December 25, 2023 | 2:58 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আজ। বাংলাদেশে এই উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) নামে পরিচিত। সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মের মানুষেরা ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ- উৎসবের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করছেন।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর গির্জাগুলোতে প্রার্থনাসহ চলছে নানা আয়োজন। এ জন্য গির্জাগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। যিশুখ্রিস্টের জন্মভূমি প্যালেসস্টাইনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে এদিন তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জায় প্রার্থনা করা হয়। পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ সব মানুষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। আজ রাজধানীর গির্জাগুলো নানা রংয়ের বেলুন, নকশা করা কাগজ, ফুল ও জরি ব্যবহার করে সাজানো হয়েছে। গির্জার ভেতরে বর্ণিল সাজে সেজেছে ক্রিসমাস ট্রিও।
এদিন সকালে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জপমালা রানীর গির্জার প্রার্থনাকক্ষের ভেতরে ও বাইরে সারি সারি চেয়ারে শহস্রাধিক মানুষ প্রার্থনায় অংশ নেন। চার্চের প্রার্থনাকক্ষে বেলুন, ফুলসহ নানা অনুসর উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রার্থনাকক্ষের এক পাশে একটি গোশালা করা হয়েছে। আর চার্চ প্রাঙ্গণ নানা রঙের বাতিতে সাজানো হয়েছে। প্রাঙ্গণের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে বড় আকারের ক্রিসমাস ট্রি, যা নানা রংয়ের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
প্রার্থনা শেষে তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রানীর গির্জার আর্যবিশপ বিজয় এন্ড ডি ক্রুজ সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রভু যিশুখ্রিস্ট আমাদের বলেছেন অপরকে ক্ষমা করতে, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে, তিনি বলেছেন পাপকে ঘৃণা করতে, পাপিকে নয়, তিনি নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষদের পক্ষালম্বন করেছেন। তাদের ভালোবেসেছেন। তিনি জীবিত থাকতেই অনেক আশ্বর্য কাজ করেছেন। তিনি অন্ধকে দৃষ্টি শক্তি দিয়েছেন, প্রতিবন্ধিকে চলার ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনি বোবাকে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন, কালাকে শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন। আবার তিনি বলেছেন, আমি সেবা পেতে নয়, সেবা করতে এ জগতে এসেছি। তাই আমরা দিনদুখী মানুষকে সেবা করি, ক্ষুধার্তকে অন্য দান করি, তৃষ্ণার্তকে জল দান করি, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র পরিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা যখন বড়দিন উৎসব পালন করছি, তখন আমাদের হৃদয় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কারণ প্রভু যিশুখ্রিস্ট যে বেথলেহেম, প্যালেস্টাইনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে বহু মানুষ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছেন, সেখানে রক্তের গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে।আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানসহ সদিচ্ছা সম্পন্ন সব মানুষকে অনুরোধ করি সবাই যেন এই যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করেন। এবং আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যাতে এই পৃথিবীকে শান্তি দান করেন। মানুষ যাতে প্রভু যিশুখ্রিস্ট আগমনে সুখে শান্তিতে, আনন্দে, সম্প্রতিতে জীবন যাপন করতে পারি। প্রভু যিশুখ্রিষ্ট আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি, সুখ সমৃদ্ধি ও আনন্দ।
বড়ুদিন উপলক্ষ্যে আজ সারা দিন আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। বড়দিন উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ লেখা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে আজ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এই দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিস্ট জন্ম নিয়েছিলেন।
খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ