বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় নারী দিবস

March 8, 2024 | 5:22 pm

মো. জুবাইল আকন্দ

বর্তমান সমাজের উন্নয়নে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই নারীদের অবদান প্রশংসনীয়। তবু সমাজে নারীরা ভূগছেন নিরাপত্তাহীনতায়, দিনদিন বেড়েই চলেছে নারীদের প্রতি সহিংসতা, নারীদের হতে হচ্ছে হেয় প্রতিপন্ন, হতে হচ্ছে ধর্ষণ ও বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার। ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের জাগ্রত করাই নারী দিবসের মূল্য লক্ষ্য। নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সন্মান, প্রশংসা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে পালন করা হয় দিবসটি।

বিজ্ঞাপন

নারীদের প্রতিপক্ষ নয়, সমকক্ষ ভাবুন

তৈয়বা খানম
চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম

আমাদের সমাজব্যবস্থায় লোকমুখে একটা প্রচলিত কথা হলো- নারীরা যেই পাত্রে থাকে সেই পাত্রের আকার ধারণ করতে হয়। অথাৎ সংকটকালীন পরিস্থিতিতে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, বিরূপ মন্তব্য কিংবা কটুক্তি যা ই করা হোক না কেন কেবল মুখ বুঝে সহ্য করতে হবে এটা আমাদের তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় পারিবারিক শিক্ষা হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবাদ করলেই পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলা হয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নারীদের কাজে কিংবা যেকোনো ক্ষেত্রে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলে তাদের নিয়ে কাদা ছড়াছড়ি শুরু হয়ে যায়। এখনো অনেক পরিবারে একজন ছেলে বাইরে কাজ করবে বলে তার পুষ্টিকর খাবারের ব্যাপারে যতটা সচেতনতা অবলম্বন করা হয় একজন নারীর ক্ষেত্রে সেটা করা হয়না। আবার দেখা যায় একজন পুরুষ বাইরে কাজ করে বিশ্রামের সুযোগ থাকলেও একজন নারীর সেটা থাকে না। তাকে একা হাতে সবটা করতে হয়, ঘরের কাজ মেয়েদের এরূপ মানসিকতা থেকে। এরূপ বৈষম্য কখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য বয়ে আনতে পারবে না। নারীদের প্রতিপক্ষ নয়, সমকক্ষ ভেবে তাদের সহযোগী হোন তবেই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। তাই নারী হিসেবে চাই, নারীদের স্বপ্নের সাজানো পৃথিবী কেবল কল্পনাতে নয় বাস্তবেও সুন্দর ও নিরাপদ হোক যেথায় তাদের স্বপ্নরা ডানা মেলবে আকাশ পানে।

বিজ্ঞাপন

অধিকার আদায়ের নামে যেন নিজেদের মান ক্ষুন্ন না হয়

ছাবিহা জামান
চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম

নারী তরল পদার্থের ন্যায় যখন যে পাত্রে তাকে রাখা হবে সে পাত্রের রূপ নিবে। নারীরা যেমন কোমলতার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে তেমন পরিস্থিতি অনুযায়ী রণচণ্ডী রূপ ধারণ করতে দু’বার ভাবে না। নারী কখনো বাবার ঘরের লক্ষ্মী, ভ্রাতার ঘরের ভগ্নী, স্বামীর ঘরের অন্নপূর্ণা, পুত্রের ঘরের জননী হয়ে বিচরণ করে। তারা জীবনের প্রতিটা ধাপকে দৃঢ়তার সাথে আপন করে নেয়। প্রতিটা মুহুর্তে প্রস্তুত থাকে সবকিছুর জন্য। তাদের ছাড়া সংসার অসম্পূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

প্রতিটি ধর্মে, প্রতিটি শাস্ত্রে নারীদের আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আবার বর্তমান বিশ্বেও নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে খুব সচেতন। দিন দিন নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

নারীদের এতো এতো সফলতা, মর্যাদার মাঝে কিছু শ্রেণির নারীর জন্য পুরো নারীসমাজ অমর্যাদায় পতিত হচ্ছে। এর একটা অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের খন্ড চিত্র দৃষ্টিপাত করতে পারি। বাংলাদেশে নারীর অধিকারের কোনো কমতি আমরা দেখতে পাই না। সব ধরনের সম্মান, সব ধরনের মর্যাদা আমাদের দেয়া হয়েছে। তারপরেও বিশেষ একটা শ্রেণি দৃষ্টিগোচর হয় যারা কিনা পোষাক পরিচ্ছদ নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ে, সমধিকার চাইতে গিয়ে এমন সমান অধিকার চায় যা নারীসমাজের মান ক্ষুন্ন করে।

আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নারীর, অধিকার বলতে পুরুষের সাথে নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হওয়া, রাজনৈতিক ভাবে সফল হওয়া, নারীকে পুরুষের চেয়ে ছোট করে না দেখা, দেশের জন্য, বিশ্বের জন্য কিছু করা এসব বুঝি। পুরুষের সাথে কলহ, তাদের মতো চলাফেরা, পোশাকাদি এসব নিয়ে অধিকার চাওয়া না। তবে সার্বিক বিবেচনা করলে নারীরা আজ বেশ সফল।

আপন আলোয় বিকশিত হোক নারী

বিজ্ঞাপন

নাদিয়া সুলতানা
চট্টগ্রাম কলেজ

নারী মমতাময়ী মা, নারী বোন, নারী মেয়ে, নারী অর্ধাঙ্গিনী ভালোবাসার প্রেয়সী। নানান পরিচয় যেন তাদের নিজের সত্তাকে আড়াল করে না দেয়। উজ্জ্বল করে তুলে নিজগুণে। নারী আজ আপন গুণে পৌঁছে গেছে রাষ্ট্র নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মহাকাশে। প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে ভেঙে নারী সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। নারীই পারে দেশ ও সমাজকে এবং পুরো জাতিকে বদলাতে। কবি কাজী নজরুল “নারী” কবিতায় লিখেছেন, “জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য-লক্ষ্মী নারী, সুষমা লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।” তবে এই পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত। তাদের যোগ্য স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। তাই তাদেরকেই নিজগুণে তা অর্জন করে নিতে হবে। এই সমাজে নারীদেরকে এক হয়ে পাড়ি দিতে হবে বহুদূর, বিকশিত হতে হবে আপন আলোয়। শুধু ৮ই মার্চ না প্রতিটি দিন হোক নারীর।

প্রজন্ম হোক সমতার

তানজিদ শুভ্র
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” – জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর এই কবিতার লাইন যেন আমাদের জীবনের অনন্য এক প্রতিচ্ছবি। সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ আমাদের সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে কারও অবদান অস্বীকার করা যায় না।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিব।” এক উক্তিতেই শিক্ষিত জাতি গড়ার পেছনে নারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়। বর্তমান সমাজে নারীরা পিছিয় নেই। আইন প্রণেতা থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করে নারীরা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীনদের মতো সাহসী কন্যারা এভারেস্ট জয় করে যেমন দেশের পতাকা উড়িয়ে আসে তেমনি বাংলাদেশে নতুন করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উন্মোচন বিশ্বের বুকে গর্বিত করে সেঁজুতি সাহা।

নারীদের সম্মান জানাতে বছরে একটি দিন বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায় এ দিবসে। এই দিবসটি উদ্‌যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। এখনো বিভিন্ন উৎসব বা ছুটির আগে কর্মজীবী নারীদের তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য আন্দোলন করতে দেখা যায়। এমনকি কর্ম পরিবেশে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের প্রতি হেনস্থার শিকার হওয়ার ঘটনাও বন্ধ হয়নি।

পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ শুধুমাত্র বছরের একদিন নয়, প্রতিটি দিন হোক নারীদের প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শনের, এই প্রজন্ম হোক সমতার।

নারীদের সম্মান প্রদর্শনের অঙ্গীকার করি

আবু জাহিদ
সরকারি আজিজুল হক কলেজ

স্রষ্টার অন্যতম এক সৃষ্টি নারী। যার কষ্ট ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেরেছি। এই নারী নামক মহান সৃষ্টি আমরা বাস্তব জীবনে বহুরূপে দেখতে পাই। আমরা এই নারীকে দেখতে পাই একজন আদর্শ মা হিসেবে, একজন কোন গুণবান স্ত্রী হিসেবে, একজন ভালো বোন হিসাবে। প্রতিবছর ৮ মার্চ আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছি ঠিকই কিন্তু নারীদের প্রতি পর্যাপ্ত সম্মানবোধ এখনো আমাদের মাঝে জাগ্রত হয়নি। যদি জাগ্রত হতোই তবে কোনো নারীকে রাস্তায় গণধর্ষনের মতো জঘন্য ঘটনার শিকার হতে হতো না। রাস্তাঘাট, বাসে, রেল স্টেশনে যৌন হয়রানীর মতো খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হতে হতো না। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে নারীদের অধিকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার নারীদের অগ্রগতির পথ সুগম করে দিয়েছে। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেকটাই তৎপর। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নারীদেরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করবো এই হোক আমাদের নারী দিবসের অঙ্গীকার।

নারীদের সম্মান অক্ষুণ্ন থাকুক

এস.এম. রাহমান জিকু
চট্টগ্রাম কলেজ

যে নারীর আত্মত্যাগে আমরা বড় হয়ে উঠি; সেই-তো আমাদের জীবনের প্রথম ভালোবাসা। আর তিনিই আমাদের মা। নারীদের সম্মান জানিয়ে প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি পালনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।

পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে নারী দিবসে নারীদের সম্মানে সরকারি ছুটি থাকে আবার কোনো দেশে নারী কর্মজীবীদের ছুটি থাকে এই দিনে। কয়েকটি দেশে নারীকে সম্মান জানিয়ে একই দিনে মা দিবস হিসেবেও উদযাপন করা হয়।

সব নারীর হাজারো গল্পের ভীড়ে লুকিয়ে থাকে একজন মায়ের গল্প। সারাজীবন বিনা পারিশ্রমিকে খেটে যাওয়া মায়েদের প্রতি আমাদের সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকুক। বছর জুড়েই সব নারীদের সম্মান আর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক- নারী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন