বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের সব কার্যক্রম ডিজিটাল হচ্ছে: ইসি আলমগীর

February 28, 2024 | 6:09 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ময়মনসিংহ: নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিমালা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামীতে এনালগ পদ্ধতি বাতিল করে প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিটসহ নির্বাচনের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া চলছে। এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

ইসি মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। কোথাও কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

নির্বাচনের পরিবেশ ও ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক আছে। প্রার্থীরা উৎসাহ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা যেন পরিবেশ বজায় রাখেন। ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে এসে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন সে আহ্বান রাখছি। যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আশা করি ভোটার উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো থাকবে।

বিজ্ঞাপন

পরে তিনি টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এসময় মসিকের সদ্য সাবেক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ইভিএমে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও অজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১২টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে এই অজ্ঞতা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে ইভিএমের ভোট নিজের পছন্দের প্রার্থীর প্রতি থাকবে কি-না, এনিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মূলত একটি গোষ্ঠী এই ধরণের অপপ্রচার করছে। তাই গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও মোবাইল নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে কি-না, এই বিষয়টি স্পষ্ট করা জরুরি এবং ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া অতি জরুরি বলেও আমি মনে করি।

একমত পোষণ করে হাতি প্রতীকের প্রার্থী শহর আওয়ামী লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সাদেকুল হক খান মিল্কি টজু বলেন, বিগত নির্বাচনে অনেক প্রার্থী হেরে যাওয়ার পেছনে ইভিএমকে দায়ী করেছিলেন এবং ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ইভিএমের ভোট নিয়ে ভোটারদের শঙ্কা অনেক। এই অবস্থায় ব্যালটে ভোট করলে ভোটাররা স্বস্তিবোধ করতো।

এসময় জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের মাঝে ভালো ধারণা আছে, তা বলা যাবে না। ব্যালটে ভোট হলে প্রার্থী এবং ভোটাররা স্বস্তিবোধ করতো। এতে আচরণবিধি নিয়েও কমিশনের কঠোর নজরদারি খুবই জরুরি।

জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল বলেন, ইভিএমে সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট দিতে অনীহা রয়েছে। তারা বলে- ইভিএমে এক মার্কায় ভোট দিলে আরেক মার্কায় চলে যায়। এজন্য প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের আশ্বস্ত করা দরকার। এসব বিষয় খেয়ালে রেখে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাজ করবে বলে আমি আশা করছি।

বিজ্ঞাপন

ভিন্নমত পোষণ করেছেন হরিণ প্রতীকের প্রার্থী কৃষিবিদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক প্রযুক্তি। এনিয়ে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা থাকা দরকার। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের প্রচার ও প্রচারণায় করতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন যেন না হয়, সে বিষয়েও কঠোর নজরদারি থাকা দরকার। এছাড়াও প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যায় সীমা যেন লঙ্ঘন না হয় সেদিকেও নজরদারি করতে হবে।

এসময় প্রার্থীদের এসব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইভিএমে অনিয়ম একেবারেই অসম্ভব, এটা বিজ্ঞানের বিষয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের প্রতীকে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তাই হতো তাহলে বিগত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হতো না।

তিনি আরও বলেন, ইভিএমে কিভাবে ভোট দিতে হয়, তা ভোটারদের জানাতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এমনকি নির্বাচনের দিন ভোটারদের লাইনেও বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের ধারণা দেওয়া হবে।

ইভিএম শুধু ময়মনসিংহ নয়, এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এতে কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আঙুলের ছাপে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে, সেজন্য সঠিক ভোটার নিশ্চিত হলে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোট কথা ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, বরং ভোটার উপস্থিতিই আসল বিষয়।

এসময় ইসি মো. আলমগীর প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত প্রসঙ্গে বলেন, কোনো প্রার্থীর প্রতি অসম্মান আচরণ করার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান সম্মানিত। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নিরপেক্ষ না হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বাদ যায়নি প্রার্থীরাও। বিগত জাতীয় নির্বাচনে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। মোট কথা এই নির্বাচন হবে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন। এতে জাল ভোট বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, মসিক নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নগরীর ১২৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করবেন।

এতে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। তবে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন