বিজ্ঞাপন

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক মামলা

February 25, 2024 | 2:17 pm

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আজ ১৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় এই হত্যাকাণ্ডে বিডিআর’র তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে ৫৭ জন ছিলেন সেনা কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ৮৩৪ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ৫২ আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ১৯ আসামি এখনো পলাতক। বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন।

বিস্ফোরক আইনে করা মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার বিচারকাজ চলছে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় মাসে চার দিন করে শুনানি হচ্ছে। আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাক্ষ্য শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সুরতহাল, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। হত্যা মামলায় ৬৪৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। আর বিস্ফোরক আইনের এই মামলায় হয়তো আরও ২০০ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরে মামলা নিষ্পত্তি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি চলতি বছরেই এ মামলার নিষ্পত্তি হবে।’

এদিকে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘পিলখানায় অনেক বড় হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল। অনেকেই এখানে জড়িত ছিল। আপনারা দেখেছেন প্রাথমিক বিচার হয়েছে। চূড়ান্ত বিচার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হবে।’

হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর হয়ে গেছে, পরিবারগুলো বিচার না পাওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেন অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়, আমরাও সেটাই আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় হত্যা মামলা

পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন। এখন আপিল বিভাগে মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এই মুহূর্ত আপিল বিভাগে পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক নেই। বিচারক নিয়োগের পর বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হলে তখন এই হত্যা মামলার আপিলের চূড়ান্ত শুনানি হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘দ্রুতই বিচারক নিয়োগ হবে। এরপর এ সমস্যা আর থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

হাইকোর্টে এ মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিলখানা হত্যা মামলার আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। শুনানি শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক দিন সময় লেগে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ সাপেক্ষে এই মামলা শুনানির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হলে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে।’

বিচারিক আদালতের রায়

পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। আর রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।

হাইকোর্টের রায

বিচারিক আদালতে হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন।

রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের সাজা কমেছে— এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এখন এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগে অপেক্ষমান আছে। আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ হওয়ার পর ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ ২০২১ ও ২০২২ সালে পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল করে।

আসামিপক্ষের এসব আপিল ২০২৩ সালের মে’তে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বরে চেম্বার আদালতে বিষয়টি ওঠে। ওইদিন চেম্বার আদালত বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরপর আসামিপক্ষের আপিল শুনানির জন্য গত ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন