বিজ্ঞাপন

‘বিদেশিদের অভিনন্দন মানেই অবৈধ সরকারকে গ্রহণ করা নয়’

March 26, 2024 | 9:12 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিদেশিরা আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানালেও তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে গ্রহণ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশিদের অভিনন্দন জানানোর অর্থ মানে এই নয় যে, তারা নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে বলেছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থাকবে। সেটার সঙ্গে অবৈধ সরকারকে গ্রহণ করার বিষয় এক নয়।’

দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে ইফতার মাহফিল হবে কি হবে না সেটা এখন প্রশ্ন করা হচ্ছে। কোন দেশে আছি চিন্তা করেন। ইফতার মাহফিলের কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ দু’বেলা খেতে পারছে না। ইফতার মাহফিলে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। এ জন্য আমি বলেছি ইফতার মাহফিল বেশি বেশি করতে হবে। প্রতিদিন করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ইফতার মাহফিল নিয়ে প্রশ্ন উঠবে সেটা মানুষ গ্রহণ করবে না। গরুর মাংস সরবরাহ করা যাবে না বলেও অনেক জায়গায় নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। চিন্তা করে দেখেন বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার সব তো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আমার খাওয়া দাওয়ার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমি গরুর মাংস খাব না কি ইফতার খাব, সেটাও তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কেন?’

১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের লোকেরা ভারত পালিয়ে গিয়েছিল জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ধর্মীয় অনুভূতি, খাওয়া দাওয়ার মধ্যে হাত দিতে গেলে অসুবিধা আছে। বাংলাদেশের মানুষ এটা গ্রহণ করবে না। আজ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, যার ডাকে বাংলাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যার যা ছিল হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজ যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তাদের বেশিরভাগ লোক ভারতে পালিয়ে গেছিল সেদিন। যুদ্ধক্ষেত্রে ছিল বাংলাদেশের সৈনিক, যুবক ও মুক্তিকামী যোদ্ধারা। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শুধু শেষ করেনি। সম্মুখ সারিতে যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তরান্বিত করেছে। আজ কেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা হয়েছিল? মূল বিষয় ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে হানাদার বাহিনী এ দেশকে দখল করেছিল। ফলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল সেদিন। স্বাধীনতার এত বছর পরে সব অধিকার আজ ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছে। গত তিন থেকে চারটি নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি।’

৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘৭ জানুয়ারি তো কোনো নির্বাচন হয়নি, হয়েছে গণভোট। গণভোট হয়েছে নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যাবে কি যাবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে ডাক দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ যাতে নির্বাচনে না যায়। সেদিন বাংলাদেশের ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ নির্বাচনে না গিয়ে গণভোটে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করেছে। সুতরাং এ গণভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ফের তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে চায়। তারা তাদের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ফিরে পেতে চায়। গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। গণমাধ্যমের অধিকার ফিরে পেতে চায়। ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ সেদিন জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাঁচ শতাংশেরও কম মানুষ শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি হালুয়া রুটির জন্য আন্দোলন করছে না জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘লোকজন যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনাদের আন্দোলন কি আবার নতুন করে শুরু হবে? নতুনভাবে আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছু নেই। ওই যে ৯৫ শতাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি সেটাও আন্দোলনের অংশ। ওই ৯৫ শতাংশ মানুষ আমাদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সবাই বিএনপির চলমান আন্দোলনে এখনও আছে, সামনেও থাকবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত।’

সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা এখানে আছেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আগামী দিনে গণমাধ্যমের কী অবস্থা হবে। সেটা তারা অনুধাবন করে উনারাও চাচ্ছেন এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হোক। তারাও এ সরকারের বিদায় চায়। বাংলাদেশে আজ একটি ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আমি অন্তত স্বাধীনতার পরে দেখিনি। যে ঐক্যমত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, কৃষক ও শ্রমিকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সে গণঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা এ সরকারের পতন ঘটাব।’

নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুনুর রশীদ, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন