বিজ্ঞাপন

আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর চক্রে চট্টগ্রামের যুবকের সঙ্গে বিদেশিও

February 29, 2024 | 4:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চুরি-ছিনতাই করা মোবাইল সেটের শনাক্তকরণ (আইএমইআই) নম্বর দ্রুত পরিবর্তনে দক্ষ চট্টগ্রামের এক উচ্চশিক্ষিত যুবককে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বিজ্ঞাপন

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন জানিয়েছেন, ওই যুবকের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের দুই নাগরিকের যোগাযোগের তথ্য মিলেছে, যারা আইটি এক্সপার্ট। কোনো মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করতে না পারলে বাংলাদেশি ওই যুবক তার বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা নেন। তারা নিজেদের দেশে বসে স্বতন্ত্র সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে সেটা পাল্টে দেন।

দেশি-বিদেশি এ চক্রের এমন কারসাজির কারণে চট্টগ্রামে চুরি-ছিনতাই হওয়া অধিকাংশ মোবাইল সেট উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার মৌসুমি আবাসিক এলাকায় বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মো. সাইফুল ইসলাম সুজন (৩১) নামে ওই যুবকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলায়। নগরীর অলঙ্কার মোড়ে অলঙ্কার শপিং কমপ্লেক্সে তার একটি নতুন-পুরনো মোবাইল কেনা-বেচা এবং মেরামতের দোকান আছে।

ডিবি’র কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতারের সময় সুজনের বাসায় ৫২টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল পাওয়া গেছে। সেগুলোর পাশাপাশি আইএমইআই নম্বর পাল্টাতে ব্যবহৃত তার ব্যক্তিগত দুটি ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি (বন্দর-পশ্চিম) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম সুজনের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি আছে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার বিষয়ে সে খুবই এক্সপার্ট। তার আবার বিদেশি এক্সপার্ট পার্টনারও আছে। ল্যাপটপ সুজনের, অথচ টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে সেটা পরিচালনা করতো তার বিদেশি পার্টনাররা এবং এর মাধ্যমেই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পাল্টানো হতো। এ জন্য সুজনকে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে তাদের পে করতে হতো।’

বিজ্ঞাপন

আইএমইআই বা ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি নম্বর সাধারণত একটি ১৫ ডিজিটের নম্বর। মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির সময়ই এটি সেখানে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে সেটটির পরিচয় নিশ্চিত হয়। সাধারণত হ্যান্ডসেট হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে এই আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে হ্যান্ডসেটটির অবস্থান খুঁজে বের করা সম্ভব হয়।

অভিযানে অংশ নেওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (পশ্চিম) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার সুজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস থেকে ২০১৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর কিছুদিন শিক্ষকতাসহ আরও বিভিন্ন চাকরি করেন।

শিক্ষকতা করতে গিয়েই মূলত তার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার একজন আইটি এক্সপার্টের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়, যিনি যে কোনো মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পাল্টানোসহ কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে খুবই দক্ষ।

‘সুজন ইন্দোনেশিয়ার ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর বিষয়টি শিখতে আগ্রহী হন। ইন্দোনেশিয়ান ব্যক্তি তাকে একটি ডঙ্গল মডেম কেনার কথা বলেন। কিন্তু সুজন অনেক খুঁজেও দেশে সেটি পাননি। এরপর ওই ব্যক্তি পাঁচশ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তার ল্যাপটপে আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেন। ইন্দোনেশিয়ায় বসেই টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সুজনের ল্যাপটপে প্রবেশ করেন ওই ব্যক্তি।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে সুজন অলঙ্কার শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইল কেনা-বেচার দোকান খোলেন। তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানের এক নাগরিকেরও পরিচয় হয়। তিনিও মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পাল্টানোসহ কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ। ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিকদের কাছ থেকে অনলাইনে এ বিষয়ে ডলারের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নেন সুজন। এরপর নিজের দোকান ও বাসায় বসে পুরোদস্তুর আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর কাজে নেমে পড়েন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর পাল্টানো এখনও পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেননি সুজন। তবে কম দামিগুলো বাসা কিংবা দোকানে বসেই দুই মিনিটে করে ফেলতে পারেন। সেগুলোর জন্য সেটপ্রতি তিনি নেন মাত্র ৫০০ টাকা।’

‘আর দামি ব্র্যান্ডেরগুলোর জন্য নেন ১৫ হাজার টাকা। কারণ, সেগুলোর অ্যাপ্লিকেশন তার ল্যাপটপে ডাউনলোডের পর টিম ভিইউয়ারের মাধ্যমে সেখানে প্রবেশ করে ইন্দোনেশিয়া অথবা পাকিস্তানের নাগরিককে সেটা পাল্টাতে হয়। তাদের পে করতে হয় বিধায়, সেগুলোর খরচ বেশি নেন সুজন। বিদেশি দুজন অপ্পো, ভিবো, রিদমি, স্যামসাং সেট, এমনকি আইফোনের পর্যন্ত আইএমইআই নম্বর বদলে দিতে পারেন বলে সুজন আমাদের জানিয়েছেন।’

আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর জন্য সুজন মোবাইল সেট কিভাবে সংগ্রহ করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চুরি-ছিনতাই করা মোবাইল বিক্রি হয়ে চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন দোকানে কিংবা ব্যক্তির হাতে যায়। যেহেতু, সুজনের নিজের দোকান আছে, তার সাথে এমন অনেকের পরিচয় আছে। তারাই সুজনের কাছে সেটগুলো দেয় আইএমইআই নম্বর পাল্টানোর জন্য। আবার অনেক সেট সুজন নিজে কিনে নম্বর পাল্টে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন।’

ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিকের পরিচয় পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে তারেক আজিজ বলেন, ‘তারা ছদ্মনামে ফেসবুকে আছেন। এমনকি সুজনও শাহন ছদ্মনাম ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।’

ডিবি’র উপ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একবার আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেললে মোবাইল সেট উদ্ধার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আগে নম্বর পাল্টানোর জন্য চট্টগ্রামে তেমন দক্ষ কেউ ছিল না। এ জন্য আমরা মোবাইল সেট সহজেই উদ্ধার করতে পারতাম। কিন্তু এখন সুজনের মতো উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ লোক এ ধরনের অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে বিদেশি নাগরিকও। এ জন্য এখন মোবাইল সেট চুরি বা ছিনতাই হলে উদ্ধারে আমাদের বেগ পেতে হয়।’

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ডেমরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারী নিহততীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষে বড় ক্ষতির শঙ্কাশেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন যাত্রামিয়ানমার থেকে এসেছে জি থ্রি রাইফেল-রকেট সেল, গ্রেফতার ৫গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনওসি-চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা তদন্তের নির্দেশশেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: নক্ষত্রের প্রজ্জ্বলনসম্পদের তথ্য গোপন, সাবেক পৌর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলাস্ত্রী হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন, ২২ বছর পর গ্রেফতার স্বামীশেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সব খবর...
বিজ্ঞাপন