বিজ্ঞাপন

অনড় মেয়র রেজাউল, সড়ক-ফুটপাতে হকার বসতে দেবেন না

February 29, 2024 | 9:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সড়ক-ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হকারদের আর বসতে না দেওয়ার বিষয়ে আবারও অনড় অবস্থান ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। কোনো চাপে নত না হয়ে আরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনারও ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অনুষ্ঠিত চসিকের নির্বাচিত পরিষদের ৩৭ তম সাধারণ সভায় মেয়র হকারদের বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন। নগরীর লালদিঘীর পাড়ে চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় মেয়র বলেন, ‘নগরবাসীর রাস্তায় নিরাপদে হাঁটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আমি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই মাঠে নেমেছি। কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি-চাপ দিয়ে আমাকে থামানো যাবে না। কোনো চাপে আমি নত হব না, উচ্ছেদ অভিযান চলবে। হকাররা ব্যবসা করুক, আমর তো আপত্তি নেই। কিন্তু ফুটপাত দখল করে কেন হকার বসবে? হলিডে মার্কেট করে দেব, ওখানে শুক্র-শনিবার হকাররা ব্যবসা করুক। কিছু কুচক্রি মহল ছাড়া রাস্তা-ফুটপাত উদ্ধার হওয়ায় সবাই খুশি।’

বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সড়ক-ফুটপাতে যারা অবৈধভাবে দোকানপাট বসায়, তারা বিদ্যুতের লাইন কিভাবে পায়? আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতিমাসে কোটি টাকা বিল দিই। আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের দুই-তিন মাস বিল বকেয়া থাকলে লাইন কেটে দেন। কোনো বাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গেলে তো অনেক দলিল খোঁজেন। আমার প্রশ্ন, ফুটপাত দখলকারীরা কিভাবে বিদ্যুতের লাইন পায়? পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুতের লাইন পেলে কেটে দেবো, জেনারেটর পেলে জব্দ করব।’

বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, ‘ফুটপাত রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আমার তো কোনো ফোর্স নেই। আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। আমরা যেখানে উচ্ছেদ করছি, সেখানে সংশ্লিষ্ট থানা একটু মনিটরিং করলেই তো ভয়ে আর কেউ বসবে না। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে ছয় মাসের মধ্যে শহরের চেহারা বদলে যাবে। অপরাধও কমে যাবে। নিউমার্কেট মোড়ে দেখেন, অভিযান চালানোর পর ছিনতাই কমে গেছে। আপনাদের বলব, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যাতে আমাদের দমাতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘নিউমার্কেটে কী একটা বিশ্রী অবস্থা! অভিযান চালাতে গিয়ে দখলদারদের হামলায় আমার ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আহত হয়েছেন। পুলিশ আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের প্রতি কোনো অনুকম্পা নেই।’

সভায় হকার পুনর্বাসনের দাবি নিয়েও কথা বলেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে হকার পুনর্বাসন। জহুর হকার মার্কেট তো আমরাই করেছি। আমি তখন ছাত্রনেতা ছিলাম। হকার পুনর্বাসনে কোনো সুফল আসেনি। পুনর্বাসন করবেন, এরা দোকানগুলো বিক্রি করে আবার রাস্তায় চলে আসবে। এখন আর বাজারে যেতে হয় না। পথে-ঘাটে সবখানে বাজার হয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

রেজাউল করিম বলেন, ‘অনেকে বলে ফুটপাতে গরীব মানুষ বসুক, ব্যবসা করুক। ফুটপাত দখলের কারণে মানুষ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কি কেউ নেন? আমাদের জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ নয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’

সভায় মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম নিউমার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযানকালে হামলার ঘটনায় মামলার কোনো আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি বলে তথ্য দেন।

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলররা ছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।

বিজ্ঞাপন

উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পরদিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এ সময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাংচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ অবস্থায় উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। হকাররাও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বুধবার হাজারখানেক শ্রমিক মিছিল নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে যান। তবে মেয়র তাদের দেখা দেননি। স্মারকলিপিতে হকাররা রমজানে তাদের ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেওয়ার দাবি জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন