বিজ্ঞাপন

এক মৌসুমের মাছ পাওয়া গেল ৪ মাসেই

January 5, 2024 | 12:27 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: গত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মোট ৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছিল। এ মাছ হতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) শুল্ক আদায় করেছে ১১ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। তবে চলতি মৌসুমের প্রথম চার মাসেই গত আহরণ মৌসুমের মোট মৎস্য অবতরণের রেকর্ড অতিক্রম করল বিএফডিসি। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চার মাসে কাপ্তাই হ্রদ হতে ৫ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছে বিএফডিসির চারটি বিপণনকেন্দ্রে। এর বিপরীতে ১১ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা শুল্কহার আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

বিএফডিসির তথ্যমতে, গতবারের চেয়ে চলতি আহরণ মৌসুমের প্রথম চার মাসেই মাছ অবতরণ রেকর্ড করেছে। মাছের অবতরণের পাশাপাশি অতিক্রম করেছে শুল্কহার আদায়ও। স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলে হ্রদে মাছ আহরণ। সে হিসাবে আরও চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শেষে দেওয়া হবে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। সামনের চার মাসের আহরণে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিএফডিসির কর্মকর্তারা। এদিকে, কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ ও অবতরণের এই রেকর্ড গড়ার নেপথ্যে বিএফডিসির ‘অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা’কে প্রাধান্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিএফডিসির বিপণনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদ হতে আহরিত মাছ রাঙ্গামাটির তিনটি ও খাগড়াছড়ির একটিসহ চারটি বিপণণকেন্দ্রে শুল্কহার আদায় শেষে বিক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়ে থাকে। বিপণনকেন্দ্রে আসা মাছের সবই পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত সময়ে বিএফডিসির অসাধু কর্মীদের যোগসাজশে সব মাছের শুল্কহার পরিশোধ না করেই চালান করা হতো। শুল্কহার বা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চালান দেওয়া মাছের রেকর্ড জমা হতো না। যে কারণে বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় ভাটা দেখা যেত। কাপ্তাই হ্রদের মাছের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার এই অভিযোগ বহুআগে থেকেই রয়েছে। তবে সাম্প্রতিকসময়ে অসাধু কর্মীদের লাগাম টেনে ধরায় মাছ পরিবহন ও বাজারজাতকরণে শৃঙ্খলা ফিরেছে বলে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। অবতরণ ও শুল্কহার আদায় বৃদ্ধির কারণে হিসেবে শৃঙ্খলাকেই দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরছেন জেলেরা, ছবি: সারাবাংলা

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরছেন জেলেরা, ছবি: সারাবাংলা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। তবে চলতি বছর কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১২দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ আহরণ। আবার তিনমাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরও ১ মাস ১২দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। ৪ মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি জেলা শহরের প্রধান বিপণনকেন্দ্র ছাড়াও জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা এবং খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে উপ-বিপণনকেন্দ্র রয়েছে বিএফডিসির। চারটিকেন্দ্রে হ্রদের মাছ অবতরণ ও শুল্কহার আদায় শেষে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি মাছ আসে প্রধান বিপণনকেন্দ্রেই। স্থানীয় মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী ব্যতিত বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মহালছড়ি উপজেলা মিলে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে দেরিতে মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় মাছের আকার বেড়েছে। সুষম বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য সময় বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরছেন জেলেরা, ছবি: সারাবাংলা

কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরছেন জেলেরা, ছবি: সারাবাংলা

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, ‘প্রায় ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে প্রতি বছরই মাছের উৎপাদন কমার বিষয়টি শুনে আসছি। বিএফডিসি হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চলতি বছর মাছের ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণ) সময় সীমিত করে উৎপাদনে জোর দিয়েছি। হ্রদে গত অর্থ-বছরের সমপরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে চলতি বছরের প্রথম চারমাসেই। গত বছর এই সময়টাতে আমাদের মাছের দৈনিক অবতরণ ছিল ৭ থেকে ৮ টন, এবছর সেটি নূন্যতম ২০ টনে দাঁড়িয়েছে। এতে এটা ধরে নেওয়া যায় হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশাবাদী মাছের উৎপাদন বলবৎ থাকবে এবং জেলে-ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন।’

বিজ্ঞাপন

উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত আমরা মাছের অবতরণ সিস্টেমটাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছি। এই শৃঙ্খলা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি ভবিষ্যতেও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’

প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে প্রমত্তা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জল বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার ফলে সৃষ্ট হয় কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। বাঁধের পানির নিচে তলিয়ে যায় রাঙ্গামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রায় ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদ জলবিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদনে ভূমিকা রেখে আসছে দেশের অর্থনীতিতে। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এসময় হ্রদের মাছ বাজারজাতকরণ, স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ থাকে। হ্রদে নিষেধাজ্ঞা মানাতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি বিএফডিসির মনিটরিং দায়িত্ব পালন করে।

সারাবাংলা/পিডিএনআর/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন