বিজ্ঞাপন

বিশ্ব মোড়লেরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে: প্রধানমন্ত্রী

February 23, 2024 | 3:11 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন নিয়ে বিশ্বমোড়লদের দুমুখো নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা দেখি বিশ্ব মোড়লেরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। প্যালেস্টাইনের সব জায়গা-জমি দখল করে ফেলছে, সেটা ইনভেশন (আগ্রাসন) না। ইউক্রেনেরটা ইনভেশন! এই দুমুখো নীতি কেন হবে?

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবনে জার্মানির মিউনিখ সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রথমে সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন এবং পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেটা বলেছি সেটা তো স্পষ্ট। আমি সোজা বলে দিয়েছি, যুদ্ধ চাই না। কারণ যুদ্ধকালীন যে কষ্ট আমরা সেটার ভুক্তভোগী। আমি নিজেই তো ভুক্তভোগী। আমার দেশের মানুষ যেভাবে গণহত্যার শিকার হয়েছে, সেগুলি তো আমরা জানি। কাজেই সবসময় আমি বলি আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। এবং আমি ওখানেও বলেছি যে আজকে গাজায় ফিলিস্তিনের ওপর যেটা হচ্ছে এটা তো অমানবিক কাজ। হাসপাতালের ওপর আক্রমণ। হাসপাতালে গিয়ে মানুষ মারা। সব থেকে বেশি বাচ্চাদের কি দূরবস্থা! এটা তো মানবতাবিরোধী। আমি স্পষ্ট বলছি। আমি জানি অনেকে বলবে না সাহস করে। নানাজনের নানা দুর্বলতা থাকতে পারে, আমার তো কোন দুর্বলতা নেই। আমার তো চাওয়া-পাওয়া কিছু নাই। আমার কাছে ক্ষমতাটা হলো ‘থাকে লক্ষী যায় বলাই’বলে একটা কথা আছে না, আমার কাছে সেটাই। হ্যাঁ, থাকলে ভালো! আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। না থাকলে আমার কোন আফসোস নাই।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমার যেটা লক্ষ্য ছিল ২০২১ পর্যন্ত থাকতে হবে। বাংলাদেশকে একটা ধাপে তুলতে হবে। আমি সেটা করে দিয়েছি। আমি ক্ষমতায় আসবো কি আসবো না, আমি তো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা হচ্ছে দেশের জনগণ। আমি সবসময় চেয়েছি জনগণের সমর্থন, জনগণের সহযোগিতা। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক বন্ধু তো প্রয়োজন হয়। আমার দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হবে। এখন তো বিশ্বটা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। সেখানে একে অন্যের ওপর নির্ভরতা আছে। আমাদের অনেক জিনিস কিনতে হচ্ছে, আনতে হচ্ছে, আনার সময় যে বাধাটা পাচ্ছি; এগুলি তো আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে আমরা বলেছি যুদ্ধটা যখন শুরু হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, সেটা ওই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ এখন মুদ্রাস্ফীতির যন্ত্রণা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি করেছি। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারা ফেরত নিক। এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধরতে। আমরা লক্ষ্য রাখবো কোনো কিছুতে আমাদের কোনো রকম উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সেটা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। যদি হিসাব করেন, দক্ষিণ এশিয়া-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সব থেকে সুস্থ অবস্থায় বিরাজ করছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সমস্যার সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি বারবার। আসলে মিয়ানমারের অবস্থাই এতো খারাপ এবং বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে যখন কথা বলি সকলে রোহিঙ্গার প্রতি সহানুভূীতি দেখায়। কিন্তু আসলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া বা ফিরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা কার্যকর কিছু হচ্ছে না। এটা হল বাস্বতবতা। আর যুদ্ধ বন্ধ করার কথা যাদেরকেই বলি সবাই সমর্থন করে। কিন্তু উদ্যোগটা নেবে কে? এটাও একটা প্রশ্ন।

তিনি বলেন, যারা বিশ্ব মোড়ল তারাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে আর বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? অবশ্য আমার দুই বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধা আছে, এটা ঠিক। এটা হল সমস্যা, কে বন্ধ করবে? যারা নিজেরাই হোতা বলে মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সংবাদ সম্মেলন। এ সময় মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন-২০২৪’এ যোগদানসহ জার্মানি সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪’এ যোগ দিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানি যান এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেন। এ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সারাবাংলা/এনআর/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন