বিজ্ঞাপন

তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস হতে পারে স্বর্ণখাত

May 22, 2018 | 7:14 pm

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: অর্থনীতির অন্যতম খাত স্বর্ণের বাজারের সুষ্ঠু বিকাশে জাতীয় স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ গুছিয়ে এনেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই নীতিমালাটি অনুমোদন করা হবে এবং আগামী অর্থ বছরের বাজেটে এই খাত নিয়ে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে সারাবাংলার অনুসন্ধানে।

নীতিমালা ঘোষণা হলে দেশীয় স্বর্ণখাত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সদস্যরা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সারাবাংলাকে জানান, ‘স্বর্ণ নীতিমালা নিয়ে আগামীকাল বুধবার (২৩ মে) বসবো। আশা করছি খুব দ্রুত ভালো খবর জানাতে পারবো।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৭৪’ এর আওতায় ২০১৫-২০১৬ সালের আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী স্বর্ণের বাজার চলছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে স্বর্ণের বাজার পরিচালনা করা ব্যয়বহুল ও জটিল হওয়ায় কেউ বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮-এর নীতিগত অনুমোদন দিতে বুধবার (২৩ মে) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সরকারের এক ডজন মন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, প্রস্তাবিত স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এর মূল কাঠামোটি সরকারের আহবানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রস্তুত করে দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি, অর্থনীতি খাতের বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা গত ৫ মাসে ম্যারাথন বৈঠক করে প্রস্তাবিত স্বর্ণ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে। যা আগামীকালের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেতে পারে।

টিআইবির দেওয়া প্রস্তাবিত স্বর্ণ নীতিমালার কাঠামোতে বাংলাদেশের স্বর্ণখাতের ব্যবসা, ক্রয়-বিক্রয়, সরবরাহ, অভ্যন্তরীন চাহিদা, আমদানি-রফতানি, স্বর্ণমাণ, ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ আগারওয়াল সারাবাংলাকে মঙ্গলবার (২২ মে) দুপুরে বলেন, ‘স্বর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করতে গত ৫ মাস সরকারের সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে নীতিমালায় ১৫টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যার মধ্যে সরকার ১৪টি প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। নীতিমালাটি অনুমোদন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি ও রফতানি করতে পারবে।’

দিলীপ আগারওয়াল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স এবং আনুসঙ্গিক বিষয় ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সরাসরি স্বর্ণ আমদানি বা রপ্তানি করুক, এমন ধারা নীতিমালায় সংযোগ করা হোক। কিন্তু সরকার এটা মেনে নেয়নি। সরকার বলেছে যে ব্যাংকের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সরকারের এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আমরা চাই স্বর্ণ নীতিমালা হোক, কেন না দেশে প্রচুর স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘বৈধপথে বাজার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস হবে স্বর্ণখাত।’

কল্পনা জুয়েলার্সের কর্ণধার এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সদস্য কৈলাশ চন্দ্র বাড়ৈ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৪৭ বছরে স্বর্ণ নীতিমালা হয়নি। অথচ এই খাতটি রাজস্ব আয়ের একটি অন্যতম খাত। সম্প্রতি এই খাতের নীতিমালা করতে সরকার আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছে, যা ইতিবাচক। যতো দ্রুত এই নীতিমালা হবে, ততোই মঙ্গল।’

প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর সর্বনিন্ম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টন পর্যন্ত স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। যার মধ্যে তিন থেকে চার টন স্বর্ণ বৈধপথে আমদানি হয়, বাকিটা আসে অবৈধ পথে।

প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী, যারা স্বর্ণ আমদানি করতে চান তারা সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেবেন। আর যারা দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণ কিনে ব্যবসা করতে চান তারা শুধু লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনে রশিদ নেবেন। নীতিমালা হওয়ার পর বৈধ কাগজ না দেখাতে পারলে সংশ্লিষ্ট স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করবে সরকার।

অন্যদিকে খুচরা বাজারে স্বর্ণের অলংকার কিনতে ক্রেতাকে কোনো কাগজ-পত্র দেখাতে হবে না। কিন্তু স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে হবে।

খসড়া নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী, সারা বিশ্বে যত স্বর্ণালংকার হাতে তৈরি হয় তার মধ্যে ৮০ শতাংশ হয় ভারত এবং বাংলাদেশে। এর মধ্যে ভারত বিভিন্ন দেশে হাতে তৈরি স্বর্ণালংকার রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু নীতিমালার অভাবে বাংলাদেশ স্বর্ণালংকার রফতানি করতে পারছে না।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন