বিজ্ঞাপন

নির্বাকের পাশে: গান হারানো মানুষের সুর

February 27, 2024 | 2:19 pm

সুজন সুপান্থ

অনেক না–পাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা আসলে কী পায়?—এই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। কিন্তু না–পাওয়া নির্বাক মানুষের কাছে এর উত্তর কেমন হবে? সে উত্তর দেওয়া কঠিন। এই কঠিন প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বরং সহজ কথা বলি; বলি মোজাহিদুল ইসলামের প্রথম গল্পের বই ‘নির্বাকের পাশে’ প্রসঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

বইয়ের শুরুতেই লেখক বলছেন, ‘আমার গল্পগুলো জীবনের জাবেদার ডেবিট-ক্রেডিটে হিসাব মেলাতে না পারা মানুষের। যারা ঝাঁ-চকচকে নগর, বুনো বর্ষায় চুপসে যাওয়া শহরতলি কিংবা শীতল কোনো গ্রামে নির্লিপ্ত জীবনকে যাপন করার সংগ্রামে মত্ত। হয়তো আমরা নিজেরাও এমন। অর্থাৎ কোনো অতি বা কল্পমানবের কথা গল্পে উঠে আসেনি।’

তাহলে কার গল্প এসব! কারা জীবনের হিসাব মেলাতে পারে না? অঙ্কে শূন্য পাওয়া ব্যথা নিয়ে আমিও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই শূন্যে—আদৌ পারে কি কেউ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ‘নির্বাকের পাশে’ দাঁড়াই। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে দেখেছি, ব্যাখ্যা নেই, তবু লেখকের হিসাব না মেলানো মানুষের জীবনেও ফুটে থাকে বিচিত্র ফুল। সুন্দর। সেই ফুল ছুঁয়ে দেখি জন ও জীবনের সম্পর্ক। এখানে হিসাব মেলানোর বদলে দেখি, জীবনের বিচিত্র বদল কীভাবে নিজের জীবনেও এসে লাগে। জীবনের এ এক ভিন্ন পিঠ। দুপুরি রোদের আলোয় যা চকচক করে ওঠে। এই রোদে থেমে থাকা যায় অনেকক্ষণ।

এসব গল্পে সুজন সুপান্থ নামের কোনো চরিত্র নেই। তবু পড়তে পড়তে দেখি, চোখ ভরে উঠছে ফেলে আসা জীবনের ছবিতে। বদলে যাচ্ছে কানে আসা শব্দ। ধীরে ধীরে দুপুরি রোদের ভেতর উঁকি দিচ্ছে সন্ধ্যার সুর। আর বুকের ভেতর ঢুকে পড়ছে দ্রুতগামী রেলগাড়ির হাওয়া। সেই হাওয়ায় ফরফর করে উঠছে লুপ্ত–কথা।

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যা ডোবার আগে নদীর তীর থেকে প্রেমিকাকে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফিরলে বুকের ভেতর এক আশ্চর্য ব্যথা অনুভব হয়। মনে হয়, যেন ভাষা ভুলে যাওয়া কোনো এক গানের সুর মাথার ভেতর, বুকের ভেতর ঢুকে তার ভাষা খুঁজে বেড়াচ্ছে। মোজাহিদুল ইসলামের গল্পের বই ‘নির্বাকের পাশে’ ওই ভাষা ভুলে যাওয়া সুরের মতোই। কেবল তাঁর কথামঞ্জরি পেরিয়ে গেলে বোঝা যাবে, এই সুর কোন স্কেলে ওঠানামা করছে। যা টিউন করা দূরূহ।

‘নির্বাকের পাশে’র গল্পগুলো পড়তে পড়তে দেখবেন, বইয়ের কোনো এক পৃষ্ঠা থেকে কেউ একজন উঠে এসে পাঠককে চেনা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করছে, কী হে, চলছে কেমন? তোমার পাশের ঘর থেকে এখনো কি সেই পুরোনো কান্নার শব্দ ভেসে আসে? পাঠক এর কী উত্তর দেবেন —জানি না।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন