বিজ্ঞাপন

একসঙ্গে ইফতারে খুশি কারওয়ান বাজারের শ্রমিকরা

May 22, 2018 | 6:04 pm

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বরিশালের আমেনা বেগম। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। তিন সন্তানের এ জননী ৮ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে আটার রুটি বিক্রি করেন। তা দিয়েই সংসার চলছে। এরশাদ ভবনের উত্তরদিকের ফলের আড়তের সামনেই তার রুটির দোকান। রোজার দিনে আসরের নামাজের পর থেকেই রুটি বেলার কাজ শুরু হয় তার।

কী দিয়ে ইফতার করবেন এমন প্রশ্নে আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকেই রুটি দিয়ে ইফতার করে আসছি। আজকেও রুটি দিয়ে ইফতার করব। এখানে অনেকেই ইফতারের সময় রুটি খায়। আবার অনেকে ইফতারের পরেও।’

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইফতারের সময়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক রুটি দিয়ে ইফতার সারছেন। তাদের একজন মো. হাসেম। শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন একটি আড়তে।

সারাবাংলাকে তিনি বলছিলেন, গত দুদিন রুটি দিয়েই ইফতার করেছি। তবে আড়তেও ইফতারের ব্যবস্থা থাকে।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ফুটপাতের উপরে রাখা ভ্যানে বসে, কেউবা আড়তের ঘরে বসে, আবার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরীরা ভবনের নিচ তলার ফ্লোরে বসে ইফতার সারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেন আড়তদার নিজেরাই। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা নিজেরাই চাঁদা তুলে একসঙ্গে ইফতার করেন। ইফতারের সময় দেখা গেছে, কর্মব্যস্ত কারওয়ান বাজারেও নেমে আসে শুনসান নীরবতা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইফতার করতে পথচারীকেও ডেকে নেয় শ্রমিকেরা। একসঙ্গে তারা ইফতার করেন পারিবারিক আবহে। তবে সন্তান বা বাবা-মা কাছে না থাকায় অনেকের কণ্ঠে উঠে আসে অক্ষেপের সুরও।

বিজ্ঞাপন

তেমনই একজন নেছার আহমেদ (৪০)। ফলের আড়তে কাজ করেন তিনি। আড়ত থেকে ভ্যানে ফল তুলে দেয়াই তার কাজ।

সারাবাংলাকে নেছার বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে ইফতার করলে আনন্দ পাওয়া যায়। তবে বাবা-মাকে নিয়ে ইফতার করলে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা পাবো কই? সেটা তো আপনারাও বুঝেন! সংসার চালানোর জন্যই তো আজ এইখানে আছি।’

ডাব ও নারিকেলের আড়তে অন্তত ২০০ শ্রমিক একসঙ্গে ইফতার করেন। ব্যবস্থা আড়তদারদের। প্রতি আড়তদার ২০০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। সেখানকার সব শ্রমিকের জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে কোন শ্রমিক চাইলে তার পছন্দমত ইফতার সামগ্রীও নিয়ে আসতে পারেন। সেখানে ইফতার করেন এমন একজন ডাব বিক্রেতা কালাম।

তিনি জানান, তাদের ইফতারে ছোলা-মুড়ি থেকে শুরু হয়ে খেজুর, আনারস, তরমুজসহ প্রায় সব ধরনেরেই ফল থাকে। থাকে শরবতের ব্যবস্থাও। তবে একেক দিনের পদ একেক রকম।

বিজ্ঞাপন

আরেক শ্রমিক কবির তালুকদার বলেন, ‘সব শ্রমিক একসঙ্গে ইফতার করে খুব আনন্দ পাই। অনেকটা পরিবারের মতোই।’

পেঁয়াজের আড়তে কথা হয় আফজাল হোসেনের সঙ্গে। জানালেন তাদের ইফতারেও ছোলা-মুড়ি, বেগুনি-আলুর চপ, বাঙ্গী, তরমুজ, আনারস ও কলাসহ সবই থাকে।

সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব শ্রমিক একসঙ্গে ইফতার করার মজাই আলাদা। তবে শ্রমিকদের সবাই রোজা রাখেন না। অনেক পরিশ্রম করায় সবার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবও হয় না।’

ফলের আড়তে কাজ করেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ইফতার নেওয়ার জন্য আগে অনেকেই লাইন ধরতো। এখন ডাকলেও আসে না। সবাই নিজেদের মতো করে ইফতার খায়।’

ভ্যানের উপরে ইফতার সাজাচ্ছিলেন ভ্যান চালক নূর ইসলাম। ৪ থেকে ৫ জন তারা একসঙ্গে ইফতার করছিলেন। সারাবাংলাকে নূর বলেন, ‘নিজেরা ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দিয়ে আমরা একসঙ্গে ইফতারি করি। এতেই অনেক আনন্দ।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন