বিজ্ঞাপন

‘যুক্তফ্রন্ট’ নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল বিএনপির

May 24, 2018 | 9:09 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ নিয়ে শুরুতেই সন্দেহ ছিল বিএনপির। এই জোটের আত্মপ্রকাশের সময়ও দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে শীর্ষ নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেন—  বিএনপিকে সরিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে একটি বিকল্প বিরোধী দল তৈরির লক্ষেই এই জোট গঠন করা হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে সরকারের ইন্ধন।

বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ডিসেম্বরে আত্মপ্রকাশ করে ‘যুক্তফ্রন্ট’। ওই সময় বিএনপির শীর্ষ এক নেতা সারাবাংলা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, “বিষয়টি খুবই ‘সিগনিফিক্যান্ট’! রাজনীতির মাঠ থেকে বিএনপিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিকল্প শক্তি হিসেবে তাদের দাঁড় করানো হচ্ছে কি না— সেটি ভেবে দেখতে হবে।”

ওই আলাপচারিতায় তিনি আরো বলেছিলেন, ‘তৃতীয় শক্তি নয়, সংসদ ও সংসদের বাইরে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবেই এই জোটকে কাজে লাগাতে চাইবে সরকার। আর আমাদেরকে ঠেলে দেওয়া হবে রাজনীতির বাইরে।’

বিজ্ঞাপন

এমন সংশয়-সন্দেহের পরও গত শনিবার (১৯ মে) দ্বিতীয় রোজায় ইফতার মাহফিলে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করে বিএনপি। জোটের অন্য শরিকদেরকেও দাওয়াত দেওয়া হয় সেখানে। দাওয়াত কবুল করে সবাই হাজির হন ইফতার মাহফিলে। সেখানেই বোমা ফাটান বি চৌধুরী।

কোনো রাখ-ঢাক না করেই তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি কর্মীদের বুক ভয়ে কাঁপে— যদি আবার সরকারি দল ক্ষমতায় আসে, তাদের কী হবে? আবার সরকারি দলের নেতাকর্মীদেরও বুক কাঁপে— যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাদের কী হবে? অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন এক পর্যায়ে দেশ চলে যেতে পারে, যেখানে মানুষ মানুষকে হত্যা করবে, আগুন জ্বালাবে! কিন্তু এগুলো থামাবে কে? এমন একটা শক্তি দরকার, যারা এদিকেও কন্ট্রোল করতে পারবে, ওদিকেও কন্ট্রোল করতে পারবে!’

বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বি. চৌধুরীর এ বক্তব্যের পর ‘যুক্তফ্রন্ট’ নিয়ে বিএনপির সন্দেহ-সংশয় আরো বেড়েছে। যে বি. চৌধুরীরর ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ রেখে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জাতীয় ঐক্যের কথা ভাবছে বিএনপি, সেই বি. চৌধুরীই আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে ‘কন্ট্রোল’ করার প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা রীতিমতো থ বনে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

বি. চৌধুরীকে পছন্দ করেন— এমন কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বড় একটি অংশের ওজর-আপত্তি সত্ত্বেও চলমান সংকট উত্তরণে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই লক্ষ্যেই গত কয়েক বছর ধরে তাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল। তার ইফতার মাহফিলে হাজির হচ্ছিলেন খালেদা জিয়া; আবার বিএনপির ইফতার মাহফিলেও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছিলেন তিনি। চেষ্টা চলছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে তাকে ভেড়ানোর।

কিন্তু মাস ছয়েক আগে বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের পর বি. চৌধুরীর উদ্দেশ্য অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় বিএনপি নেতাদের কাছে। তারা ধরে নেন, ১৪ বছর আগে বিএনপি থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে বিতাড়িত বি. চৌধুরী কখনোই বিএনপির হয়ে কাজ করবেন না। বরং আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবেন।

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি এখনও অনুগত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দকীর দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার একজন আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বধীন নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করে বিএনপি নেতাদের সেই ধারণাকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন বি. চৌধুরী। ইফতার মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যেও ঘটেছে তারই বহিঃপ্রকাশ!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ বছর ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে এলেই খালেদা জিয়া সবার আগে যোগাযোগ করেছেন বি. চৌধুরীর সঙ্গে। একাধিকবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও পাঠিয়েছেন তার কাছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু যুক্তফ্রন্ট গঠনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জোটের শরিক নেতা আ স ম আব্দুর রব, কাদের সিদ্দকী ও মাহমুদুর রহমান মান্নাও এ বিষয়ে বিএনপির সাথে কথা বলেননি। বিএনপির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই চলছেন নতুন জোটের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমার জানামতে, যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি বি. চৌধুরী।’

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির ইফতার মাহফিলে এসে বিএনপিকে কন্ট্রোল করার জন্য একটি বিকল্প শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে রাজনীতিতে নতুন চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

অবশ্য তার এ বক্তব্যকে আপাতত ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবেই দেখছেন খন্দকার মোশাররফ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করে এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। এর নেপথ্যে কিছু আছে কিনা, সেটা তিনিই (বি. চৌধুরী) ভালো জানেন।’

এতকিছুর পরও ‘যুক্তফ্রন্ট’কে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই বিএনপির। সরকারবিরোধী আন্দোলনে এই জোটকে পাশে পেলে বরং খুশিই হবে প্রচণ্ড চাপে থাকা রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সবাইকে আমরা পাশে চাই। অবশ্যই আমরা চাইব নতুন এই রাজনৈতিক জোট গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন