বিজ্ঞাপন

ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন সড়কে ১৮ প্রাণহানি, ৩৭% মোটরসাইকেলে

March 13, 2024 | 12:30 pm

ঢাকা: গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৫৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৪৪ জন নিহত এবং ৮৬৭ জন আহত হয়েছেন। এই হিসেবে গত মাসে প্রতিদিন ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৯ জন নারী ও ৮২ জন শিশু। একই সময়ে ১৮৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর দুর্ঘটনায় ১০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৪ জন, যা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এ সময়ে ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৩৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত এবং ৬৬ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১৩ মার্চ) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

ওই প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭ দশমকি ৮৬ শতাংশ; বাস যাত্রী নিহত হয়েছেন ২৩ জন, যা ৪ দশমকি ২২ শতাংশ; ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৪১ জন, যা ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ; প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৬ জন, যা ২ দশমকি ৯৮ শতাংশ; থ্রি-হুইলার যাত্রী (অটোরিকশা-অটোভ্যান-ইজিবাইক-মিশুক) ১১১ জন, যা ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-ইটভাঙ্গা মেশিন গাড়ি) ২৪ জন, যা ৪ দশমকি ৪১ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী নিহত হয়েছেন ১৪ জন, যা মোট নিহতের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

রোড সেফটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কে সংঘটিত হয়েছে ১৭৩টি। এছাড়া আঞ্চলিক সড়কে ২৩৪টি, গ্রামীণ সড়কে ৯৩টি, শহরের সড়কে ৭২টি এবং অন্যান্য স্থানে ১১টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ৮১টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২৭৮টি, পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ১১৩টি, যানবাহনের পেছনে আঘাত করে ৮১টি এবং অন্যান্য কারণে ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যানে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২৬টি দুর্ঘটনা এবং ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৭টি দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে লক্ষীপুর, ঝালকাঠি ও সুনামগঞ্জ জেলায়। ৮টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ১৭টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে, গত জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭২ জন নিহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৫.২২ জন। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৮ দশমকি ৭৫ জন। এ হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে প্রাণহানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাই গতি নিয়ন্ত্রণে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনি দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন। প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতি নজরদারি করতে হবে। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইদানিং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে যানবাহন দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয় প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপসহ পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ দরকার। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। তারা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে জীবনমুখি প্রচারণা চালাতে হবে। একইসাথে গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন