বিজ্ঞাপন

‘গোলাম দস্তগীর গাজী না থাকলে চিকিৎসার খরচ জোগাতেই মরে যেতাম’

January 3, 2024 | 12:31 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

রূপগঞ্জ থেকে ফিরে: ‘২ বছর ধরে কিডনির চিকিৎসা করাতে গিয়ে জায়গা-জমি বিক্রি করতে হচ্ছিল। প্রায় পথে বসার অবস্থা হয়ে যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় ভাবছিলাম সন্তানের ভবিষ্যৎও আমি ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজীর কারণে এখন সেই দুঃশ্চিন্তা কমে গেছে। আগে যেখানে দুইটা ডায়ালাইসিস করাতে আমার সপ্তাহে ৬ হাজার টাকা করে খরচ হতো, সেখানে এখন প্রায় বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করাতে পারি। আগে সপ্তাহে ছয় হাজার টাকার সঙ্গে ঢাকা যাওয়া-আসার গাড়ি ভাড়াসহ শরীরের ওপর একটা বিশাল বড় ধকল যেতো। আর এখন বাড়ির পাশেই পাকা রাস্তায় রিকশা দিয়ে যাওয়ার আসা করেই ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারি। গোলাম দস্তগীর গাজী না থাকলে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে করতেই মরে যেতাম। আল্লাহ্‌ উনারে অনেক দিছে, আরও দিক। আমিও আমার ভোটটা উনারে দেবো। কারণ উনার মতো একজন জনবান্ধব, যার বাসায় গেলেই দেখা করা যায়, এমন এমপি আমাদের রূপগঞ্জবাসীর জন্য সৌভাগ্যের।’

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ সবুজ মিয়া কথাগুলো বলছিলেন সারাবাংলার প্রতিবেদকের কাছে।

দীর্ঘদিন কিডনি সংক্রান্ত নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে আর্থিকভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। এমন সময় স্বজনদের কাছ থেকে একজন জানান ‘যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে’র কথা। আর সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ‘বিনামূল্যে’।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারেই তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। মোহাম্মদ সবুজ মিয়া বলেন, ‘প্রায় ২ বছর ধরে আমি শারীরিকভাবে নানা সমস্যায় আক্রান্ত, তাই অনেক হাসপাতালে গেছি। কিডনির সমস্যা ধরা পড়ার পরে আমি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতাম। কিন্তু সেখানে সিরিয়াল পাওয়া কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে যেতো। সিরিয়াল পেতেও অনেক সময় লাগতো। আবার যাওয়া-আসাতেও অনেক সময় নষ্ট হতো। শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে যেতাম অনেক। সিরিয়াল পাওয়ার পরেও যে ডায়ালাইসিস নিতাম তাতেও প্রায় ৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যেতো।’

তিনি বলেন, ‘এরপরে রূপগঞ্জেই ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাই। কিন্তু সেখানেও প্রায় ৩ হাজার টাকার মতো লাগতো ডায়ালাইসিস সেবা নিতে। এভাবে গত এক-দেড় বছরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার জায়গা-জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। টাকা-পয়সা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় একজন জানালেন যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের কথা। এখানে এরপরে খবর নিয়ে তো পুরা অবাক হয়ে যাই। যারা চিকিৎসা নিয়েছে তাদের কাছ থেকে জানতে পারি ৫০০ টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করানো হয়।’

সেই ৫০০ টাকা কি জন্য নেয় শুনবেন, নিজে প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিতে থাকেন সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়ার জন্য ডায়ালাইজার, ব্লাড লাইনসহ অনেক কিছুর ব্যবহার হয়। এর আগে যে সব সরকারি আর বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নিয়েছি সেখানে এইসব জিনিস একবার ব্যবহারের পরে দুই তিনটা রোগীরেও দেওয়া হতো। কিন্তু এই সেন্টারে সেটা একবারই দেওয়া হয়। ওই হিসেবে সেগুলার দামও তো ৫০০ টাকার বেশি চলে আসে। আর তাই যে ৫০০ টাকা নিচ্ছে তা আসলে বিনামূল্যই বলা যায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এখানে এসে আরও শুনতে পাই যে গাজী সাহেবের কাছে গিয়ে একটা সই আনতে পারলেই এখানে খুব সহজে চিকিৎসা করানো সম্ভব। মানুষের কাছে শুনে আমি যাই গাজী সাহেবের কাছে। প্রথমে ভাবছিলাম এতোবড় একজন এমপি সাব কী আমার সঙ্গে দেখা করবে? তার উপর আবার মন্ত্রীও উনি। আমার মতো পাবলিক কী আর উনার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? কিন্তু গাজী ভবনে গিয়ে যা দেখলাম তা জীবনেও ভুলবো না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ছেলেসহ। অন্যদের সঙ্গে কথা বলে আমার কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে কোনো সমস্যা নিয়ে গেছি কিনা? আমি জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাগজে সই করে দিলেন।’

সবুজ মিয়া বলতে থাকেন, ‘কাগজে সই করার পরে জানতে চাইলেন বাড়ির অন্যরা কেমন আছে? তাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা। আমি কতদিন ধরে ডায়ালাইসিস করাচ্ছি। যখনই বললাম অনেক দিন ধরে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে জায়গা-জমি বিক্রি করতে হচ্ছে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কিছু টাকা জোর করেই দিয়ে দিলেন। বললেন, সেন্টারে ৫০০ টাকা করে লাগবে। সেখানে দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই যেন চিকিৎসা থেমে না থাকে। যে মানুষটারে নিয়ে অনেকে নানা রকমের কথা বলে থাকে তাকে সামনে থেকে এভাবে দেখে আমরা অবাক। এরপর থেকেই এখানে সেবা নিচ্ছি। উনার সই করা থাকলে সিরিয়ালও তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।’

সবুজ মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবেও এতো কম টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারি নাই। যা এখানে পারছি। যে কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে সবাই টাকার কথাটা তো আমাদের দেশে ভাবতেই হয়। কিন্ত এখানে দেখলাম উল্টোটা। টাকা-পয়সা নয় বরং সেবাটা আগে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রায় ছয় মাস এখানে সেবা নিচ্ছি। এখানে দেখছি এমন রোগীও আছে যারা গাজী সাহেবের সই নিয়ে আসার পরে ৫০০ টাকা নাই বা ওষুধ কেনার টাকা নাই বলার পরে তাদের সেটাও দিয়ে দিয়েছেন। আমারও আগে যেখানে সপ্তাহে ৬ হাজার টাকা লাগতো ডায়ালাইসিস সেবার জন্য সেখানে এখন মাত্র এক হাজার টাকা লাগে। সেই টাকাটাও আবার গাজী সাহেব নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিয়েছেন। এজন্য গাজী সাহেবের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ।’

বিজ্ঞাপন

‘গাজী সাহেবের মতো একজন লোক রূপগঞ্জের এমপি হিসেবে থাকা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের। উনারে আল্লাহ যেনো এবারও পাশ করাইয়া দেয় সেই দোয়া করি কারণ এলাকার মানুষের পাশেই থাকেন তিনি সবসময়। উনারে ভোট না দেওয়াটা হবে বেঈমানি। আল্লাহ উনারে নেক হায়াত দান করুক’, বলেন সবুজ মিয়া।

রূপগঞ্জে অবস্থিত যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন ডায়ালাইসিস সেন্টারের দায়িত্বরত ডা. বোরহান আহমেদ রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা উপজেলা পর্যায়ের এলাকায় এমন একটা ডায়ালাইসিস সেন্টার এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কারণ এই এলাকায় অনেক রোগী আছে যাদের আর্থিকভাবে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য যে টাকা-পয়সা প্রয়োজন তার সামর্থ্য নেই। কিন্তু এলাকার মানুষের সেগুলো নিয়ে ভাবতে হয় না। গাজী সাহেবের কাছে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এখন আর তাদের টাকা-পয়সা খরচ করে ঢাকা যেতে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন ১০ জন রোগী ডায়ালাইসিস করতে পারে দুই শিফটে। সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক শিফট চলে। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত আরেকটা শিফট চলে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকি। আমাদের ১০টা বেড ও মেশিন আছে। আর সেই হিসেবেই আমরা সেবা দিয়ে থাকি। কোনো রোগীর দেখা যায় সপ্তাহে তিনটা আবার কারো দুইটা বা একটা ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। আমরা সেই হিসেবে পরিকল্পনা করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রায় এক বছর হলো এখানে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আপনারা জানেন কিডনিসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। কিডনী রোগীদের সংখ্যাও কিন্তু বাড়ছে অনেক। কিন্তু সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিতে আছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। তবে রূপগঞ্জের রোগীরা এক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান। তারা ঘরের কাছেই এমন সেবা নিতে পারছেন।

ডা. বোরহান বলেন, ‘ডায়ালাইসিস সেবা নিতে নিতে অনেকেরই আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যায় কিন্তু রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী সাহেবের উদ্যোগে এই এলাকার মানুষ প্রায় বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারছেন। আর এজন্য তারা এমপি সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরও বলেন, ‘রূপগঞ্জ বা রূপসীর মতো এলাকাতে এমন একটা চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিরল ঘটনা। এখানে যে কোয়ালিটিফুল সেবা দেওয়া হয়ে থাকে তা আমার মনে হয় না কোনো পাঁচ তারকা হাসপাতালেও দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ আমাদের ডায়ালাইজার, ব্লাড লাইনসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছুই আমরা মাত্র একবার ব্যবহার করে থাকি। কোনো কিছুই দুইবার বা দুইজন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় না। সরকারিভাবেও এমনটা করা সম্ভব হয় না।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি রূপগঞ্জের গরিব ও অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করা হয়। উপজেলার রূপসী এলাকায় এটি চালু করা হয়।

জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, ‘যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন ডায়ালাইসিস সেন্টার একটি অলাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান; মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য কিডনি রোগী‌দের রাজধানী ঢাকাসহ দূরের বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে হয়; রূপগঞ্জ তথা নারায়ণগঞ্জ জেলার মানুষ‌কে যাতে আর ডায়ালাইসিসের জন্য দূরে যেতে না হয় সেটা চিন্তা করে যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন রূপগঞ্জ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।’ রূপগ‌ঞ্জে অত্যাধু‌নিক মা‌নের হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করা হ‌বে বলেও জানান মন্ত্রী।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন