বিজ্ঞাপন

খুলনা-৪ আসন: ১২ প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ে কেবল নৌকা আর কেটলি

December 29, 2023 | 12:43 pm

রেজাউল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খুলনা: জমে উঠেছে খুলনা-৪ আসনের ভোটের লড়াই। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১০ দিন ধরে সমানতালে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। অলিগলি ছেয়ে গেছে ব্যানার-পোস্টারে। প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে রিকশা-অটোরিকশায় করে মাইকিং চলছে এলাকায় এলাকায়। ভোটের প্রচার আর এক সপ্তাহ বাকি থাকায় প্রার্থীরা দিনরাত এক করে ছুটছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে, ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে এই আসনে ১২ জন প্রার্থী থাকলেও মূলত লড়াই চলছে দুজনের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

ভোটের মাঠের খবর বলছে, খুলনার এই আসনটিতে ব্যালট বাক্সে মূল লড়াই হবে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোস্তফা রশিদী দারার মধ্যে। এরই মধ্যে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারে। সভা-মিছিল করে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করে ভোট চাচ্ছেন দুজন। সাধারণ ভোটররাও বলছেন, এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনটি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, আসনের মোট ভোটার তিন লাখ ৫৫ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৭ হাজার ২৯২ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৭৭ হাজার ৮৮১ জন।

নৌকা ও কেটলি প্রতীকের দুজন ছাড়াও এই আসনে প্রার্থী রয়েছেন আরও ১০ জন— তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান (সোনালি আঁশ), বিএনএমের এস এম আজমল হোসেন (নোঙর), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মনিরা সুলতানা (ডাব), জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ (লাঙ্গল), এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান (আম), ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দিন খান (মিনার) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জুয়েল রানা (ট্রাক), রেজভী আলম (ঈগল),
এইচ এম রওশান জামির (কাঁচি) ও এম ডি এহসানুল হক (সোফা)।

বিজ্ঞাপন

ভোটার ও স্থানীয়রা বলছেন, সালাম মূর্শেদী ও মোস্তফা রশিদী দারাকে বাদ দিলে বাকি যে ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন, তারা কেবল নামেই প্রার্থী হয়েছেন। তাদের পক্ষে নেই তেমন প্রচার। খুব একটা পোস্টারও পড়েনি এসব প্রার্থীর পক্ষে। এমনকি সাধারণ মানুষদের মধ্যে তাদের পরিচিতি পর্যন্ত নেই। বরং ভোটে হেরেও গেলেও ভোট করার সুবাদেই এমপি প্রার্থী হিসেবে লোকজন চিনবে, এমন ভাবনা থেকেই তারা প্রার্থী হয়েছেন বলে মনে করে অনেকেই।

খুলনার এই আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছিলেন আগেও দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত মোস্তফা রশিদী সুজা। তার মৃত্যু হলে ২০১৮ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে সালাম মূর্শেদীকে। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনিই নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয় পান। তবে তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে যতটা পরিচিত, তার চেয়ে বেশি পরিচিত খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ী হিসেবে। একসময় দেশসেরা ফুটবলারদেরই একজন ছিলেন তিনি।

অন্যদিকে বর্তমানে এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মূর্শেদী। প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতিও ছিলেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর এখন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য তিনি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে নির্বাচনে সালাম মূর্শেদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোর্ত্তজা রশিদী দারা এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা রশিদী সুজার ছোট ভাই। সুজা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। অন্যদিকে দারা সুন্দরবন কলেজের সাবেক ভিপি, বিভাগীয় ক্রীড়াসহ তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বড় ভাই সুজার রাজনীতির উত্তরসূরী হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তার পক্ষেই সক্রিয়।

স্থানীয়রাও জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোর্ত্তজা রশিদী দারার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে কেটলি প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে বিশাল এক মিছিল রূপসা উপজেলার ৩ নম্বর নৈহাটি ইউনিয়নের নতুন হাট বাজার থেকে শুরু করে ৪ নম্বর টিএসবি ইউনিয়নের কাজদিয়া বাজার হয়ে থানার মোড় বাজারে এক পথসভার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। মিছিলে দারার ভাই ওয়ার্ড কমিশনার মোজাফফর রশিদী রেজা, ৪ নম্বর টিএসবি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর শেখ, রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কুমার মিত্রসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরদিন মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) একই স্থানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে সমর্থন জানিয়ে হয় আরেক বিশাল মিছিল। মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন। স্থানীয়দের অভিমত, দুই দিনে দুই প্রার্থীর পক্ষে পাল্টাপাল্টি মিছিল তাদের শক্তিমত্তা জানান দেওয়ারই অংশ ছিল। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন এবং দৃশ্যত তাদের কেউই প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় খুব একটা পিছিয়ে নেই।

এদিকে সালাম মূর্শেদীর কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনি আচরণ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোর্ত্তজা রশিদী দারার। সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের আচরণে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তার কর্মী-সমর্থকরা ‘ভোট যাকে দাও, ফলাফল ঘোষণা হবে সালাম মূর্শেদীর পক্ষে’ বলে মিথ্যা প্রচারণা করছে। তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। আমার কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নিজের জয়ের বিষয়ে আশাবাদ জানিয়ে দারা বলেন, বর্তমান এমপি সালাম মূর্শেদীর সঙ্গে তৃণমূল আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী নেই। তার সন্ত্রাসী ও পেটুয়া বাহিনী আমার কেটলি প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে, হাত-পা গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তারপরও মানুষের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে— এ বিষয়ে আমি শতভাগ আস্থা রাখি।

তবে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদীও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন। জনগণ আমার পাশে আছে। মানুষ এখন নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দিতে চায় না। আমি শতভাগ নিশ্চিত, আমিই জয়ী হব ইনশাআল্লাহ।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন