বিজ্ঞাপন

মস্কো হামলার আগে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল ইরান

April 1, 2024 | 7:35 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গত মাসে মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে সন্ত্রাসী হামলার আগে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল ইরান। মস্কোকে বলা হয়েছিল, রুশ ভূখণ্ডে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে জানাশুনা আছে এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বিজ্ঞাপন

গত ২২ মার্চ কনসার্ট হলে ওই সন্ত্রাসী হামলা রাশিয়ায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক একটি হামলা। এদিন হলভর্তি মানুষের উপর স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় চারজন বন্দুকধারী। তারা হলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে।

জঙ্গী হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, তারা সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে রুশ গোয়েন্দাদের সতর্ক করা করেছিল। কিন্তু মস্কো ওয়াশিংটনের এমন সতর্কবার্তাকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখেছে। ফলে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যকে আমলে নেওয়া হয়নি।

কিন্তু ইরানের সঙ্গে গভীর কূটনৈতিক সম্পর্ক রাশিয়ার। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা মস্কো এবং তেহরান উভয়ই নিজেদের মধ্যে সামরিক ও অন্যান্য সহযোগিতার মাত্রা বাড়িয়েছে। তেহরানের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্য খারিজ করা মস্কোর জন্য কঠিন। ফলে তেহরানের কাছ থেকে গোয়েন্দা সতর্কবার্তা পেয়েও হামলা ঠেকাতে না পারায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়ায় হামলার কয়েকদিন আগে তেহরান একটি সম্ভাব্য বড় সন্ত্রাসী হামলার তথ্য মস্কোকে জানিয়েছিল। গত জানুয়ারিতে ইরানে বোমা হামলায় জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পেয়েছিল ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা।

গত ৩ জানুয়ারি ইরানের কেরমান শহরে বোমা হামলা হয়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ওই সন্ত্রাসী হামলা ঘটিয়েছিল ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান-ভিত্তিক শাখা আইএসআইএস-খোরাসান (আইএসআইএস-কে)। হামলায় জড়িত ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে ইরানের নিরাপত্তা সংস্থা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আইএসআইএস-কের একজন আঞ্চলিক কামান্ডারও রয়েছেন।

ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা ছিল ৩ জানুয়ারির ঘটনা। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইরানে ৩ জানুয়ারি সন্ত্রাসী হামলা ও মস্কোর উপকণ্ঠে ২২ জানুয়ারির হামলার জন্য আইএসআইএস-কে দায়ী। আইএসআইএস-কে এই দুই ঘটনারই দায় স্বীকার করেছে।

বিজ্ঞাপন

একসময় ইরাক এবং সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করেছিল আইএস। মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল জঙ্গী গোষ্ঠীটি। বিভিন্ন দেশের যৌথ অভিযানে ২০১৭ সালে ওই অঞ্চল আইএসের দখলমুক্ত হয়।

আইএসের সবচেয়ে ভয়ংকর শাখাগুলোর একটি আইএসআইএস-খোরাসান (আইএসআইএস-কে) সংক্ষেপে আইএসআইএস-কে। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে গ্রুপটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের প্রোফাইল ভারী করেছে।

ইরান, তুর্কমেনিস্তান এবং আফগানিস্তানের কিছু অংশের আদি নাম খোরাসান। এই নাম নিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে আবির্ভূত হয় আইএসআইএস-খোরাসান বা আইএসআইএস-কে। প্রতিষ্ঠার পরই চরম বর্বরতার জন্য কুখ্যাতি লাভ করে জঙ্গী গোষ্ঠীটি।

সংবেদনশীল বিষয় হওয়ার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, আসন্ন হামলা সম্পর্কে তেহরান মস্কোকে যে তথ্য দিয়েছে, তাতে আইএসের সময় এবং সঠিক লক্ষ্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট বিবরণের ঘাটতি ছিল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘তাদের (আইএসআইএস-কে-এর সদস্যদের) রাশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একজন সন্ত্রাসী (ইরানে গ্রেফতার) বলেছে, গ্রুপের কিছু সদস্য ইতোমধ্যেই রাশিয়ায় রয়েছে।’

রয়টার্সের তৃতীয় সূত্র হলেন একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু ইরান বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে, তাই ইরানি কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মস্কোকে সতর্ক করে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।’

আরও পড়ুন- কনসার্টে হামলায় আইএসের দায় নিয়ে সন্দেহ রাশিয়ার

রয়টার্সের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার (১ এপ্রিল) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

রাশিয়ায় হামলার বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা আইএসআইএস-কে জঙ্গিদের মধ্যে হওয়া বিভিন্ন কথাবার্তায় আড়িপেতে বুঝতে পেরেছিল রাশিয়ায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

তবে মার্কিন দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে রাশিয়া বলেছে, বরং তারা বিশ্বাস করে— ইউক্রেন হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে রাশিয়া এ হামলায় ইউক্রেনের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি। ইউক্রেন দৃঢ়ভাবে রাশিয়ার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সন্ত্রাসবাদে তাজিক নাগরিক

ইরানের কেরমান শহর ও রাশিয়ার মস্কোর উপকণ্ঠে হওয়া উভয় হামলার সঙ্গে জড়িতরা তাজিকিস্তানের নাগরিক। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র তাজিকিস্তানের দরিদ্রপীড়িত এলাকা থেকে আইএসআইএস-কে আগ্রাসীভাবে নিয়োগ বাড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, ইরান তাজিকিস্তানের সঙ্গে তার নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছে। তাজিকিস্তানের একটি কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তেহরান সম্প্রতি দুশানবের সঙ্গে জাতিগত সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছে।

আরও পড়ুন- মস্কোতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে তাজিকিস্তানে আটক ৯

শিয়াদের প্রতি মারাত্মক ঘৃণা পোষণ করে থাকে আইএস। কট্টরপন্থী সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠী শিয়াদের ধর্মত্যাগী বলে মনে করে থাকে। শিয়ারা ইরানের প্রভাবশালী সম্প্রদায়। ইরান ও আফগানিস্তানে আইএস-এর সহযোগীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু শিয়ারা।

২০২২ সালে ইসলামিক স্টেট ইরানের একটি শিয়া মাজারে মারাত্মক হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ওই হামলায় ১৩ জন নিহত হয়। তেহরান হামলাকারীকে তাজিক নাগরিক বলে শনাক্ত করেছে। ইরানে এর আগেও ছোট বড় হামলা চালিয়েছে আইএস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০১৭ সালে ইরানে ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুলুল্লাহ খোমেনির সমাধিতে জোড়া বোমা হামলা।

-রয়টার্সের প্রতিবেদন

আরও পড়ুন

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন