বিজ্ঞাপন

‘নদভী জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ করেননি’

March 24, 2024 | 5:32 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীর অভিযোগের জবাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাংসদ এম এ মোতালেব। তিনি বলেছেন, একদিনও আওয়ামী লীগ না করে ক্ষমতার গাড়িতে চড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসে এমপি হয়েছিলেন নদভী। ক্ষমতায় থাকতে জামায়াতকে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা তিনিই দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য এম এম মোতালেব এসব কথা বলেন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীকে হারিয়ে জয়ী হন সাতকানিয়া উপজেলার সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব। জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নদভী তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুই বার তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরাজয়ের আড়াই মাস পর গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মোতালেবের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনে সাবেক সংসদ সদস্য নদভী বলেন, ‘মোতালেব স্বতন্ত্র না কি জামায়াতের এমপি বোঝা যাচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এর জবাবে মোতালেব বলেন, ‘নদভী সাহেবের সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি যত্রতত্র জামায়াতের ভূত দেখছেন। এটা দেখা স্বাভাবিক। কারণ, তার অতীত বর্তমানের সঙ্গে জামায়াতের ছায়া প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তার হাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রামের আর কোনো এমপি ছিল না যার হাতে এত বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন তিনি তা অস্বীকার করতে চান।’

নদভী জামায়াত জুজর ভীতি ছড়াচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি এখন হরতাল অবরোধ করার মতো ক্ষমতা রাখে না। আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তারা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকায় কোণঠাসা। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী জামায়াতের জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা তো তিনিই ক্ষমতায় থাকতে করেছেন। আর এখন মায়াকান্না করছেন।’

‘আমার পরিবারের সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনা মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং, পরিবার তুলে বিদ্রুপ করে মূলত তিনি আমার মানহানির চেষ্টা করেছেন। আমি তার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।’

বিজ্ঞাপন

‘নদভী একদিনও আওয়ামী লীগ করেননি’ দাবি করে মোতালেব বলেন, ‘জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ না করে দুই বার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক ও ভাগিনা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে। বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে। অথচ এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে। নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা ও নিষ্পাপ প্রমাণ করতে চান।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবদ সম্মেলনে কাল্পনিক, অবাস্তব বক্তব্য রেখে নিজেই হাসির পাত্র হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নদভী সাহেবের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া পড়লে বুঝতে পারবেন তিনি কতটা অগ্রহণযোগ্য। একদিনও আওয়ামী লীগ না করে ক্ষমতার গাড়িতে চড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি যে রাজনীতি করেছেন, তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। নিজে খেয়ে আওয়ামী লীগের নামে দুর্নাম রেখে গেছেন। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছেন, আলেম ওলামাদের নির্যাতন করেছেন।’

সংসদ সদস্য থাকার সময় নদভীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি যেসব সন্ত্রাসী, চোর-বাটপারদের ইতোমধ্যে দমন করেছি, তাদের পক্ষ নিয়েই নদভী ওই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অসংলগ্ন প্রলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে চেয়েছেন। নদভীর কাছ থেকে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে এবং দুর্নীতির বিচার চেয়ে বিশাল মানববন্ধন হয়েছে। তারা সবাই ছিল উনার পাড়া-প্রতিবেশি। যারা উনার হাতে নির্যাতিত এবং ভাইপো সেলিম চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিল।’

এম এ মোতালেব, ‘তিনি ছয় খুনের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া দুই থানার ওসি এ বক্তব্য প্রত্যাখান করেছেন। নদভী সাহেব এওচিয়া ইউনিয়নের শনখোলা গ্রামে একজনের মালিকাধীন একটি ব্রিকফিল্ড অন্যজনের নামে লিখে দিয়ে রাতারাতি ইট লুট করেছিলেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্প এমনভাবে বণ্টন করেছিলেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন যাতে তার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার ক্ষমতার দাপটের সামনে পিআইও ও ইউএনও ছিল অসহায়। সরকারি প্রকল্প নয়-ছয় করে, ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

বিজ্ঞাপন

যারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ বিরোধী- নদভীর এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই নৌকার লোক। সবাই আওয়ামী লীগ করে। উনার কথা সম্পূর্ণ ভুল। উনারা ব্যক্তির বিরুদ্ধে গিয়েছেন, দলের বিরুদ্ধে নয়।’

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘পত্রিকায় সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য পড়ে মনে হয়েছে এসব কথা উম্মাদ প্রকৃতির লোকেরই বলা সম্ভব। তিনি দাবি করেছেন, আমরা ঢাকার কোনো বিশেষ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সম্মতি নিয়েই মোতালেব সাহেব এমপি প্রার্থী হয়েছিলেন। তাকে জেতাতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অথচ উনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না। ঢাকায় উনার গডফাদার থাকতে পারে, আমাদের না। তিনি তার কথায় চলেন।’

মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি দলের স্বার্থে নদভীর প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমার কাঁধের ওপর ভর করে তিনি নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন। উনাকে জয় বাংলা স্লোগান শিখিয়েছিলাম আমিই। কিন্তু তার একের পর এক লুটপাট ও দূর্নীতি আমাকে তার সঙ্গে থাকতে দেয়নি।’

নদভীর ‘পিইএচডি’র সত্যতা যাচাইয়ের দাবি

সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর পিইএচডি ডিগ্রি সঠিক কি না, সেটা যাচাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে দাবি জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে ।

আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যাচার করে নদভী প্রফেসর হয়েছিলেন। উনার ডিগ্রির যে কাগজ সেটার তথ্য নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লক্ষ্ণৌতে খোঁজ নিলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। এ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয়ে ১৪ হন পিইএচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যেখানে তার নাম নেই। তার সার্টিফিকেটে তিনি ২০১১ সালে ভর্তির কথা উল্লেখ করেছেন এবং ২০১২ সালেই তিনি ডিগ্রি অর্জন করেন। এটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক বছরে কীভাবে পিইএচডি ডিগ্রি অর্জন করা যায়- সেটাই প্রশ্ন।’

সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব বলেন, ‘উনার পিএইচডি ভুয়া কিনা তা ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। নদভী সাহেব এ বিষয়ে ইউসিজির একটি প্রত্যয়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে বিষয়টি সুরাহা করতে পারেন। তিনি তা না করে জনগণের মনে জেগে থাকা প্রশ্নকে থামিয়ে দিতে রাগ দেখাচ্ছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু, সাতকানিয়া উপজেলার সহসভাপতি আহমদ সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী ও প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, জসিম উদ্দীন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা বেগম ও দক্ষিণ জেলার দফতর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন