলা এবং ভাঙচুরের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তা বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। তারা এই ধরনের জ্বালাও-পোড়াও তথা আগুন সন্ত্রাসের অভিশাপে বাংলাদেশ সাধারণ জনগণ এখন বিপন্ন প্রায়। শুধু জনগণের জন্য নয় বরং বিএনপি-জামায়াত জোটের জন্যেও তাদের এই ধরনের অগ্নি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অভিশাপ হিসেবে কাজ করছে। তাদের এই অগ্নি সন্ত্রাস এবং নাশকতার ফলে তারা ভোটের আগেই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। কারণ বিএনপি-জামায়াত যত বেশি অগ্নি সন্ত্রাস করছে তত বেশি জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। যার ফলে এই দলগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা বেড়েই চলেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের নিকট বিএনপি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ফলাফল হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগেই জনবিচ্ছিন্নতার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচালের উদ্দেশ্যে বিএনপি যে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়েনা। আর এই ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত রাজনীতি বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এই ধরনের নোংরা রাজনীতি করে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সমর্থন হারানোর পাশাপাশি এখন হারাচ্ছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের সমর্থন। এ দুয়ের ফলাফল হিসেবে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত একসাথে দেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন হারিয়ে একদম বিপন্ন প্রায়। এর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটে অন্তঃকোন্দল এখনো অনেক প্রকট। এই কোন্দলের ফলে বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক প্রার্থী নিজেদের দল ছেড়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন কোন্দল রাজনৈতিকভাবে সফল কোনো রাজনৈতিক দলে কখনো কাম্য নয়। নিজেদের দল ত্যাগ করে আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাও ভোটের আগেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয়ের ইঙ্গিত বহন করে।

এছাড়া গণতান্ত্রিক কোনো দেশে একটি দলের যোগ্য নেতৃত্ব সংকটের ফলেও রাজনৈতিক পরাজয় ঘটে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয় ঘটার পিছনে যোগ্য নেতৃত্ব সংকটও একটি গূরত্ব বহন করছে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যোগ্য নেতার নেতৃত্ব বলে কোনো একটি দল যেমন জনগণের সমর্থন নিয়ে রাজনৈতিক সফলতার মাধ্যমে সরকার গঠন করে দেশকে উন্নয়নের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌছে দিতে পারে তেমনি অযোগ্য এবং অদূরদর্শী নেতৃত্ব বলে সেই একই দল রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে দেশের জন্য একটা অভিশাপে পরিণত হতে পারে। একটা দল নেতৃত্ব সংকটের ফলে দেশ তথা দেশের নাগরিকের কাছে কতটা ভয়ংকর ও বিপদজনক হতে পারে তা সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতকে না দেখলে ঠাহর করা কোনদিন ও সম্ভব হবেনা। শুধু নেতৃত্ব সংকটের ফলে বিএনপি-জামায়াত পুরো বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের জনগণের নিকট রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ দলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে এখন তাদের জন্য অভিশাপ হিসেবেই চিন্তা করছে। তাদের করা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে তারা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নেতৃত্বহীনতার রাজনীতির মূল্য এখন গুনছে সন্ত্রাসী এবং অদূরদর্শী সংগঠন এই বিএনপি জামায়াত।

বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রমে গত প্রায় পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশের যে এত এত উন্নয়ন তার প্রকৃত স্বাদ এদেশের শান্তিকামী এবং গণতন্ত্রমনা জনগণ নিতে পারছেনা বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত এবং জ্বালাও-পোড়াও এর মত অপরাজনীতির ফলে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং ভাগ্য পরিবর্তনে ঈর্ষান্বিত বিএনপি-জামায়াত জোট এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। বিদেশি অপশক্তির সাথে আঁতাত করে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে এদেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ঘোলাটে করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসীন হতে নিষ্ফল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন এবং মহাসমাবেশের নামে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে সহিংসতা। বিএনপি-জামায়াতের এই সহিংসতার শিকার এদেশের সাধারণ জনগণ। তাদের করা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও তথা আগুন সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে এদেশের খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ।

বিজ্ঞাপন

সুতরাং আমার মনে হয় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে অন্তত জনমত গঠনের প্রচেষ্টাটুকু চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত তারা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে হয়তো সরকারের ক্ষমতায় আসার ও সুযোগ ছিলো তাদের। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে অদূরদর্শী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত সেই সুযোগটাও হারালো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে প্রতিনিয়ত নাশকতার রাজনীতি চালিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক পরাজয়ের জানান দিচ্ছে সকলের নিকট। বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট এখন এই বিএনপি-জামায়াত ভোটের আগেই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত দলের নাম।

লেখক: উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন