বিজ্ঞাপন

ছুটির দিনে আড্ডামুখর বাংলা একাডেমি, প্রাণে ফেরে বর্ধমান হাউজ

February 18, 2024 | 12:28 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের সামনে পাটের চটের ওপর মাত্র কয়েকটি বই নিয়ে শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে যে মেলার যাত্রা শুরু তার কলেবর এখন বিস্তৃত। বর্তমানে প্রতিবছর বইমেলা বাংলা একাডেমির গণ্ডি পেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জায়গা দখল করে নেয়।

বিজ্ঞাপন

এখন বইমেলার পরিসর বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও। আর সেইসঙ্গে বেড়েছে বইয়ের বিক্রিও। তবে মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার পর বাংলা একাডেমি অংশ বলতে গেলে প্রাণহীন থাকে। এ সময় সেখানে নিয়মিত অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও দর্শক থাকে খুবই সামান্য। তবে সপ্তাহের দুটি দিন কিছুটা হলেও প্রাণ ফেরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।

শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন থাকায় মেলা বেশ জমে ওঠে। কারণ, এ দুই দিন মেলা শুরু হয় সকাল থেকেই। শিশু প্রহর থাকায় মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। তারা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় শিশু চত্বরসহ পুরো বইমেলা। তখন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও ভিড় বাড়তে থাকে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল না থাকলেও রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্টল। এছাড়া ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউজটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা একাডেমির ‘জাদুঘর’ হিসেবে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে মানুষের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মেলার ১৭তম দিনে (১৭ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ছিল দর্শক ও পাঠকের উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড়ের আঁচ গিয়ে পড়েছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও। তবে সেখানে বই বেচাকেনা খুব একটা চোখে পড়েনি। একাডেমির মূল মঞ্চের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন দেখতে দর্শক সারি মোটামুটি পূর্ণ ছিল। তার পাশেই বর্ধমান হাউজের জাদুঘরে নবীন-প্রবীণের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মোস্তফা কামাল নামে এক দর্শনার্থী বের হচ্ছিলেন জাদুঘর থেকে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপাকালে তিনি জানালেন, খুবই ভালো লেগেছে জাদুঘরের সংগ্রহ দেখে। অনেক বিখ্যাত ও বিজ্ঞজনদের সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছেন। যাদের শুধু নামেই চিনতেন। তাদের কর্মপরিধির সংক্ষিপ্ত কিছু হলেও জানা গেছে জাদুঘর থেকে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে এসেছেন মাসুদুর রহমান নামে এক প্রবীণ ব্যক্তি। তিনিও জাদুঘর ঘুরে দেখে সেখাকার খাতায় লিখছিলেন তার অনুভূতি। তার কাছে জাদুঘরের আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির এই আয়োজনটা বেশ সমৃদ্ধ। এটা আমার জানার পরিধিকে বিস্তৃত করে দিল। আমি চাই তরুণ প্রজন্ম এখানে আসুক। তারা জানুক আমাদের সাহিত্য কতটা সমৃদ্ধশালী।’

একটু এগিয়ে যেতেই অমর একুশের ভাস্কর্যের পাশে দেখা মিলল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের। সেখানে অস্থায়ীভাবে রাখা সেই ভাস্কর্য ঘিরে ছবি তোলায় ব্যস্ত দর্শনার্থীরা। আর আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষ আড্ডায় মশগুল। একটু অদূরেই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেল। কারণ, একলাইনেই বেশকিছু রাজনৈতিক সংগঠনের স্টল; আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের মাসিক মুখপত্র (উত্তরণ), বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইত্যাদি।

যুবলীগের স্টল ঘিরেই মূলত ভিড় ও কিছুটা কেনাবেচা হচ্ছে। জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মিল্টন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা মেলায় স্টল নিই। আমাদের স্টল ঘিরেও বেশ ভিড় থাকে। আমাদের বেচাকেনাও বেশ ভালো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে লেখা বইগুলো বেশি চলে।’

বিজ্ঞাপন

একটু এগোতেই চোখে পড়ুল ‘মাতৃভূমি’। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্টল। সেখানে কর্মীদের বেশ আনাগোনা রয়েছে। বইবিক্রির তথ্য জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এক কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নিজস্ব প্রকাশনাগুলোর চাহিদা খুব বেশি। আমাদের বিক্রিও মোটামুটি ভালো। ছুটির দিনগুলোতে বিক্রি বেশ বাড়ে।’

পাশেই আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআই’র স্টল। কিন্তু সেখানে কোনো ভিড়ের দেখা মেলেনি। এমনকি বিভিন্ন গবেষণা ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোও ফাঁকা ছিল। পাঠক বা দর্শক যারা ছিল তারা মূলত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘিরে ছবি তোলা ও আড্ডায় ব্যস্ত ছিল।

এদিকে, অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৭১টি। এর মধ্যে গল্প সাতটি, উপন্যাস সাতটি, প্রবন্ধ আটটি, কবিতা ৩১টি, ছড়া দু’টি, শিশুসাহিত্য একটি, জীবনী তিনটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তিনটি, ভ্রমণ দু’টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য একটি, রম্য/ধাঁধা একটি, ধর্মীয় একটি, সায়েন্স ফিকশন একটি, অন্যান্য তিনটি।

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন