বিজ্ঞাপন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের খোলাচিঠি কিসের ইঙ্গিত?

February 2, 2024 | 8:21 pm

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

সম্প্রতি গত ৩০ জানুয়ারি আবারও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ীসহ ২৪২ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। সেইসঙ্গে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন হিসেবে চিঠিটি প্রকাশিত হয়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাকে ঘিরে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠালেন বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রশ্ন হচ্ছে শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী, কর ফাঁকিবাজ এবং সাজাপ্রাপ্ত একজন অপরাধীর পক্ষ নিয়ে বিশ্বনেতারা কেন বারবার চিঠি লিখে স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করছেন? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথেই বা তাদের কি এমন সম্পর্ক রয়েছে? আমরা একটু বিবেচনা করলেই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাদের চোখে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়বে। বিশ্বনেতাদের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রয়েছে দীর্ঘদিনের গোপন আঁতাত। ঐসব নেতাদের পিছনে বিভিন্ন সময়ে অর্থ অথবা শ্রম দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেমন পাশে ছিলেন তেমনি তারা এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর নামে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে বারবার লিপ্ত হচ্ছেন। এমনকি এটাও সত্য যে এই বিশ্বনেতাদের সাথে আঁতাত করে অর্থনীতির একজন লোক সুদের ব্যবসা করে গরীব মানুষকে সর্বস্বান্ত করে শান্তির ওপর নোবেল পুরষ্কার পেলেন। মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে তার শান্তি পুরস্কারের পেছনে নরওয়ের টেলিনুর ও আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের লবিং এর নাম খুব বেশি করে এসেছে। এছাড়া নরওয়ের নোবেল শান্তি পুরস্কারটি অনেকাংশে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করা হয় বলে অনেকে মনে করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা নিয়ে বর্তমানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং বারাক ওবামাসহ বিশ্বনেতাদের এমন ভূমিকা কি তাদের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘদিনের আঁতাতের ইঙ্গিত দিচ্ছেনা? শান্তি পুরস্কার কাদের দেওয়া হবে সে সম্পর্কে স্বয়ং আলফ্রেড নোবেল নিজেই তার উইলে উল্লেখ করে গেছেন। তিনি ১৮৯৫ সালে তার উইলে লিখেছেন যারা শান্তির জন্য মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ ভালো কাজ করে, মানবতাকে সর্বাধিক উপকার করবে, যারা জনগণের ভ্রাতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি বা সেরা কাজ করবে, এছাড়া স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি কিংবা হ্রাস ও শান্তি কংগ্রেস গঠন ও প্রচারে ভূমিকা রাখবে তাদের জন্য যেন শান্তি পুরস্কার বিতরন করা হয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মকাণ্ড কোন দিক দিয়ে ঐ শ্রেণিতে পড়ে? না কোনোভাবেই তা পড়েন না। অর্থনীতির একজন লোক হয়ে শান্তির ওপর নোভেল পাওয়াটাই বিশ্বনেতাদের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দীর্ঘদিনের আঁতাত সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে মজার বিষয় হচ্ছে, বিবৃতির নামে বিশ্বনেতাদের চিঠি মূলত একটি বিজ্ঞাপন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাকা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বিশ্বনেতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে বিজ্ঞাপন করিয়েছে এবং এখনো করছে। সম্প্রতি গত ৩০ জানুয়ারি মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে বিবৃতির নামে যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে তার পিছনে অর্থের যোগান দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে। এভাবে অর্থের যোগান দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে তার অপরাধের সাজা থেকে রক্ষা করতে বা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বিশ্বনেতাদের দিয়ে বিবৃতির নামে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন করে যাচ্ছে। নিজে অর্থ খরচ করে বিশ্বনেতা এবং আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বারবার বিবৃতির নামে এমন বিজ্ঞাপন করে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা এতোটা সহজ না।

কিছুদিন পরপর বিশ্বনেতাদের বিবৃতির নামে এমন সব বিজ্ঞাপন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং হুমকির নামান্তর। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান যার আলোকে বাংলাদেশ সবসময়ই পরিচালিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আইন সবার জন্য সমান। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয় সে যেই হোক। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। অপরাধী যেই হোক বাংলাদেশের আইনে তার সাজা হবে এবং সে নির্দোষ হলে অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দোষী নাকি নির্দোষ তা বিচার করেছে আদালত এবং সে যদি নির্দোষ হতো তাহলে সে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতো। সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে অপরাধী হিসেবে তার সাজা হয়েছে। এর বাহিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং এই ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কতটুকু ঠিক এটা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন করে স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন বিচার বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত রায়ের ওপর এমন সরাসরি হস্তক্ষেপ করাটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী কাজ, যা বারবার বিশ্বনেতাদের করাটা কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যেসব বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করার পায়তারা করছে তারা সকলেই একেকজন আইন প্রণেতা। একেকজন আইন প্রণেতা হয়ে আইন ভঙ্গের কথা বলা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা আমার জানা নেই। তাদের এ ধরনের অপপ্রচেষ্টা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আইন প্রণেতা হয়ে আইন ভঙ্গের এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রচেষ্টা সরাসরি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ওপর হুমকির সমতুল্য যা কোনোভাবেই বিশ্বনেতাদের করা উচিত হচ্ছে না। বরং তাদের উচিত একেকজন আইন প্রণেতা হিসেবে একটি স্বাধীন দেশের সংবিধান এবং তার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত বিচার ব্যবস্থার সম্মান পোষণ করা।

তবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক একটা বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতার শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরোধিতা করে আসছে। বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার অপপ্রচেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর স্বার্থবিরোধী কোনো কথা বললেই তারা বিভিন্নভাবে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হানার অপপ্রচেষ্টা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সাথে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মতো অপরাজনীতি করে আসছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতির ঘোষণা, বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীদের উস্কানি দিয়ে শৃঙ্খলা নষ্টের অপপ্রচেষ্টা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে স্বাধীন বিচার বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এই সবগুলোই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ যা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শেষ হবার নয়। বরং তা চলতেই থাকবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে এতো প্রচেষ্টার পরেও ব্যর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আবার নতুন করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এখনো চলমান রয়েছে। স্বাধীন দেশের সংবিধানের আলোকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট সম্প্রতি ২৪২ বিশ্বনেতার চিঠি কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের নামান্তর।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বনেতাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশ কারো ইশারায় স্বাধীন হয়নি। শহীদের বুকের তাজা রক্তের ফসল আমাদের এই বাংলাদেশ। কারোও রক্তচক্ষুকে বাংলাদেশ পরোয়া করেনা। সব ধরনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ প্রাণ ও মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে বিবৃতির নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত কোনোভাবেই সহ্য করা হবেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বনেতাদের উচিত এমন সব অপপ্রচেষ্টা বন্ধ করে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া। এর বিপরীত কিছু হলে বাংলাদেশের সাহসী জনগণ তা কখনোই মেনে নিবেনা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জনগণ সকল অন্যায়-অত্যাচারে বিরুদ্ধে যেমন ঝাপিয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ বর্তমানে বাংলাদেশকে নিয়ে করা সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উচিত জবাব সঠিক সময়ে অতীতেও দিয়েছে, বর্তমানেও দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে। এমতাবস্থায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বনেতাদের উচিত বিবৃতির নামে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বন্ধ করা। কারণ তাদের এই কর্মকান্ড নিঃসন্দেহে স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও হুমকির ইঙ্গিত যা কোনোভাবেই বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিবেনা।

বিজ্ঞাপন

লেখক: উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন