বিজ্ঞাপন

এমপিওভুক্তদের ১০% অর্থ কাটায় বাড়তি সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ

February 22, 2024 | 9:25 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অবসর নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য বেতন থেকে ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ায় আনুপাতিক হারে বাড়তি সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

আদালত রায়ে বলেছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে বেতনের ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলে তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা দেওয়া হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে তাদের যাবতীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ বিষয়ে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। রায়ের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৪ শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্ট তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালাগুলোর সংশোধনপূর্বক কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করে দু’টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।’

প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য মূল বেতনের জন্য ৪ শতাংশ এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য মূল বেতনের ৬ শতাংশ হারে অর্থ কেটে নেওয়ার বিধান করা হলেও ওই অতিরিক্ত অর্থ কেটে নেওয়ার বিপরীতে তাদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য বেতনের ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য বেতনের ৪ শতাংশ অর্থ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে বিল্পব কান্তি দাস, তোফায়েল সরকার, কামরুল হাসান গোলাম মোস্তফা, আব্দুল মোমিনসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ১৩১ শিক্ষক-কর্মচারী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ জারি করেন। রুলে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুল জবাব দিতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সময়ে নতুন করে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের ছয় মাসের মধ্যে কেটে নেওয়া ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ সর্বমোট ১০ শতাংশ অর্থের বিপরীতে সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই শুনানির জন্য বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। শুনানির ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন (২২ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করেন আদালত।

আদালত আজ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য বেতনের ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ হারে অর্থ কেটে নেওয়ায় আনুপাতিক হারে বাড়তি সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

বর্তমানে একজন শিক্ষক/কর্মচারী অবসরের পর তিনি মূল বেতনের ৭৫ মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। যখন ৬ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেওয়া হতো তখনও তাই ছিল। এখন ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেওয়ায়; বাড়তি ৪ শতাংশ বেশি পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য সে অনুযায়ী আনুপাতিক হারে বাড়তি সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আরও বিস্তারিত বলতে পারবেন বলে জানান এই আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন