বিজ্ঞাপন

৮ বছরে পুঁজিবাজারে নারী বিও হিসাব কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার

March 8, 2024 | 7:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পুঁজিবাজারে পুরুষের পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। গত ৮ বছরের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭টি।

বিজ্ঞাপন

পুঁজিবাজারের তথ্য ভাণ্ডার হিসবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রামণের মধ্যেও নিজেদের আয় বাড়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেক নারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে সে দেশের নারীরা মিউচুয়াল ফান্ডকে বিনিয়োগের আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। করোনার মধ্যেও ভারতের নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যেভাবে বাড়ছে, ঠিক উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে দেশের পুঁজিবাজারে। এখানে নারী বিনিয়োগকারীরা বেশ পিছিয়ে রয়েছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি নারীদের এ খাতে বিনিয়োগভীতি বাড়ছে। দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় না থাকায়, নারীরা তাদের সঞ্চয় এখানে বিনিযোগে ঝুঁকি নিতে চান না। এ ছাড়া, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে তুলনামূলক প্রচার-প্রচারণা কম থাকা পুঁজিবাজারে নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। এ বিষয়টির ওপর পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডাররাও খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তাই এ সেক্টরে নারীদের অনীহা বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞাপন

এক্ষেত্রে, নারীদের গচ্ছিত সঞ্চয় বাজারে বিনিয়োগ হিসেবে আনতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই), মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ স্টেকহোল্ডারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বছরজুড়ে নারীদের বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা আয়োজনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নারীরা যে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করতে বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। একইসঙ্গে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ— এ ধারণা নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে নারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।

সিডিবিএলের প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে নারী নিয়োগকারীর সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে ছিল। পরবর্তীতে ধসের পর এখন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন প্রায় ২ লাখ নারী বিনিয়োগকারী। ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ে, তবে তা ২০১০ সালে মতো নয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০টি। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯২টিতে।

২০১৮ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাব কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৮টিতে। তবে ২০১৯ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত এ বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯২টিতে। আর তারপর থেকেই কমতে থাকে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা।

২০২০ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯১৮টি, ২০২১ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯০টি, ২০২২ সালের ৮ মার্চ নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৪১টিতে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬টি। আর ২০২৪ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত নারী বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২৩টি। সে হিসাবে গত ৮ বছরের দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭টি বা ৫০.১০ শতাংশ। আর গত এক বছরের ব্যবধানে নারী ও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ২৪ হাজার ৭২৩টি বা ৫.৪২ শতাংশ।

বর্তেমানে চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে পুরুষ ও নারীর মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪১টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিও হিসাবের সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮টি। আর আর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২৩টি। সে হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ২৪.৪১ শতাংশ। ফলে পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই এখন নারী বিনিয়োগকারী।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীদেরকেও বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এ জন্য বিআইসিএম ধরাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর নারীর ভূমিকা পরিবারে অনেক বেশি। তাই পরিবারে মাকে যদি শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পরে। তাই দীর্ঘ মেয়াদের পুঁজিবাজারকে উন্নত করার লক্ষ্যে মায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা জানা অত্যন্ত জরুরি। সে লক্ষ্যে নিয়েই বিআইসিএম কাজ করছে। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিআইসিএম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা কর্মশালা আয়োজন করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডা বছরজুড়ে পরিচালনা করবে বিআইসিএম।’

এদিকে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে নারীদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। বিএএসএম এরইমধ্যে নারী বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে। আর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গত ৫ ও ৬ মার্চ বিএএসএমের নিজস্ব কার্যালয়ে নারী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কিত জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিএএসএম।’

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন