বিজ্ঞাপন

গণভবনের বর্ধিত সভায় আসবে বিশেষ বার্তা

February 8, 2024 | 11:19 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে ফুরেফুরে মেজাজে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে আপন ঘরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের অস্বস্তিও আছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে। তাই এবার আপন ঘরের ভুল বোঝাবুঝি এবং দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করতে গণভবনে বর্ধিত সভা ডেকেছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার কঠোর বার্তা ও দিক নির্দেশনা দিতে পারেন দলের সভাপতি।

বিজ্ঞাপন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া এবারই প্রথম ৬২ জন স্বতন্ত্র থেকে জয়লাভ করেন, যাদের আবার প্রায় সবাই-ই আওয়ামী লীগ নেতা। আর জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। এর বাইরে দুটি করে আসনে আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি জয়লাভ করে এবং কল্যাণ পার্টি জয় পায় একটি আসনে। ওই সময় নওগাঁ-২ আসনের এক প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

জানা গেছে, বিএনপিসহ তাদের সমমনা শরিক ও মিত্রদের নির্বাচন বয়কটের কারণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে নির্বাচনের মাঠে নতুন মডেল ও কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। দলের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয় দলটি। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কৌশল নেয়। এতে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরাসহ তাদের কর্মী-সমর্থকরাও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ফলে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। এমনকি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিং-লবিং এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ফাটল সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও নির্বাচনি সহিংসতাও ঘটে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫৮ জন নেতা দল মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এসব আসনে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোটের পরও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের মধ্যে উন্মুক্ত প্রার্থিতার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। এতে দলের তৃণমূলে বিভেদ-দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আর এগুলো নিরসনে উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই বৈঠকে সারাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজারের বেশি দলীয় নেতা অংশ নেবেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্যরা, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া সভায় সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়ররা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন।

অপরদিকে, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ। দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সবস্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের।

এ লক্ষ্যে সরকার গঠন করে সাধারণ মানুষের ক্রয় সক্ষমতা মাথায় রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু নির্বাচনের পর কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতা, খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটে। এতে দলের হাইকমান্ড দ্রুত এসব সমস্যা নিরসনে সাংগঠনিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর অংশ হিসেবেই শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের উপস্থিতিতে গণভবনে এক বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে দ্বাদশ নির্বাচন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মাননীয় নেত্রী দেশে নির্বাচনের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সেই নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছুটা হলেও ভুল বোঝাবুঝি ও বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আমরা কিন্তু এই বিষয়গুলো নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুধু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বা নৌকার প্রার্থীকে ডাকেননি; ডেকেছেন নৌকার পাশাপাশি যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন তাদেরকেও। তিনি জেলা আওয়ামী লীগকে ডেকেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগকে ডেকেছেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র/পৌরসভার মেয়রকে ডেকেছেন। অর্থাৎ এই সভাটি আমাদের মহামিলন মেলায় পরিণত করবে। অভ্যন্তরীণ যত ভুল বোঝাবুঝি থাকুক না কেন, সেই ভুল বোঝাবুঝিকে দূর করার জন্য নেত্রী একটি বার্তা দেবেন। কারণ, তার লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দলকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সেজন্য দল ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।’

আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও বার্তা দিতে পারেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন প্রতীকবিহীন করে দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও মাননীয় নেত্রী দিকনির্দেশনা দিবেন। নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ভোটারের অংশগ্রহণমূলক করার জন্য অবশ্যই তিনি বার্তা দেবেন।’

দলের দফতর সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে জানা যায়, সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ৬২টি জেলা, ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। দলের সাংগঠনিক উপজেলার সংখ্যা ৬৬২টি। সাংগঠনিক এসব উপজেলার মধ্যে দেশের ৪৯৫টি উপজেলাসহ থানা, জেলা সদরের পৌরসভা কমিটি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে বর্তমানে নেতা আছেন ৭৯ জন। ৫১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন ৪৮ জন। আর সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগ রয়েছে। আর দলীয় সংসদ সদস্য ২২২ জন এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন ৬২ জন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন