বিজ্ঞাপন

ফুরফুরে আসাদের বাধা মন্টু

January 2, 2024 | 7:36 pm

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: পবা ও মোহনপুর নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন। ২০০৮ সালে এই আসনটি পুর্নগঠিত হয়। এর আগে বাগমারা-মোহনপুর ও বোয়ালিয়া-পবা নিয়ে আসন ছিল। এই আসন থেকে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। এরপর ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। তিনি এই আসনে পরপর দুই বার সংসদ সদস্য ছিলেন। নানা বিতর্কের কারণে এবার এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলে আসাদের সহজ পথে বাধা হয়েছেন বিএনএম প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু। এই আসনে সাবেক দুই ছাত্রনেতার লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

বিজ্ঞাপন

এই আসনে এই দুই প্রার্থী বাদে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুস সালাম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী এনামুল হক, এনপিপি প্রার্থী সইবুর রহমান ও বিএনএফ প্রার্থী বজলুর রহমান। এরাও এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হবে আশাবাদী। তবে এই আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী। এমপি আয়েন উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মনোনয়নও জমা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকেননি। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি ৮০ ও ৯০ দশকের ছাত্রনেতা। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা যুবলীগের। যুবলীগ ছাড়ার পর সরাসরি আসেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে। এরপর হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের এই ত্যাগী নেতা বেশ কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েও পাননি। অবশেষে রাজশাহী-৩ আসন থেকে আয়েন উদ্দিনকে হঠিয়ে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে রাজশাহী-৩ থেকে অনেক আগে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল আসাদের। তিনি এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করে বেড়িয়েছেন। আসনটিতে তার পথ অনেক সহজ হয়ে আছে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এক সময়ের তুখোড় ছাত্রদল নেতা ছিলেন মতিউর রহমান মন্টু। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও তাকে খুব স্নেহ করতেন। রাজশাহী এলে যেতেন মন্টুর বাড়িতে। মন্টু দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও। ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। সেই মন্টু বিএনপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম)। হয়েছেন কেন্দ্র্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও। এই নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে অনুসরণ করছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কবির হোসেনকে। নীরবে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, আসাদুজ্জামান আসাদ আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সৈনিক। এবার তার প্রতি সুবিচার করা হয়েছে। এই আসনে আয়েন এমপি থাকা অবস্থায় তিনি নিজের বিশাল সম্পদ গড়ে তুলেছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের উপরে চালিয়েছিলেন অত্যাচার। রাজনীতিতে শুরু করেছিলেন পরিবারতন্ত্র। সেজন্য আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মাইনাস করেছিলেন। এখন আবার ত্যাগী নেতারা ফিরে আসছেন। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই নির্বাচনে আসাদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। তবে বাধা হতে পারেন এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার কর্মীরা। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, এমপি আয়েন এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নেন। তবে তিনি মুখে নৌকা প্রতীককে সমর্থন দিলেও এখন পর্যন্ত তার কর্মীদের খুব একটা মাঠে দেখা যায়নি। তার দুলাভাই মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকেও দেখা যায়নি। তারা ভোটকেন্দ্র ভোটারদের যেতে বাধা দিবেন বলে ধারণা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের।

কেশরহাট পৌরভার সাবেক কাউন্সিলর রুস্তম আলী প্রামাণিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি আয়েন উদ্দিন এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। আবার অনেক মানুষ নিষ্পেষিতও হয়েছেন। আমি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। ১৯৮৬ সাল হতে নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছি। নৌকা প্রতীক যিনি পেয়েছেন তারই হয়ে ভোটের মাঠে কাজ করেছি। এবারে আসাদুজ্জামান আসাদকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করতেই হবে।’

বিজ্ঞাপন

মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেবুব হাসান রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসাদুজ্জামানের প্রচারণায় জনসমর্থন দিন দিন বেড়েই চলেছে। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।’

এই আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ও আমারর পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নৌকার বিপক্ষে গিয়ে ভোট করতে পারব না। আমার রাজনৈতিক জীবনও অনেক সংগ্রামের। জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমি রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিই। সেখানে অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছি। আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এবার তিনি আমাকে দেননি। দিয়েছেন আসাদ ভাইকে। আসাদ ভাই আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা। আমি নৌকার বিপক্ষে যেতে পারব না। আসাদ ভাইকে আমি সমর্থন দেব।’

স্থানীয়দের ভাষ্য, বিএনএম সমর্থিত প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু কৌশলি প্রচারণার মাধ্যমে দিন দিন তার সমর্থক বাড়িয়ে ফেলেছেন। তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কবীর হোসেনকে অনুসরণ করে ভোট চাচ্ছেন। মোহনপুরে তার কর্মী-সমর্থকও অনেক। বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মী তার পক্ষে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বিএনএম প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সময়ে বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আমার এলাকায় বেশ নাম-ডাক আছে। বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দিলেও আমার সমর্থকরা সঙ্গে আছে। এখানকার বিএনপি নেতারাও আমার পক্ষে কাজ করছেন। আমি খুব সকালে বের হয়ে রাত পর্যন্ত ওয়ার্ক করছি। তবে এই নির্বাচনে আমার সঙ্গে আসাদ ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আসাদ ভাইও একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। নির্বাচনি প্রচারের সময় তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমরা দুজন কুশলও বিনিময় করেছি। তবে এই আসন থেকে আমরা যেই জয়ী হয় না কেন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করব।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত কবীর হোসেন অনুসরণ করছেন বলেও স্বীকার করেন মন্টু। তিনি বলেন, ‘কবীর হোসেন ছিলেন আমাদের রাজনৈতিক গুরু। আমরা তার আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলাম। তিনি সাধারণ মানুষের রাজনীতি করেছেন। আমিও তাই করছি। বিএনপির বেশকিছু নেতা আমার সঙ্গে আছেন। তবে সবাই তো ভোট দিতে আসবেন না। কিছু নেতাকর্মী ভোট দেবেন, আবার কিছু নেতাকর্মী ভোটকেন্দ্রের ধারে কাছেও আসবেন না। অনেকে বোঝার চেষ্টাও করছেন। তবে ভোটের আগে অনেক কিছুই বোঝা যাবে।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পবা-মোহনপুরে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মানুষের কাছে গিয়েছি। এলাকার ভোটাররাও আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমি নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। প্রতিদ্বন্দ্বী মতিউর রহমান মন্টুর সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা হবে। মন্টু এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে এই আসনের মাটি ও মানুষের পাশে থাকব সবসময়। এই এলাকার মানুষের যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রাপ্য সেটা আমি নিশ্চিত করব। আমি এমপি হলে কতদূর কী করতে পারব জানি না, কিন্তু আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যাতে মৃত্যুর পরেও আমাকে নিয়ে খারাপ কিছু বলার সুযোগ না থাকে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজেকে আমি বলি না, বলি আমরা। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিই। জনগণের ভোটে এমপি হলে আপনাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব।’

উল্লেখ্য, এই আসনটিতে তিনটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন আছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৫৬ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন তিন জন।

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন