বিজ্ঞাপন

মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক নিহত, পুলিশ বলছে পূর্ববিরোধ

January 5, 2024 | 12:54 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবার এ ঘটনাকে নির্বাচনি সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করলেও পুলিশ ঘটনাটিকে জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জের বলে দাবি করছে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারেও জমি নিয়ে বিরোধের কথাই লেখা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বলছেন, মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই মামলার এজাহার লিখে তাকে কেবল সই করতে বলেছেন। তবে ওসি বলছেন, মামলার এজাহার পড়ে শুনিয়ে তবেই বাদীর সই নেওয়া হয়েছে।

নিহত জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত মিরুখালী ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের তোতার পঞ্চায়েতের ছেলে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসনে কলার ছড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম শাহনেওয়াজের পক্ষে কাজ করছিলেন। চার সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর বাদুরা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে বাদুরা গ্রামে তাদের সঙ্গে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের রুস্তম আলী ফরাজীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে বিকেলে বাদুরা গ্রামের নিহত জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েতের সঙ্গে রুস্তম ফরাজীর সমর্থকদের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় বাদুরা গ্রামের বশীর ফরাজির ছেলে মো. সেরাজুল ফরাজি (স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তুম আলী ফরাজির সমর্থক) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন জাহাঙ্গীরকে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ঢামেক হাসপাতালে মৃত্যু হয় জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েতের।

বিজ্ঞাপন

স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজের দাবি, তার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে যাওয়ার সময় জাহাঙ্গীরকে পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র পার্থী ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীর সমার্থকরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছেন।

মিরুখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবাহান শরীফ বলেন, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ নেই। গত বুধবার বিকালে জাহাঙ্গীর তার সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনি জনসভায় দাওয়াত দেওয়ার জন্য বাদুরা বাজারে যায়। এ সময় রুস্তম আলী ফরাজীর কর্মী স্থানীয় সেরাজুল ফরাজী ও তার তিন ভাইসহ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফের ভাই মিলে পরিকল্পিতভাবে জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার অভিযোগ করেছে জাহাঙ্গীরের পরিবার। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বুলু বেগমের সঙ্গে থানায় যাওয়া একজন জানান, থানার ওসি প্রথমে মামলা নিতে চাননি। পরে বুলু বেগমকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন ওসি। সেখানে তাদের কাউকে থাকতে দেননি। পরে পরে থানা থেকেই মামলার এজাহার লিখে সেখানে বুলু বেগমের সই নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই মামলার এজাহারে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর কারণ হিসেবে জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের আঘাতে মৃত্যুকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বুলু বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘থানার ওসি মামলা লিখে আমাকে সই করতে বলেছে। আমি সই করছি। মামণলা কী লেখা আছে না আছে, জানি না।’

জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের স্ত্রী ও তার বোনসহ আরও কয়েকজন থানায় এসেছিলেন মামলঅ করতে। থানার অপারেটর তাদের কথা শুনে মামলার এজাহার লিখেছেন। লেখার পর সেটি বাদীকে পড়ে শোনানো হয়েছে। পুরোটা শুনে তিনি এজাহারে সই করেছেন। মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়ে গেছে।’

নিহত জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর পঞ্চায়েত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমি ঘটনা সম্পূর্ণ জানি না। ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। বাড়ি গিয়ে বিস্তারিত জানব। প্রয়োজনে থানায় আরেকটি মামলা করব। পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে প্রয়োজনে আদালতে যাব।’

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে পুলিশ সুপারও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পেছনে পূর্ববিরোধকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সুপার শরীফুল সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে স্থানীয় সেরাজুলের বাদুরা বাজারের একটি দোকানের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। বুধবার সকালে এ নিয়েই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিকেলে জাহাঙ্গীর বাড়ি থেকে বাদুরা যাওয়ার পথে সেরাজুল তাকে আঘাত করেন। এটি ব্যক্তিগত বিরোধ, নির্বাচনি সহিংসতা নয়।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন