বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসের জামিন, আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ

January 28, 2024 | 1:07 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের নথি তলব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায়ের ড. ইউনূসসহ চারজন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। একই সঙ্গে আজ তারা জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

পরে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং চারজনকে জামিন দেন।

আজ রোববার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ চার আসামির পক্ষে আপিল দায়ের করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ ও মো. ইব্রাহিম।

বিজ্ঞাপন

আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ছয় মাসের সাজার রায় স্থগিত করেছেন আদালত। পাশাপাশি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের নথি (ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত) নথি তলব করেছেন আদালত।

এর আগে ড. ইউনূসসহ চার বিবাদী আজ সকাল পৌনে ১১টায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসেন।

গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এ সময় মামলার ড. ইউনূস ব্যতীত অপর তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

বিজ্ঞাপন

মামলায় গত ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।

পরে গত ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের চার কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। গত ২৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১ জানুয়ারি ধার্য করেন আদালত। আর ধার্যকৃত তারিখে (১ জানুয়ারি) রায় ঘোষণা করেন আদালত।

মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে, শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।

মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।

অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়। আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছিল, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন