বিজ্ঞাপন

১৩ দাবি নিয়ে নারী দিবস পালন সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির

March 8, 2024 | 11:51 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচি থেকে ১৩টি দাবি তুলে ধরেছে নারী নির্যাতনবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে ও নারীর মানবাধিকার নিশ্চিতে পারিবারিক আইন পরিবর্তন, সম্পত্তিতে সমানাধিকারসহ এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৮ মার্চ) কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দিবস উপলক্ষে ‘বৈষম্যপূর্ণ পারিবারিক আইন পরিবর্তন করো, নারীর অগ্রসর হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দুর করতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করো’— প্রতিপাদ্যের আলোকে সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, উইমেন ফর উইমেনের সাবেক সভাপতি ও দীপ্ত এ ফাউন্ডেশন ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের দিলীপ কুমার সরকার এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী।

ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি ও সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী। কমিটির পক্ষে তিনি ১৩ টি লিখিত দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—

বিজ্ঞাপন
  • অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে (বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারসহ);
    সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে;
  • নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে;
  • নারীর অবৈতনিক পারিবারিক কাজের স্বীকৃতি দিয়ে তা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
  • উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কোনো বৈষম্য ও বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে হবে;
  • গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫ পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে;
  • নারী গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে বিষয়টিকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
  • উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন নিপীড়ন বন্ধে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করতে হবে;
  • পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন-২০১২ বাস্তবায়ন করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নারীকে অবমাননা করে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ বা প্রচার করা হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;
  • অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা, অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে;
  • সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে উত্থাপিত বৈষম্যবিরোধী আইন ২০২২ দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে;
  • নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ এবং নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯-২৫ বাস্তবায়নে যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে; এবং
  • জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১)(গ)-এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারী সমাজ সংগঠিত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে নিশ্চিত করতে হলে নারী- পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে; বিভাজন, হিংসাপূর্ণ, ধর্মান্ধতাপূর্ণ সমাজকে মুক্ত করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, সহিংসতার প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করতে হবে; ডিজিটাল দুনিয়ায় নারীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; নারীর পারিবারিক ও সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন করতে হবে; এবং বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে সামাজিক ধ্যান-ধারণা ও মনস্তাত্বিক দিক পরিবর্তনে কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী নির্যাতনবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সমাবেশ মঞ্চ। ছবি: সারাবাংলা

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার না থাকার কারণে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে; যা সংবিধান পরিপন্থি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উত্তরাধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

উইমেন ফর উইমেনের সাবেক সভাপতি ও দীপ্ত এ ফাউন্ডেশন ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর জন্য বরাদ্দ বিনিয়োগকে কৌশলগতভাবে শৃঙ্খলা মেনে ব্যয়ের উদ্যোগ নিতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, কাজের গুণগতমান বাড়াতে হবে। ১১-২২ মার্চ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাসের অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ইভেন্টের আলোচনায় এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। যারা সরাসরি ও অনলাইনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের প্রতি ইভেন্টে আলোচিত বিষয়বস্তু শেয়ার করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে, রাষ্ট্রকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।

দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের দিলীপ কুমার সরকার বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করার মতো পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নারীর জন্য প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, আসন এক-তৃতীয়াংশ বাড়াতে হবে।

সমাবেশে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়াইডাব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রভাষক রিজওয়ানা ফেরদৌসী করিম। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের শিল্পীরা। সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর থেকে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত মিছিল হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন