বিজ্ঞাপন

স্কুলে কর্মচারী নিয়োগে অর্ধকোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

January 26, 2024 | 7:15 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়াহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আর এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন চাকরি প্রত্যাশী, বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।

অভিযোগে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়াহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তিনটি পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। আবেদন করেন ৩৭ জন। বিধি মোতাবেক ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা।

কিন্তু তা করতে না পারায় আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। প্রথম বিজ্ঞপ্তির সত্যতা মিললেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তির কোনো সত্যতা মেলেনি। নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ করেতে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই প্রকাশ পায় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তদের তালিকা। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের জন্য আবেদন করেন জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগকারী মো. বাবুল হোসেন বলেন, আমি জানতে পারি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নাসিম, অফিস সহায়ক পদে মাসুদ রানা এবং আয়া পদে আমেনাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে জন্য নিয়োগ পরীক্ষার দুইদিন আগে ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতসহ ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করি। কিন্তু আবেদন দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পেরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করি। পরে স্কুলের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন অনেক টাকার বিষয় লোভ দেখিয়ে আমার কাছে কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে তারা অনেক টাকার বিনিময়ে তিনজনকে নিয়োগ দেয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের নূন্যতম যোগ্যতা আছে বলে মনে হয় না।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির টিআর সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মোটা অংকের বিনিময়ে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনটি পদে প্রায় অর্ধ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের কবে থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও কেউ জানে না। অনিয়ম ঢাকতে আগের হাজিরা রেজিস্ট্রার খাতা বাদ দিয়ে নতুন করে হাজিরা রেজিস্ট্রার খাতা তৈরি করেছেন।

নিয়োগ পরীক্ষা এবং নিয়োগের বিষয় কিছুই বলতে পারেনি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব অপারেটর নাসিম এবং আয়া আমেনা বেগম।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে বিল হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

কবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শোনার দরকার নেই, এটা বলব না। সভাপতি আমাকে বলতে নিষেধ করেছেন।

হাজিরা রেজিস্ট্রার খাতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে বলেন, এগুলো রাণীশংকৈল উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কাছে আছে।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকাবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, বিধি মোতাবেক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন নিয়োগ কমিটির কেউ না, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির কোনো অপশন নেই, সে জন্য সরাসরি পদক্ষেপ নিতে গেলে আইনগত জটিলতা রয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছিল।

ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি জ্ঞাত নই, তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন