বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে: মোদি

May 25, 2018 | 4:11 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কের সোনলি অধ্যায় চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তিনি বলেন, ‘স্থল ও সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধের মতো জটিল বিষয়গুলোর সমাধান করা অনেক সময় অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু সেগুলোর সমাধান আমরা করেছি। আমরা দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কে সোনালী অধ্যায় চলছে।’

শুক্রবার (২৫ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কলকাতা থেকে খুলনার মধ্যে এসি ট্রেন চালু হয়েছে। আমরা এর নাম দিয়েছি বন্ধন, আরেক ট্রেন আছে মৈত্রী। এমন বন্ধুত্বের মধ্য দিয়েই আমরা নিজেদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে। এ বছর এর পরিমাণকে ১১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য আমাদের রয়েছে। আবার আমরা বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট আনছি। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি।’

বাংলাদেশ সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে বাংলাদেশ ভবন স্থাপন করেছে, ঠিক একইভাবে কুষ্টিয়ায় শিলাইদহতে কবিগুরুর কুঠিবাড়ি সংস্কারের দায়িত্বও ভারত সরকার নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি।

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’কে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধুত্বের প্রতীক অভিহিত করে মোদি বলেন, দুই দেশের কোটি মানুষের ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা ও শিক্ষার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠবে এই ভবন। এই ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের জনগণ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

বিজ্ঞাপন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের দুই দেশেরই (বাংলাদেশ ও ভারত) জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তিনি আমাদের সম্পর্কে মেলবন্ধন। তার গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবন স্থাপন একটি খুশির খবর। এই ভবনটি উদ্বোধনের খুশির এই মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দ অনুভব করছিল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আরো বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস অত্যন্ত পুরনো। দুই দেশের মধ্যে অনেক মিশরও রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে সম্মান পান, একই সম্মান তিনি ভারতেও পান। বিশ্বকবির  কবিতা, গান যেমন বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে মানুষের মুখে মুখে ধ্বনিত হয়, একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের কোনায় কোনায় মানুষের মুখে মুখে ভেসে বেড়ায় কাজী নজরুল ইসলামের গান।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অদিতি মহসিন, লিলি ইসলাম, লীনা তাপসী খান, শর্মিলা ব্যানার্জি, নিসার হোসেন চৌধুরীরর মতো বাংলাদেশি সংগীতশিল্পীরা ভারতের জন্য সম্পদ বলেও এ সময় উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি।

তিনি আরো বলেন, ‘গুরুদেব এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাকে কোনো সীমায় বাধা যায় না। তিনি যতটা ভারতের, ততটা বাংলাদেশেরও। তিনি সব ধরনের সংস্কৃতিতে গ্রহণ করতে জানতেন। তার ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের সুরে যেমন রয়েছে গগন হরকরার গানের প্রেরণা, তেমনি তার গানে বাউল সংগীতের প্রভাবও রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রবী ঠাকুরেরর যে মানবিক বোধ, তা প্রভাবিত করেছিল বঙ্গবন্ধুকে। গুরুদেবের বিশ্বমানবতাবোধ আমাদের সবার জন্যও প্রেরণা।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয় সেনাসদস্যদের সম্মাননা জানানোর ঘটনাকে বিরল বলে অভিহিত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সম্মাননা জানানোর ঘটনা কেবল ভারতের সেনাসদস্য নয়, আমাদের সবার জন্যই সম্মানের। একটি দেশ অন্য দেশের সেনাসদস্যদের এভাবে সম্মাননা দেয়— এমন উদাহরণ বিশ্ব ইতিহাসে খুবই কম।’

অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা আজ খুব মনে পড়ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সেই ১৯৭১ সাল থেকে। এই সম্পর্ক কোনোদিন নষ্ট হবে না।’

মমতা ব্যানার্জি আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ও ভারতের দুই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের একজন যদি হন নয়নমনি, অন্যজন প্রাণ। তাদের দু’জনকে ঘিরে আমাদের সম্পর্কের বন্ধনও গড়ে উঠেছে। এই বন্ধন সবসময় ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য যাত্রা শুরু করা ‘বাংলাদেশ ভবন’ একটা সময় দুই বাংলার মানুষের কাছে তীর্থস্থানে পরিণত হবে বলেও আশাবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি ভবন তৈরির ঘোষণাও দেবেন তিনি।

এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহেনা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, দুই বাংলার জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কবি নুরুল হুদাসহ বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ও তার সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সারাবাংলা/টিআর/জেএএম

আরও পড়ুন-

বিশ্বভারতীতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন হাসিনা-মোদি’র

রবীন্দ্রনাথের ওপর আমাদের অধিকারই বেশি: শেখ হাসিনা

বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সব সমস্যার সমাধান করতে পারব: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন