বিজ্ঞাপন

বাসে ট্রেনে মানুষ পোড়ানো রাজনীতি হতে পারে না

December 26, 2023 | 4:41 pm

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

গণতন্ত্র মূলত বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি দল স্বাধীনভাবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার সম্পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। সহজ কথায় বহুদলীয় রাজনীতি গণতন্ত্রের প্রাণ। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণ হলো প্রধান শক্তি। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন একটি দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য জনগণের সমর্থন ও সহায়তার প্রয়োজন। জনগণের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করার কোন ধরনের সুযোগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ বিশ্বে বহুল পরিচিত এবং সফল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অতীতে এদেশের স্বৈরাচারী শাসক এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিগুলোর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম ও একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। শুধু প্রতিষ্ঠা করেই তিনি থেমে যাননি বরং গণতান্ত্রিক চর্চার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র নিয়ে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলা করে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সুযোগ রয়েছে। যার ফলে অতীতের ন্যায় এবারও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ প্রায় ৩২ টি রাজনৈতিক দল এবং হাজার হাজার স্বতন্ত্র প্রার্থী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে শুধুমাত্র এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত ছাড়া। বিশ্ব বহুল পরিচিত এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ হলো সহিংসতা এবং আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। গণতান্ত্রিক রাজনীতি কখনো তাদের আদর্শ ছিলোনা এবং সবসময় তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারা বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে যে ধরনের সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তা কখনো রাজনীতি হতে পারে না। এগুলো হলো রাজনীতির নামে অপরাজনীতি।

বিজ্ঞাপন

সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের এমন জ্বালাও-পোড়াও অপরাজনীতি নতুন নয় বরং অতীতেও ছিলো। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে বাধা দিতে অতীতের আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিএনপি-জামায়াত। এবারও সেই ২০১৩ ও ১৪ সালের মতোই টানা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা এবং চলন্ত বাস-ট্রেনে অগ্নিসংযোগের দিকে ঝুঁকছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত প্রায় ৪১৯টি পৃথক ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ হত্যা করে ৪৯২ জন নিরপরাধ মানুষকে। এ সকল অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আহত হয় প্রায় আড়াই হাজারের মতো মানুষ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াত দেখায় তাদের ভয়ংকরতম রূপটিকে। এ সময় তারা আগুন ধরিয়ে দেয় সারাদেশের প্রায় ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে, শত শত যানবাহনে, রাস্তার পার্শ্ববর্তী বৃক্ষরাজিতে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় যেনে তারা পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে বহু নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে। অগ্নিদগ্ধ অসহায় মানুষদের কান্নার আহাজারিতে প্রকম্পিত হয়েছিল সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলো। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারসহ এই সন্ত্রাসী জোট হত্যা করে ২৬ জন মানুষকে। একবছর পর ২০১৫ সালের আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল আগুন সন্ত্রাসীরা। সে সময় দুই হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। এসব ঘটনায় নিহত হয় ২৩১ জন মানুষ এবং গুরুতর আহত হয় এক হাজার ২০০ মানুষ। সেই অগ্নিসন্ত্রাসের বিভীষিকার কথা ভুলে যায়নি বাংলার জনগণ। পাশাপাশি এই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র নতুন করে বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তারা তৈরি করেছে তাতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করা এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে বিএনপি জামায়াত জোট তথা এই দলগুলোর অস্তিত্বসংকট তৈরি হবে। আর তাই নির্বাচন ব্যর্থ করার জন্য হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ট্রেনে-বাসসহ অন্যান্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা তাদের বেপরোয়ানা প্রদর্শন করছে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি তাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যারা গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আন্দোলনের নামে জীবনবৈরী ও সম্পদবিনাশী একের পর এক নাশকতার ছক কষে সবকিছু বিপন্ন-বিপর্যস্ত করে ফেলতে তৎপর, তাদের মাথায় যদি রাজনৈতিক বলবানদের হাত স্পর্শিত না থাকে তাহলে দুর্বৃত্তপনার এত সাহস তারা দেখাতে পারত না। অসংখ্য জনের এ অভিমত অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। এর নাম কোনোভাবেই রাজনীতি হতে পারে না। সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ গণপরিবহন হিসেবে বাস এবং রেলপথ স্বীকৃত। মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখেই সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধেও বাস ও ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষও সাশ্রয়ী ও নিরাপদ এই বাহনগুলো ব্যবহার করে ভ্রমণ করছে। কিন্তু এ স্বাভাবিকতা ব্যাহত করার উদ্দেশ্য থেকেই রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীরা বাস এবং রেলপথকে বেছে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক বাসে ট্রেনে পরিচালিত এমন জ্বালাও-পোড়াও এবং সহিংসতা এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের অসহায় এবং নিরীহ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের এই অপপ্রচেষ্টা সঙ্গত কারণেই জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। বরং এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি কখনো বেগবান হতে পারে না। ফলে যারা নির্বাচন বর্জনের কৌশল নিয়েছেন, তাদের সে কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। অন্যদিকে সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের কৌশলের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে ওঠার বিষয়টিও সঙ্গত এবং তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিদ্যমান। কারণ দেশে যখনই মৌলবাদী গোষ্ঠী বা জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বেড়েছিল তখনই সাধারণ মানুষ নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করেছে। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছে। আমাদেশের বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের নিজেদের নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দেয় সবসময়। কারণ রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা নিঃসন্দেহে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এমন ছন্দপতন মানুষ সঙ্গত কারণেই মেনে নেবে না। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন। প্রয়োজনে তারা ক্ষেত্র বিশেষে নিজেরাই এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলছে যে, মানুষ পোড়ানোর অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এর আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা এবং গণপরিবহণে আগুন ও ট্রেনের লাইন কেটে ফেলার মতো এসব নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। নৃশংসতার সুযোগ সন্ধানী রাজনীতি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। টিআইবি এর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর এই অপরাজনীতির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এই ধরনের সহিংস কার্যক্রমের সাথে জড়িত সকলের বিচারের দাবি করেছে সংস্থাটি। তাদের মতে এই ধরনের সহিংসতা রাজনীতিতে কোনভাবেই কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য নয়। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কখনো রাজনীতি হতে পারে না।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ আপোষহীন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী সব ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট কঠোর। সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে, নির্বাচন বন্ধ করে ফায়দা লুটবে এই ধরনের কোনো সুযোগ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে করতে দিবে না। বাঙালি জনগণের একমাত্র ভরসাস্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলার মাটিতে বাংলার সোনার মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নির্বাচন বানচাল করে কেউ লাভবান হওয়ার সুযোগ কোনভাবেই পাবে না। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের সমর্থন ও ভোটে যেকোনো দল বাংলাদেশে সরকার গঠনের সুযোগ পেতে পারে। জনগণকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সরকারের ক্ষমতা আসীন হওয়ার কোন ধরনেরই সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের নামে এভাবে বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতি কখনো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শ হতে পারে না। এগুলো মূলত রাজনীতির নামে অপরাজনীতি। জনগণের সমর্থন ও ভোটে অতীতের ন্যায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রে ধারক ও বাহক বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির নামে যারা এই ধরনের অপরাজনীতি করে গণতন্ত্রকে কলুষিত করছে এবং বাঙালি জনগণের জীবন বিষিয়ে তুলেছে, এদেশের সংবিধানের আলোকে তাদের বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।

লেখক: উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন