বিজ্ঞাপন

নতুন শিক্ষা কারিকুলামকে ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান বিএনপির

January 25, 2024 | 5:01 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নতুন শিক্ষা কারিকুলামকে বিজ্ঞানবিরোধী, নীতি-আদর্শহীন, অনৈতিক ও মেধাহীন আখ্যা দিয়ে তা ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখলের পর শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষায় নকলের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ছিল বিগত বছরগুলোতে ‘টকস অব দ্য ডিকেট’। এবার যোগ হল নতুন শিক্ষানীতি এবং দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধবিরোধী কারিকুলাম। দেশবিরোধী ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী নতুন এ শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।’

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে নতুন প্রজন্মকে তাবেদার বানানো যায়। সর্বজনীন নয়, বরং কোনো একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে। এই শিক্ষা সিলেবাস জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সেটা কার্যত ব্যর্থ। বর্তমানে আবার নতুন শিক্ষানীতি ও কারিকুলামের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে, ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রয়াসকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা চালু করে কিশোর মনকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, যোগ্য, নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে তারা বারবার শিক্ষাখাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষ শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কিত।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত শিক্ষা কারিকুলামে বিজ্ঞান শিক্ষার মারত্মক সংকোচন দৃশ্যমান। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি মিলিয়ে একটা মিক্সার থাকবে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে সবার পড়ার জন্য, আর কোনো অপশন থাকবে না। কিন্তু ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজির মতো পিওর সায়েন্স মাধ্যমিক লেভেল থেকে তুলে দিয়ে কিশোর-তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পথে অন্তরায় তৈরি করা হচ্ছে। এই কারিকুলাম বাস্তবায়নের ফলে বৈশ্বিক মানদণ্ডে পেশা ভিত্তিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হবে।’

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘অনলাইন নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির একটি বড় অবদান। কিন্তু প্রযুক্তির ওপর অতিনির্ভরতা প্রযুক্তি দানবে পরিণত হতে পারে। অনলাইন ব্যবহার সীমিত করার পরিবর্তে ব্যাপক করা হয়েছে। কোমলপ্রাণ শিশু-কিশোররা বিভিন্ন ডিভাইস (মোবাইল, ট্যাব) ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিষিদ্ধ গেমস, অনলাইন জুয়া, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, পর্ন সাইটসহ নানা অপকর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে কিশোর গ্যাং যারা ছিনতাই, খুনে জড়িয়ে পড়ছে। তরুণীদের হয়রানি, ইভটিজিং, কিশোর-কিশোরীর অবৈধ সম্পর্ক, নেশা, মাদকসহ নানা কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও আপদকালীন শিক্ষা কার্যক্রমে অনলাইনের ব্যবহার হতে পারে, তাও সেটা ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে। কিন্তু প্রাইমারী ও হাইস্কুলে অনলাইন নির্ভরতা শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ায় ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। অতিমাত্রায় অনলাইন নির্ভরতায় পড়াশোনা ইন্টারঅ্যাক্টিভ হবে না। বয়ো:বৃদ্ধি ও উচ্চ শিক্ষার সমান্তরালে অনলাইন ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি করা যায়। অতএব অনলাইন নির্ভর এই কারিকুলাম অভিভাবকসহ সচেতন মহল কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছে না। আমরা চাই, শিশু-কিশোরদের অনলাইন নির্ভরতা কমিয়ে পাঠ্যবই নির্ভর আগামী প্রজন্ম।’

রিজভী বলেন, ‘এই কারিকুলাম একমুখী শিক্ষা হওয়ার ফলে বহুমুখী শিক্ষা হারিয়ে যাবে। যে সরকারের আমলে খাতায় না লিখেও পাশ করিয়ে দেওয়া হয়, সেই সরকারের নীতিতে শিক্ষার গুণগত মান কখনওই উন্নত হবে না। আবার এই কারিকুলামের কারণে বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রজন্ম তৈরি বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশে বেকারত্বের সৃষ্টি হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন