বিজ্ঞাপন

দূষণে প্রতি বছর পৌনে ৩ লাখ অকালমৃত্যু দেশে: বিশ্বব্যাংক

March 28, 2024 | 5:31 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নানা ধরনের দূষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ঘরে ও ঘরের বাইরের বায়ূদূষণ স্বাস্থ্যর ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাটি আরও বলছে, সীসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিক বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। এসব দূষণে পরিবেশগত দিক থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস এ সেমিনার আয়োজন করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সীসা দূষণের কারণে বছরে দুই লাখ ৭২ হাজার অকালমৃত্যু ঘটছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে, যা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করেছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম শিশু, বয়স্ক ও নারীদের।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আনা লুইসা গোমেন লিমা বক্তব্য দেন।

রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ছবি: সারাবাংলা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নদী হয়ে প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্য ভেসে আসছে। এ নিয়েও কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনসহ অনেক ক্ষেত্রে কোনো অবদান না রাখলেও ক্ষতির বোঝা ঘাড়ে নিতে হচ্ছে বাধ্য হয়েই। সেই সঙ্গে জলবায়ু তহিলের যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে তার ৪০ শতাংশই হচ্ছে ঋণ। এটা কাম্য হতে পারে না। আমাদের দেশের উন্নয়নে সবুজ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।

আবদৌলায়ে সেক আরও বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ূদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে দেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ও জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সীসা দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর এক লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্প কারখানা থেকে দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই রিপোর্টের সহকারী প্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পালটে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজ অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ানো দূষণ কমাতে পারে এবং এর ফলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে পারে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন