বিজ্ঞাপন

আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স: লেআউট করতে গিয়ে তোপের ‍মুখে কর্মকর্তারা

February 19, 2024 | 8:11 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্সের স্থায়ী ভবন নির্মাণের প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করেও কোনো লাভ হয়নি। বর্ধিত মেয়াদেরও বাকি আছে আর মাত্র চার মাস। অথচ প্রকল্পটির কাজই শুরু হয়নি। এমন সময়ে কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকারি খাস ভূমিতে বরাদ্দ পাওয়া জমি পরিদর্শন ও লেআউট করতে গিয়েছিলেন পরিষদের সদস্য ও নির্বাহী কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েছেন তারা। পরে লেআউট না করেই ফিরে যেতে হয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভেদভেদী রূপনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিন আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তাদের ভূমি পরিদর্শন করতে যাওয়ার খবর পেয়ে সকাল থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান করছিলেন বরাদ্দ দেওয়া ভুমিতে বসবাস করা বাসিন্দারা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয়দের শান্ত করেন।

এ সময় ঘটনাস্থলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. কামাল উদ্দিন, আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না চাকমা, রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সূত্র জানায়, রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান কেন্দ্রে অবস্থিত আঞ্চলিক পরিষদের অস্থায়ী ভবনটি জেলা শহরের উপকণ্ঠ ভেদভেদী রূপনগর (পুরাতন রেডিও স্টেশন) এলাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ওই এলাকায় আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্সের জন্য ১৪ দশমিক ৭৫ একর ভূমি নামজারি করা হয়। পরে ২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয় ৩৭ কোটি টাকা, বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল রাঙ্গামাটি গণপূর্ত বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পের অধীনে ছয় তলা ভিতের চার তলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে কাজ শুরুই করা যায়নি। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দুই বছর, যা শেষ হতে যাচ্ছে আগামী জুন মাসে। ভূমিসহ নানা জটিলতায় এখনো সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। সেই মেয়াদও শেষ হওয়ার মাস চারেক আগে আজ সোমবার কমপ্লেক্সের লেআউট করতে গিয়েই স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছে আঞ্চলিক পরিষদ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই ভূমিহীন। ২০০১ সাল থেকে রূপনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। ওই সরকারি খাস জমি আঞ্চলিক পরিষদের স্থায়ী ভবনের জন্য বরাদ্দ করায় বর্তমানে তারা উচ্ছেদ আতঙ্কে আছেন।

স্থানীয়দের তোপের মুখে লেআউট না করেই ফিরে যেতে হয় আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তাদের। ছবি: সারাবাংলা

ওই এলাকায় বসবাসকারীরা বলছেন, তাদের অনেকেই ওই খাস জমি কিনে নিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব সরকারি খাস জমি বেদখল করে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা জোহরা বেগম বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা-সম্পত্তি নেই। আমরা অনেক বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। বাইরের দেশ থেকে যদি রোহিঙ্গা এসে আশ্রয় নিতে পারে, তবে আমরা দেশের মানুষ হয়েও কেন পারব না? আমরা এখানকার স্থানীয় মানুষ, এখানে বাস করতে চাই।’

চম্পা আক্তার নামে আরেকজন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অধিকারের জন্য। এখানে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করছি। এখানে তখন কোনো খালি জায়গা ছিল না, জঙ্গল ছিল। আমরা জঙ্গল পরিষ্কার বসবাস শুরু করেছি। জায়গা কিনে নিয়েছি। যারা এখানে বসবাস করছেন তাদের অনেকেই দিনমজুর। কিছু দিন পরপর আমাদেরকে হুমকি-ভয়ভীতি দেখায়। আমাদের বলা হচ্ছে এখান থেকে উঠে যেতে। আমরা কেন উঠে যাব? এই জায়গা তো কিনেছি। এখানে যারা থাকে তারা একদিন কাজে না গেলে ঘরে খাবার জুটে না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমরা এখানেই থাকতে চাই। এখান থেকে উচ্ছেদ করলে আমাদের জায়গার কোনো জায়গা নেই।’

রূপনগর সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবু বক্কর লিটন বলেন, ‘আজ (সোমবার) আমাদের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা আবেদন করব। পরে আমাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বসা হবে। আমরা এখানে দুই যুগের বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। কিন্তু কখনো কোনো সংস্থা কিংবা কেউ এখানে আনেনি। আমাদের প্রথম দাবি, আমাদের এখানেই থাকতে দেওয়া হোক। আর যদি এখান থেকে উচ্ছেদ করাও হয়, তাহলে যেন ভূমির ব্যবস্থা করা হয় এবং ঘরবাড়ি ফেরত দেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না চাকমা বলেন, ‘আজ (সোমবার) আমাদের এখানে আঞ্চলিক পরিষদের মূল ভবনের জন্য লেআউট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিতে পারিনি। আমরা এসে দেখি অনেক লোকজন। তাদের কিছু বক্তব্য আছে। আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি। আশপাশের এলাকা দেখেছি। সব দেখে-শুনে বুঝলাম, আমাদের বসতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সুবর্ন চাকমা বলেন, ‘তারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করবেন। পরে আমরা একটি বৈঠকে বসব, যেন সবাই মিলে শান্তিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এটি সরকারি প্রকল্প। আমরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারি, সেজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘দাবিগুলো যে আমরা সুরাহা করতে পারব, তেমন নয়। এটি প্রশাসনিক বিষয়।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই ভূমিটি আঞ্চলিক পরিষদের অফিস কমপ্লেক্সের জন্য নির্ধারিত জায়গা। পরিষদের সংশ্লিষ্টরা আজ লেআউট করার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোকজন বসবাস করে আসছেন। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে এখানে এসেছি। এখানে যারা বসবাস করছেন তাদের বক্তব্য স্যাররা শুনেছেন এবং নীতিমালার আলোকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব।’

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন