বিজ্ঞাপন

ফাঁসি দিবসে সূর্যসেনকে শ্রদ্ধা

January 12, 2024 | 10:58 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের ৯০তম ফাঁসি দিবসে এ অগ্নিযুগের বিপ্লবীকে স্মরণ করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) নগরীর জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে সূর্য সেনের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংগঠকরা।

মাস্টারদা সূর্যসেনের ফাঁসি দিবসে তার আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, অমিতাভ সেন, শ্যামল লোধ ও জাবেদ চৌধুরী।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘মাস্টারদা ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে জীবন দিয়ে দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার প্রবল স্পৃহা সৃষ্টি করেছিলেন। সূর্যসেনের সংস্পর্শে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের মতো সংগ্রামী নারী চরিত্র সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, শুধু পুরুষরা নয়, নারীরাও লড়াই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়নের পক্ষে সভাপতি শাহ আলম , সহ-সভাপতি প্রীতম দাশ, রুপন ধর, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী, সহ-সম্পাদক শান্তনু চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ অভিজিৎ বড়ুয়া, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব দাশ, সমাজকল্যান সম্পাদক জুয়েল বড়ুয়া, ক্রীড়া সম্পাদক মিঠুন বিশ্বাস ও গৌতম কুমার বনিক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা সভাপতি ইমরান চৌধুরী, সহ সভাপতি অয়ন সেন গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক টিকলু কুমার দে, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনি কান্তি দেব ও সদস্য অরিত্র ভট্টাচার্য।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, ‘মাস্টারদার দেখানো পথে বিপ্লবী তৎপরতায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হয়েছে। যুদ্ধ করে পাকিস্তানি শাসকদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে এদেশের মুক্তিকামী জনগণ। কিন্তু আমাদের কাঙ্খিত গণতান্ত্রিক ও শোষণ-বৈষম্যহীন রাষ্ট্র আজও আমরা পাইনি। বরং ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করছে লুটেরা-দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী।’

বিজ্ঞাপন

মাস্টারদা সূর্যসেনের ৯০তম ফাঁসি দিবসে তাঁর আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ৩২ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী।

বাসদ জেলা শাখার নেতা আহমদ জসীম, সেলিম উদ্দিন, মুবিনুল হক সাব্বির, নাজিম উদ্দীন বাপ্পী, সেলিম উদ্দিন, পুলক দাস, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান, নাজমুল হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন ও সদস্য অরুপ মহাজন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্য সচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ, সদস্য আসমা আক্তার, জাহেদুন্নবী কনক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পুষ্পিতা নাথ ও মন্দিরা বিশ্বাস ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

চট্টগ্রাম কারাগারে সূর্য সেনের সঙ্গে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির মঞ্চেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ‘বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ’।

বিজ্ঞাপন

সংগঠনের সভাপতি অঞ্জন কান্তি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, অর্থ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য, বোয়ালখালী উপজেলা ৫ নম্বর সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য সুনীল দাশ, রহমত উল্লাহ, শিক্ষক লিটন চৌধুরী ও সজল শিকদার এ সময় বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে একই সূত্রে গাঁথা। বিপ্লবীদের পথ ধরে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ উপহার দিয়ে যান।’

‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপ্লবীদের কোন দিবস পালন না করায়, আমাদের ছেলেমেয়েরা বিপ্লবীদের গৌরবগাঁথা সোনালী দিনগুলোর কথা তেমন কিছুই জানে না।’

এ সময় বক্তারা প্রশাসনের কাছে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমিগুলোতে আগামী প্রজম্মের জন্য বিপ্লবী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর করার জন্য জোর দাবি জানান।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে মাস্টারদা সূর্যসেনের ফাঁসি দিবসে স্মরণ সভার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম— বৃহত্তর চট্টগ্রাম।

সংগঠনের সভাপতি আবদুল মালেক খানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম – বৃহত্তর চট্টগ্রামের সহ সভাপতি কামাল উদ্দিন, রাজীব চন্দ,আশেক, মাহমুদ মামুন, যুগ্ম সম্পাদক ইমরান মুন্না ও মুস্তাফিজুর রহমান।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ সূর্যসেন অমর অক্ষয় নাম। অবিভক্ত বাংলার মুক্তির বিপ্লবের ইতিহাসে আজও তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। স্বাধীনতা অর্জনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা এবং স্বাধীনতার জন্য অন্যদের সংগঠিত করে স্বাধীনতার জন‍্য সশস্ত্র প্রতিরোধের ইতিহাসে অনন্য নাম সূর্য সেন।’

উল্লেখ্য, সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির (বিপ্লবীদের গঠিত সংগঠন) চট্টগ্রাম শাখার সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন বিপ্লবী বাহিনী নিয়ে বৃটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বিপ্লবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করে অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র লুট করে। মাস্টাররদা সেখানেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর তিনি পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। সূর্য সেনকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার পুরস্কার ঘোষণা করে।

সরকার ১৯৩০ সালের ২৪ জুলাই চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার শুরু করে। ১৯৩২ সালের জুন মাসে মাস্টারদা প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্তকে ডিনামাইট দিয়ে চট্টগ্রাম কারাগার উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনায় ১১ জন বিপ্লবী গ্রেফতার হন। ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান, তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনার পর মাস্টারদা পটিয়ার গৈড়লা গ্রামে আত্মগোপন করেন। কিন্তু ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ধরা পড়েন। সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়াারি চট্টগ্রাম কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়।

সারাবাংলা/আইসি/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন