বিজ্ঞাপন

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজ

January 3, 2024 | 1:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাংবাদিককে মারধর ও নাজেহাল করে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এ মামলার শুনানি হয়েছে।

জানা গেছে, আসামি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম বজলুর রহমান শুনানি করেন। তিনি মামলায় আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা উল্লেখ করেন এবং ধারা জামিনযোগ্য বিধায় আসামির জামিন প্রার্থনা করেন। জামিন দিলে আসামি এর অপব্যবহার করবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলি অতিরিক্ত জেলা পিপি আজহারুল হক চৌধুরী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, সাংবাদিককে মারধরের আসামি জামিন পেলে সহিংসতাকারীরা উৎসাহিত হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

বিজ্ঞাপন

আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলি।

এদিকে শুনানির সময় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী শতাধিক নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত  হয়ে আদালতে হাজির হন। শুনানি শেষে নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরে আদালত থেকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে দেন। এসময় পুলিশ পাহারাও দেখা গেছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। প্রার্থীর নির্বাচনি আচরণবিধি, ২০০৮ এর ৮ (খ) ধারায় দায়ের করা এ মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং আরও ২০-৩০ জনেক অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়। আদালত ৩ জানুয়ারির মধ্যে মোস্তাফিজুরকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

সাংবাদিককে ফোন করে গালিগালাজ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, সাংসদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।

এবার মনোনয়ন না পাওয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই নৌকা প্রতীক পেয়ে গত ৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর রহমান। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার সঙ্গে ঢুকে পড়েন এক ডজন নেতাকর্মী। মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

এসময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক রাকিব উদ্দিন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাংসদ মোস্তাফিজুর রেগে যান। তিনি রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হুমকিধমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও এসময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। ধাক্কাধাক্কিতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কিছু সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোস্তাফিজুর রহমান চলে যাবার সময় তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানাতে চাইলে নেতাকর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন-পূর্ব-অনিয়ম’ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকল্পে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মো. নোমানের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে কমিটি মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাখা তলব করেন। পরদিনই প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখা পাঠান নৌকার প্রার্থী।

কমিটি নিজস্ব অনুসন্ধানে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংবাদিককে গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া কমিটির প্রতিদেনে বলা হয়, মোস্তাফিজুর ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ এর ৮ (খ) বিধি লঙ্ঘন করেছেন।

এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন