বিজ্ঞাপন

‘কিন্ডারগার্টেন-নূরানী নয়, সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান’

February 17, 2024 | 9:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরো : কিন্ডারগার্টেন কিংবা নূরানী মাদরাসার পরিবর্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষাজীবন শুরু করার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর কে সি দে আর রোডে সাংগঠনিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী একথা বলেন। এদিন নিজ নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া-চকবাজার) আসনের আওতাধীন সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটি শিশুকে কীভাবে একজন উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, সেটার জন্য তার অভিভাবক বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মায়েদের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের সন্তানের জন্য পরিকল্পনা করবেন কীভাবে শিক্ষাদীক্ষায়, প্রশিক্ষণে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। শিশুকাল থেকে সন্তানকে বিভিন্ন ধরনের কাজে লাগান।’

‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে লাগান। ঘর কীভাবে পরিষ্কার রাখতে হয়, সেটা তাকে শেখান। ছেলেরা রান্না করছে, এটা দেখে অনেকে হাসাহাসি করে। এটা হাসাহাসির বিষয় নয়। রান্নাবান্নাও কিন্তু সৃজনশীল বিষয়, যদি সেটা সুন্দরভাবে রপ্ত করা যায়। সবাই তো ডাক্তার আর ব্যারিস্টার হবে না, যার যে বিষয়ে আগ্রহ আর দক্ষতা, তাকে সেভাবেই গড়ে ওঠার সুযোগ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘অনেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের না পড়িয়ে পকেটের টাকা খরচ করে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মানেই সেখানে কোনো পড়ালেখা হয় না, এমন মানসিকতা অনেকের আছে। আমি মায়েদের বলব, আপনারা সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেন। সেখানে এখন চমৎকার অবকাঠামো আছে, শিক্ষার মানও অনেক উন্নত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আবার দেখা যাচ্ছে, বিদ্যালয়ের আদলে নূরানি মাদরাসা নামে কিছু প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। ওখানে পড়ালে ছেলেমেয়ের কিন্তু কোনো গতি হবে না। ধর্মীয় শিক্ষা মসজিদ, মক্তবে অবশ্যই দিতে পারেন। কিন্তু স্কুল বন্ধ করে দিয়ে তাকে নূরানি মাদরাসায় পাঠাবেন মানে তার ভবিষ্যতটা অন্ধকার করে দিলেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এ কাজ আপনারা করবেন না।’

সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠালে সরকার মায়েদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়ালে প্রত্যেক শিশুর জন্য কিন্তু মায়ের মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে টাকা চলে যায়। সরকার উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। মায়ের কাছেই টাকাটা পাঠানো হয় যাতে মা সন্তানের জন্য দুধ-ডিম কিনতে পারেন। অর্থাৎ সরকারের বরাদ্দের একটা অংশ কিন্তু মায়েরা পাচ্ছেন। তাহলে কেন আপনারা সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেবেন না ? কেন কিন্ডারগার্টেন কিংবা নূরানী মাদরাসায় দেবেন ?’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান। নিজেরা টাকা পাবেন, সন্তানও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা পাবে। স্কুলে সন্তান পড়বে, খেলাধুলা করবে এবং নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। তবে তার মধ্যে এমন মানসিকতা যেন না হয়, স্কুল পাস করেছি তাই আমি এখন সাহেব হয়ে গেছি।’

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না থাকলে দেশ আফগানিস্তান হয়ে যেত মন্তব্য করে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশকে খালেদা জিয়া এবং তার কুপুত্র তারেক রহমান আফগানিস্তান বানাতে চেয়েছিল। আফগানিস্তান মানে, সেখানে এখন মহিলারা ঘরের বাইরে যেতে পারে না, চাকরি-বাকরি করতে পারে না, স্কুলেও যেতে পারে না। পর্দা সামাজিকভাবে নারীরা পরবে ঠিক আছে, কিন্তু মহিলারা ঘরের বাইরে যেতে পারে না, মহিলাদের কোনো বিষয়ে কিছু করার কোনো ক্ষমতা নাই, বলার ক্ষমতাও নাই।’

বাংলাদেশের নারীসমাজের সামনে এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগ কিন্তু নারী। সুতরাং মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিজেদেরও বুঝতে এবং নারীসমাজকেও বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তান হয়ে যায় তাহলে কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যদি ঘরে বসে থাকে, তাহলে দেশ কি চলবে? নারীদের সক্ষমতা পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। একজন পুরুষ সন্তান জন্ম দিতে পারে না, কিন্তু একজন নারী পারে, সেটাও নারীর শক্তি।’

‘আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীসমাজ যে ভূমিকা রাখছে, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যে অর্জন সেটার বিশাল অবদান নারীসমাজের। এখন তারা যদি গার্মেন্টসে কাজ না করতো, ঘরে বসে শুধু ভাত রান্না করতো আর ঘর থেকে বের হতে না পারতো, তাহলে বাংলাদেশ আইয়ামে জাহেলিয়াতের ‍যুগে ফিরে যেত। আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময় কন্যাশিশুর জন্ম হলে তাদের মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো, কারণ তখন মনে করা হতো কন্যাশিশুর দরকার নেই। বাংলাদেশ আইয়ামে জাহেলিয়াতে পরিণত হতো, যদি শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় না থাকতো, না টিকতো আর মানুষের জন্য কাজ না করতো।’

বিজ্ঞাপন

নওফেল বলেন, ‘দেশ নিয়ে, সরকার নিয়ে অনেক অপপ্রচার দেশে-বিদেশে চলছে। এদেশের নারীদের বলা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এদেশে কেউ নামাজ-কালাম পড়তে পারবে না, দেশের সব মসজিদ মন্দির হয়ে যাবে। কত উল্টাপাল্টা কথা! কিন্তু আজ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই শান্তিমতো থাকতে পারছে, সাহসের সাথে থাকতে পারছে।’

‘যদি আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র না চান, তাহলে এদেশের নারী সমাজকে বলতে হবে যে, শেখ হাসিনা একা নারীদের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছেন সেটা আর কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়, সেই মানসিকতাও কারও মধ্যে আমরা দেখি না। একজন শেখ হাসিনা, তিনি শুধু আমাদের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি যদি জঙ্গিবাদ দমন না করতেন, তাহলে এই জঙ্গিরা দেশের নারীসমাজকে ঘরে ঢুকিয়ে দিত।’

নারীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা কোনো সমাজ প্রত্যাশিত নয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে ফেসবুকে লিখেন, তালেবানদের আমলে আফগানিস্তান খুব ভালো আছে। এগুলো মিথ্যা কথা, বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই। আফগানিস্তানে তালেবান নারীদের সমাজ থেকে আলাদা করে দিয়েছে।’

নওফেল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে এ ধরনের সমাজ চাই না। আজ দেশে নারীরা বিমান চালাচ্ছে। নারীরা বিমান চালানোর সাহস কোথায় পেয়েছে, কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি দেশ চালাতে পারে, তাহলে একজন নারী কেন বিমান চালাতে পারবে না- এভাবে সাহসটা পেয়েছে। কত নারী আজ আমাদের দেশে ডাক্তার হয়েছে, শিক্ষক হয়েছে, প্রকৌশলী হয়েছে, গার্মেন্টসে কাজ করছে, হোটেলে কাজ করছে, দোকানে কাজ করছে- এগুলো সব সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সারাবিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি সাধারণ মানুষের জন্য যতটা কোমল হৃদয়ের, কিন্তু খারাপ মানুষ যারা তাকে সরিয়ে বাংলাদেশটাকে দখল করতে চেয়েছিল, তাদের জন্য ঠিক ততটুকুই শক্ত। পৃথিবীর অনেক দেশ অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার কুলাঙ্গার সন্তান অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে আছে। আজ আমাদের মেয়েরা, মায়েরা, বোনেরা ঘর থেকে বের হতে পারছে, কিছু আয় করার সুযোগ পাচ্ছে, রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে, এর কিছুই সম্ভব হতো না যদি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় না থাকতেন।’

চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর নীলু নাগের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- সংগঠনটির নগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মালেকা চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর হুরে আরা বিউটি, দফতর সম্পাদক হাসিনা আক্তার টুনু, মা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক শারমীন ফারুক, ধর্ম সম্পাদক আয়েশা আক্তার, সদস্য কাউন্সিলর তসলিমা নুরজাহান রুবি, আয়েশা সিদ্দিকা এবং কাউন্সিলর শাহীন আক্তার রুজি।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন