বিজ্ঞাপন

যিশুর জন্মস্থান যেন ধু ধু মরুভূমি

December 24, 2023 | 10:53 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের বেথেলহাম শহর। যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে কথিত। প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজে উঠে বেথেলহাম। ডিসেম্বরজুড়েই তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠে ঐতিহাসিক এ শহর। তবে এবার বেথেলহাম যেন নিষ্প্রাণ ধু ধু মরুভূমি।

বিজ্ঞাপন

এ বছর বড়দিনে বেথেলহামে কোনো আয়োজন নেই। নৃশংস ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। উপত্যকার ৮৫ শতাংশ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। সেখানেও তাদের নিস্তার নেই। হাসপাতাল, স্কুল ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চলছে ইসরাইলি হামলা। বেথেলহাম শহরের বেশিরভাগ মানুষের স্বজন, প্রিয়জন এবং বন্ধুরা গাজায় বাস করেন। পশ্চিম তীরের বেথেলহামজুড়ে তাই স্বজন হারানোর কান্না। যুদ্ধকালীন চরম আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় হচ্ছে না বড়দিন উদযাপন।

এ বছরের বড়দিন উপলক্ষে কয়েক মাস আগেই বেথেলহামের বাড়িঘর রাস্তাঘাট সাজানো হয়েছিল। তবে এসব এখন পরিত্যক্ত। বড়দিন উপলক্ষে কুচকাওয়াজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থল ম্যাঞ্জার স্কয়ারের ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস ট্রি এবার নেই। নেই ক্রিসমাস ক্যারল ও  বড়দিন উপলক্ষ্যে কোনো মেলা।

ক্রিসমাস ট্রির পরিবর্তে ম্যাঞ্জার স্কয়ারের স্থাপন করা হয়েছে একটি জন্মের দৃশ্য। এ দৃশ্যে নবজাতক যিশুকে বড় পাথর এবং কাঁটাতারে ঘেরা দেখানো হয়েছে। গাজার শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থাপন করা হয়েছে এ চিত্র।

বিজ্ঞাপন

বেথেলহামের নেটিভিটি চার্চ বা জন্মের গির্জায় এবার অস্বাভাবিক শূন্যতা। এই গির্জার ফাদার ইসা থাল্ডজিয়া বিবিসির সংবাদদাতাকে বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এই গির্জার যাজক। আমার জন্ম বেথেলহেমে। আমি এমন শূন্যতা কখনও দেখিনি। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির সময়ও না। গাজায় আমাদের ভাই-বোন আছে। এই সময় কোনো উদযাপন খুব কঠিন।

বেথেলহামের শহরের কাছে আল শাওয়ারা গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা আলী থাবেত। তিনি সিএনএন-এর সাংবাদিককে বলেন, আমার ছেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, এবার কেন ক্রিসমাস ট্রি নেই। আমি জানি না তার কাছে বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করব।

এই মুসলিম ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবছর বড়দিনে বেথেলহাম শহরে যান। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের খ্রিস্টান ভাইদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। আমরা তাদের উৎসবে যাই, আর তারাও আমাদের উৎসবে আসে। তবে এবারের ছুটির মওসুম সবচেয়ে খারাপ।

বিজ্ঞাপন

বড়দিন উপলক্ষ্যে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসজুড়ে জমজমাট থাকে বেথেলহামের ব্যবসা। বেথলেহেমের অর্থনীতি মূলত তীর্থযাত্রী এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তবে গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ব্যবসা ভালো যায়নি। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকেই। কিন্তু চলমান যুদ্ধ ব্যবসায়ীদের অবস্থা আরও সঙ্গিন করে তুলেছে। এবার বেথেলহাম শহরে বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। মুষ্টিমেয় যে কয়টি দোকান খোলা তাদের পণ্যে ধুলো জমেছে।

তৃতীয় প্রজন্মের একটি দোকানের মালিক রনি তাবাশ। তিনি তার দোকান খোলা রেখেছেন। আসলে দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দূরদূরান্তেও কোনো ক্রেতার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তাবাশের দোকানে আছে অত্যন্ত দক্ষ কারিগরের তৈরি জলপাই কাঠে যিশু খ্রিস্টের জন্মের দৃশ্যের শিল্পকর্ম, ঐতিহাসিক নানা ঘটনার স্যুভেনির, ভাস্কর্য ইত্যাদি। তাবাশ জানান, ১৯২৭ সালে তারা দাদা এই দোকানটি খুলেছিলেন। তিনি বলেন, বেথেলহামের এই স্কয়ার ও গির্জা আমার প্রাণের অংশ।

তাবাশ সিএনএনকে বলেন, এমন ক্রিসমাস জীবনে দেখিনি। সত্যি বলতে, তিন মাস থেকে আমাদের একটি বিক্রিও নেই। আমি আমার বাবাকে ঘরে রাখতে চাই না। আমি আশা ছাড়তে চাই না। তাই তাকে নিয়ে প্রতিদিন দোকানে আসি।

চার্চ অব নেটিভিটি এবার খালি। সাধারণত এই সময়ে গির্জার বাইরে শত শত গাড়ি পার্ক করা থাকে। তীর্থযাত্রীরা ধৈর্য সহকারে গির্জায় প্রবেশের জন্য বাইরে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতেন।

দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টের জন্মের সঠিক অবস্থান হিসেবে এই গির্জা বিবেচিত হয়ে আসছে। মার্বেল মেঝেতে নির্ধারণ করা একটি সিলভার স্টার যিশু খ্রিস্টের জন্মের নির্দিষ্ট স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে। ঠিক এ জায়গায়ই যিশুর জন্ম হয়েছে বলে কথিত আছে।

চতুর্থ শতাব্দীতে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন এই জায়গায় একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৫২৯ সালে এই গির্জা ধ্বংস হয়ে যায়। পরে আরও বড় একটি গির্জা এখানে নির্মাণ করা হয়। এই বর্তমান গির্জাটিই সেই গির্জা।

সাধারণত বড়দিনের আগে গির্জার ভেতরে দাঁড়ানোর জন্য খুব কম জায়গা পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর গাজার যুদ্ধ সবকিছু বদলে দিয়েছে। এখন গির্জায় পিনপতন নীরবতা।

নেটিভিটি চার্চের গ্রিক অর্থোডক্স ধর্মযাজক ফাদার স্পিরিডন সামুর বলেন, আমি এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। বড়দিন হলো আনন্দ, ভালোবাসা এবং শান্তি। কিন্তু এখন আমাদের শান্তি নেই। আমাদের কোনো আনন্দ নেই।

তিনি বলেন, এখনকার পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাইরে। আমরা সেইসব নেতাদের জন্য প্রার্থনা করি, যারা সারা বিশ্বের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এখানে ও সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনে ঈশ্বর যেন তাদের সাহায্য করেন।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন