বিজ্ঞাপন

প্রতিরোধে বেঁচে গেল বেওয়ারিশ কুকুর, শিকারে অভিযুক্ত কুকিরা

March 13, 2024 | 5:55 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: দুই-তিন দিন ধরেই রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ও সড়কে অবাধে বিচরণ করা বেওয়ারিশ কুকুর ধরার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই স্থানীয় কিছু তরুণ-তরুণীর প্রতিরোধের মুখে শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে বেশ কিছু বেওয়ারিশ কুকুর। সেগুলো ধরে মিজোরাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে জেলা শহরের কয়েকটি এলাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর ধরে নিয়ে যাচ্ছিল শিকারিরা। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ-তরুণী শিকারিদের পর্যবেক্ষণ করে রিজার্ভবাজার চেঙ্গী মুখ (নাপ্পিঘাটা) এলাকায় পৌঁছান। সেখানে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কুকুরগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের ফাঁদ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

কুকুর উদ্ধারে যাওয়া তরুণ-তরুণী ও স্থানীয়রা বলছেন, বেওয়ারিশ কুকুর ছাড়াও মানুষের পালিত কুকুর ধরা হয়েছে। গত দুই-তিন দিন ধরে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ২০টি কুকুর ধরা হয়েছে। মিজোরাম থেকে আসা কুকি সম্প্রদায়ের শিকারিরা বেওয়ারিশ কুকুরগুলো ধরছেন বলে ধারণা তাদের।

আরও পড়ুন- রাঙ্গামাটি থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিজোরামের শিকারিরা

বিজ্ঞাপন

তরুণ-তরুণীরা জানান, বুধবার সকালে চেঙ্গী মুখ এলাকায় গিয়ে শিকারীদের কুকুর নিয়ে যেতে বাধা দেন তারা। পরে বিষয়টি জানাজানির পর সেখানে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেলী রুদ্র উপস্থিত হন। সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতেই কুকুরগুলো উদ্ধার করে আনেন ওই তরুণ-তরুণীরা।

কুকুর উদ্ধার কাজে যুক্ত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এক ছোট বোন জানায়, গত পরশু (সোমবার) টিটিসির মুখ থেকে পাঁচটি কুকুর ধরা হয়েছিল। আমরা ধারণা করছি, মিজোরাম থেকে আসা কুকি সম্প্রদায়েরর শিকারিরা দুই-তিন দিন ধরেই রাঙ্গামাটি শহর থেকে কুকুর ধরছে। আজ (বুধবার) সকাল থেকে আমরা তাদের অনুসরণ করে রিজার্ভবাজার চেঙ্গীমুখ এলাকায় যাই। সেখানে তখন চারজন কুকুর শিকারি ছিল।’

তিনি আরও বলেন, চেঙ্গীমুখে একটি বোটে ২০টি কুকুর ছিল। আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানানোর পর জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সেখানে যান। তার উপস্থিতিতে আমরা কুকুরগুলো উদ্ধার করে জেলা শহরের রাজবাড়ী, কলেজগেট, কল্যাণপুর ও ভেদভেদি এলাকায় ছেড়ে দিই। চার-পাঁচ মাস আগেও তারা রাঙ্গামাটি শহর থেকে সাতটি কুকুর ধরেছিল। তখনো স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তারা কুকুরগুলো ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরও তারা আবার কুকুর ধরতে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েকদিন ধরেই কুকুর ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছবি: সারাবাংলা

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেলী রুদ্র বলেন, ‘শহর থেকে কুকুর ধরে রিজার্ভবাজার এলাকায় নিজে যাওয়া হয়েছিল। আমরা সেখানে গিয়ে কুকুরগুলো উদ্ধার করে ছেড়ে দিয়েছি।’ কারা কুকুরগুলো শিকার করেছে— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে জানতে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের অফিশিয়াল মোবাইল নম্বরে কল দিলে সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত জেলার বরকল উপজেলা হয়ে ভারতের মিজোরাম থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে রাঙ্গামাটি শহরে কুকুর ধরতে আসেন শিকারিরা। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রাঙ্গামাটি শহর থেকে বেশ কিছু কুকুর ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী বাজার, বাবু ছড়া ও থানা বাজার থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যান মিজোরাম থেকে আসা শিকারিরা।

প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এ মালিকবিহীন প্রাণিনিধন বা অপসারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, (ক) এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ব্যতীত মালিকবিহীন কোনো প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা যাবে না; (খ) কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করলে তা আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন