বিজ্ঞাপন

‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক বিএনপির হিপোক্রেসি’

March 23, 2024 | 4:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক ‘হিপোক্রেসি’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেলায় সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই ভারত থেকে আসে। ভারতের সঙ্গে আমাদের হাজার-হাজার কিলোমিটার সীমান্ত আছে। কিছু সীমান্ত বাণিজ্যও হয় বৈধভাবে।’

‘আমরা মনে করি, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা এবং দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। দেশে যাতে জনগণের ভোগান্তি হয় এবং পণ্যের মূল্য বাড়ে সেটাই তাদের লক্ষ্য।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে আসা পেয়াঁজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরবেন, আপনাদের নেত্রী যেগুলো মাঠে গলা ফাটায়, তারাও আবার ভারতীয় শাড়ি পরবেন, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে আপনারা ইফতার করবেন-সেহেরি খাবেন, কয়েকদিন আগে ওনাদের এক নেতা আবার ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, তো ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবার আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবেন – এগুলো হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছু নয়।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে সাড়া দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিজভী সাহেব না কি নিজের পরনের শালটিও জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আসলে শালটি তিনি ভারত থেকে কিনেছিলেন না কি বঙ্গবাজার থেকে কিনেছিলেন, আমি জানি না।’

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতপন্থী একদল ইউটিউবার অনলাইনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন শুরু করেন। সেই ক্যাম্পেইনে সাড়া দেয়ার কথা উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গত ২১ মার্চ ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের চাদর ছুড়ে ফেলেন। তার সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদর আগুনে পোড়ান।

বিজ্ঞাপন

‘নাবিক-জাহাজ অক্ষত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে’

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মি করা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘গতবার যখন এমভি জাহান মণি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদের মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখন যতদ্রুত সম্ভব তাদের মুক্ত করার চেষ্টা আমরা করছি। সেখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে। কয়লা দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না, যাতে নাবিকদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়।’

‘যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, তারা ইতোমধ্যে মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছে। নাবিকদের পরিবারও অনেকটা আশ্বস্ত। আশা করছি, আমরা সহসা নাবিকদেরকে উদ্ধার করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ দখলে নেয়। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন।

জিম্মি জাহাজটিকে এখন সোমালিয়ার নুগাল প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা শহর গদবজিরানের কাছাকাছি উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে জলদস্যুরা। জিম্মি করার নয়দিন পর গত ২০ মার্চ তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় জাহাজ মালিকের সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ হয়।

উন্নয়ন সমন্বয় সভায় যা আলোচনা হয়েছে:

উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্প, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণের অগ্রগতি, পাহাড়কাটা, যানজটসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হতে আরো আড়াই বছর বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে জনগণের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একইসঙ্গে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর যাতে নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, সেটির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।’

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সভায় জানিয়েছে, বে-টার্মিনালের জন্য ইতোমধ্যে ৫০০ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে হস্তান্তর করেছেন। আরো ৩০০ একরের বেশি জায়গা তারা পাবে, এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। ইতোমধ্যেই ডিপি ওর্য়াল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর এমওইউ স্বাক্ষর করেছে।’

‘এখানে তিনটি ভাগে কাজ হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও সেখানে যুক্ত হচ্ছে। এটা একটি বড় অগ্রগতি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বে-টার্মিনাল হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরো বড় একটি নতুন বন্দর হবে, যেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্পদ হবে। একইসঙ্গে বে-টার্মিনাল দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে পণ্য সরবরাহ করতে পারব।’

তিন মাস পরপর সমন্বয় সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম ও এম এ মোতালেব, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়সহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন