বিজ্ঞাপন

বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়িয়েছে মেট্রোরেল

February 4, 2024 | 10:23 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মেট্রোরেলের প্রভাব পড়েছে বইমেলাতেও। এবার অমর একুশে বইমেলার প্রথম দিন থেকেই লেখক, পাঠক ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি। মেলার চতুর্থ দিনেই পাঠক ও দর্শনার্থীদের যে উপস্থিতি দেখা গেছে, সাধারণত এই সময়ে এমনটি দেখা যায় না বলেই জানাচ্ছেন প্রকাশক-লেখক-পাঠকরা। তারা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে এবার রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরার বাসিন্দাদের জন্যও বইমেলায় আসা সহজ হয়েছে। এর প্রভাবেই শুরু থেকেই বইমেলায় বেড়েছে ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মেলার চতুর্থ দিনেও কোনো কোনো প্রকাশনীতে একটিও নতুন বই আসেনি। আবার কোনো কোনো প্রকাশনীতে এরই মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি নতুন বই চলে এসেছে। তবে সব প্রকাশকই বলছেন, বইয়ের বিক্রি সেই অর্থে এখনো শুরু হয়নি। খুব অল্পসংখ্যক পাঠক-দর্শনার্থীই বই কিনছেন এখন। তাদের হাতে অবশ্য ব্যাগভর্তি বই-ই দেখা গেছে বইমেলা প্রাঙ্গণে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বিভিন্ন প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রকাশক ও লেখকরা বলছেন, এবারের বইমেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টল বিন্যাস নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। প্রতিটি বড় প্যাভিলিয়নের আশপাশে জায়গা পেয়েছে ছোট ছোট প্রকাশনীর স্টল। অন্য কয়েকবারের মতো সবগুলো প্যাভিলিয়নকে একসঙ্গে এবার রাখা হয়নি। পাঠক ও দর্শনার্থীদের হাঁটার জন্যেও রয়েছে পর্যাপ্ত স্থান। সব মিলিয়ে এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটাই পরিপক্ক।

আরও পড়ুন- বইমেলার ৪র্থ দিনে নতুন বই এসেছে ৬৬টি

বিজ্ঞাপন

অন্বেষা প্রকাশনের প্রকাশক মো. শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম চার দিনে আমাদের ২৫টি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। প্রতি বইমেলায় আমরা ৬০ থেকে ৭০টি নতুন বই প্রকাশ করি। এবারের বইমেলাতেও আমাদের একই রকম লক্ষ্য রয়েছে। বলা যায় এর প্রায় অর্ধেক বই-ই চলে এসেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসছে।

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, আমরা বিষয় বৈচিত্র্যের ওপর জোর দিই। আমাদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গল্প-উপন্যাস যেমন থাকে, প্রবন্ধ-গবেষণাও থাকে। সব ধরনের বই-ই থাকে। এবার মোটিভেশনাল বইয়ের দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।

এবারের মেলার বিশেষ কোনো দিক রয়েছে কি না— জানতে চাইলে এই প্রকাশক বলেন, ‘অন্য বছর প্রথম দিকে কিছু পাঠক এলেও ক্রেতা থাকত না। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, প্রথম দিকে যারা আসছেন তারাও বই কিনছেন। মেট্রোরেলের বদেলৌতে প্রথম দিন থেকেই এবার পাঠক বেশি। আমরা আশা করছি দিন যত যাবে পাঠক ও ক্রেতা তত বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

সাহিত্য প্রকাশের স্টল ম্যানেজার রাকিবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ বই মুক্তিযুদ্ধের ওপর। এ বছর এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো নতুন বই মেলায় আসেনি। ছাপার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ১৫ থেকে ২০টি নতুন বই।’

বইমেলার প্রবেশপথে তল্লাশি। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কারণে এ বছর প্রথম দিন থেকেই মেলায় পাঠক ও দর্শনার্থী আসছে। অন্য বছরের তুলনায় মেলায় এবার পাঠক ও দর্শনার্থী বেশি। তবে বইয়ের ক্রেতা কম। মেলায় ২০ জন দর্শনার্থী থাকলে একজনরে হাতেও বই নেই। অনেকেই বইয়ের সঙ্গে সেলফি তুলেও চলে যায়। তবে আমরা বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে বেশ আশাবাদী। সামনের দিনে ক্রেতা বাড়বে।

নওরোজ কিতাবিস্তানের স্বত্বাধিকারী মনজুর খান চৌধুরী চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম চার দিনে আমাদের নতুন ছয়টি বই এসেছে। সামনে আরও কিছু বই আছে। ১৫ তারিখের মধ্যে সবগুলো বই চলে আসবে। এবার ১৫ থেকে ১৬টি নতুন বই প্রকাশ হবে।

কোন ধরনের বইয়ের পাঠক বা বিক্রি বেশি— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের পাঠক তো বিভিন্ন ধরনের। একেক পাঠকের রুচি একেক রকম। আমার এখানে সবচেয়ে ভালো চলছে ভ্রমণ কাহিনী। ‘মিশন এভারেস্ট বেসক্যাম্প’ বইটি ভালো যাচ্ছে। কিছু কবিতার বই আছে, সেগুলোও ভালো যাচ্ছে। পাঠকরা আসছেন। কিন্তু এখনো কেনাকাটা ওইভাবে শুরু করেননি। বই দেখছেন, পছন্দ করে রাখছেন। পরে কখনো বইগুলো কিনবেন।

বিজ্ঞাপন

মেলায় কোনো ভিন্নতা রয়েছে কি না— জানতে চাইলে এই প্রকাশক বলেন, এবার স্টল বিন্যাস অন্যবারের চেয়ে একটু ভালো। মেলার পরিধি একটু কমানো হয়েছে। তাতে পাঠকদের হাঁটার পরিমাণ কমছে। পাঠক ক্লান্ত হচ্ছে কম। আমরা সব পাঠককে পাচ্ছি। আগে যেমন বিচ্ছন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্টলগুলো থাকতে, পাঠকরা এক স্টলে গেলে আরেক স্টলে যাওয়ার আগ্রহবোধ করতেন না, সেই বিবেচনায় স্টল বিন্যাসটি এবার আমার কাছে ভালো লেগেছে।

বইমেলায় হাজির এক ক্ষুদে পাঠক। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর ২৫০টি বই আসবে। প্রথম চার দিনে আমাদের ১২ থেকে ১৩টি নতুন বই এসেছে। পাঠক সব ধরনের বই-ই কিনছে। নতুন লেখকদের বই নিয়েও পাঠকদের আগ্রহ রয়েছে। তবে উপন্যাসের বিক্রি বেশি।

সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলে কবি রাকিবুল হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলায় এবার ভিন্ন কিছু নেই। তবে জায়গা কমেছে, একটু কম হাঁটতে হচ্ছে। আগে এক প্রকাশনী থেকে আরেক প্রকাশনীতে পৌঁছাতে অনেকটা সময় লাগত, এবার তেমন হচ্ছে না। এবার মনে হচ্ছে সবাই খুব কাছাকাছি। কারণ স্টলের স্পেস কমেছে, জায়গা কমেছে এবং দূরত্ব কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘রাস্তার ওপাশে অর্থাৎ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এখন আর কেউ যায় না। সেখানেও কিছু স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেটি ওই স্টলগুলোর জন্যে দুর্ভাগ্যের। আমরা মনে হয় মেলার ভেতরে লিটল ম্যাগ চত্বরটি এখন আর না দেওয়া উচিত। কারণ এর কোনো প্রভাব এখন আর আমরা আলাদা করে পাই না। এই চত্বরটি দিয়ে শুধুই এখন জায়গা নষ্ট করা হচ্ছে।’

মিরপুর থেকে এই কবি মেট্রোরেলে করেই মেলায় এসেছেন। কবি বলেন, ‘মিরপুরে আমার একটা মিটিং ছিল। মিটিং করে মাত্র ১৭ মিনিটে মেলায় চলে এসেছি। মিটিং শেষে তখন ৬টা বাজে। মেট্রো না থাকলে আমি বইমেলায় আসার কথা চিন্তাই করতাম না। মেট্রোরেল না হলে এখানে আসতে আসতে মেলা-ই শেষ হয়ে যেত। এখন মিরপুর ও উত্তরা থেকে অনেকেই মেট্রোরেলে করে বইমেলায় আসছেন। আগে সেটি সেভাবে সম্ভব ছিল না। মেলায় আসতে হলে কয়েক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হতো। এখন ওদিককার মানুষ ৭টায় বের হয়েও মেলায় আসতে পারছেন।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন